এইমাত্র মা আমায় খাইয়ে দিয়ে গেলো
মা, আমার মা......
একমাত্র এই মানুষটাই তো আমার বন্ধু ,
আমার হাসি-কান্না , আনন্দ-বেদনা , সুখ-দুঃখ
আমার কোন ভঙ্গিমায় আনন্দ জেগে ওঠে
আর কোন বিভঙ্গে দুঃখ প্রকাশ পায়
তা একমাত্র আমার মা-ই বোঝে !
হ্যাঁ , বিভঙ্গ......আমার সব কিছু প্রকাশিত হয় এই বিভঙ্গের দ্বারা
আমি যে কথা বলতে পারিনা !
কথা বলতে গেলেই আমার মুখ দিয়ে কিছু অর্থহীন গোঙানি আর অনেক লালা বের হয় !
হ্যাঁ, তোমরা ঠিকই বুঝেছো !
আমি এক জড়বুদ্ধিসম্পন্ন প্রতিবন্ধী !
আমি ঠিকমতো হাঁটতেও পারিনা !
কিন্তু ভগবানের কি অপরিসীম দয়া !
উনি আমার হাত দুটো ঠিকঠাক বানিয়েছেন......
আমার শরীরের সব শক্তি আমার দুই হাতে ভর করে
যখন মা এর হাত চেপে ধরি মা হাত ছাড়াতে পারে না......
আমার মনের সব মুক্তিও আমার দুই হাতে !
মাঝে মাঝে রঙ পেন্সিল নিয়ে আমি সাদা কাগজে আঁকি বুকি কাটি আপন খেয়ালে ,
যে দ্যাখে সেই বলে, “ কি অদ্ভুত ! এই ছবি ও এঁকেছে !!”
সত্যিই তো, আমার মতো জড়বুদ্ধিসপন্ন মেয়ের কি ছবি আঁকা সাজে ?
আমার বোন, আমার থেকে মাত্র ২ মিনিটের ছোট ... কি সুন্দর নাচ করে !
কতো জায়গায় নাচের অনুষ্ঠান করে , সবাই ওর কতো প্রশংসা করে !
আমার মা দেখতে যেতে পারে না......আমাকে কার কাছে রেখে যাবে ?
তাই ওর সব অনুষ্ঠানের recording দেখি মা আর আমি
দেখতে দেখতে আনন্দে মা এর চোখে জল এসে যায়......
আমাকে জড়িয়ে ধরে মা কেঁদে ফেলে
ঠিক বুঝি না, কান্নাটা কিসের – বোনের জন্য আনন্দে না আমার জন্য দুঃখে !
ইদানীং বাড়িতে একটা সুন্দর ছেলে যাওয়া আসা করছে – বোনের হবু বর !
কেউ আমাকে কিছু বলেনি...তবু আমি বুঝি......
জড়বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হলেও আমিও তো একটা মেয়ে......আমার শরীরেও যৌবন এসেছে !
হে ভগবান, কেন এত নিষ্ঠুর তুমি !!
কিছুই যখন দিলে না, তখন এক যুবতী নারীর মন কেন দিলে আমায় ??
সেই মনে যে বসন্তের কোকিল কুহু কুহু স্বরে রঙ্গীন স্বপ্ন দেখায় !
কিন্তু এ বসন্তে তো ফুল ফুটবে না......
এ যে রোদনভরা বসন্ত !!!