ঢাকা
                           ২১ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২
মা,
কেমন আছো তুমি?
কতদিন হল তোমায় দেখিনা?
ভেবেছিলাম এবার ছুটিতে বাড়ি আসব।
কিন্তু মা কি যে করি?পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠি
আমাদের পূর্বাংশের,সমগ্র বাঙালি জনগোষ্ঠির মুখে তাদের দেশীয় উর্দুভাষা
জোর করে চাপিয়ে দিতে চাইছে।
ওরা আইন জারি করেছে
উর্দুই হবে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা।


ওরা তাদের রাজকীয় ক্ষমতার সুতীক্ষ্ণ চাঁকুর ধারে,বাঙালির কণ্ঠনালী কেঁটে দিয়ে তাদের মুখ চিরতরে বন্ধ করে দিতে চায়?
যদি তাই হয় তাহলে তোমাকেও উর্দুতে কথা বলতে হবে?কিন্তু আমার জন্মের পর থেকে
তোমার মুখে আমি বাঙলাভাষা শুনে এসেছি,তাই বাঙলা আমার মাতৃভাষা।


মাতৃভাষা বাঙলা ছেড়ে কোন দুঃখে
আমি উর্দুভাষায় কথা বলবো?
আমরা এটা মেনে নিতে পারছিনা,
যে বাঙলা ছাড়া বিজাতীয় উর্দুভাষায়
আমাদের দৈনন্দিন রাষ্ট্রীয় জীবন চলবে?
তাই আমরা আন্দোলন শুরু করেছি
এদেশের সংখ্যাগুরু জনগনের
মাতৃভাষা বাঙলাকে এদেশের রাষ্ট্রভাষা করার জন্য।


মা ইতিপুর্বে তুমি আমায় চিঠিতে লিখেছিলে
খুঁকীর বিয়ের প্রস্তাব এসেছে।
সম্বন্ধ পাকা করতে আমি যেন বাড়ি আসি।
অথচ আমি যে শীঘ্রই আসতে পারছিনা?
তোমরাই কথাবার্তা বলে সম্বন্ধ ঠিক করো।
এবং যদি সম্বন্ধ হয়ে যায়,তাহলে বিয়ের তারিখটা একটু বিলম্বে ধার্য্য করিও!
আমার একান্ত ইচ্ছা আমার একমাত্র আদরের ভগ্নিটির বিবাহে,
আমার বন্ধুদের দাওয়াত করে নিয়ে যাই?
আমি তাদেরকে আগাম বলে রেখেছি
আমার বোনের বিয়েতে তোদের সবাইকে যেতে হবে?
তারা সকলেই যেতে সানন্দ সন্মতি দিয়েছে।


কিন্তু এখনতো মা আমরা সবাই মাতৃভাষা বাঙলাকে
আমাদের রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দানের দাবীতে,আন্দোলনে ব্যস্ত।
কেউ আসতে পারবেনা,তাই বলছি,দেখো মা কি করা যায়? না হলে……? আচ্ছা যাক।
ছোট কি রীতিমত স্কুলে যায়? খেয়াল রেখো।
আমার জন্য চিন্তা করোনা?
দোয়া করো মা আমরা যেনো সফল হই।
ইতি
তোমার আদরের খোকা।