দেখেছি সেদিন মায়ের কতক চুল সাদা;
বাবার চলতে ফিরতে বাঁধছে খুব, হাঁপিয়ে ওঠেন;
মা অনেকটা আনমনে তাকিয়ে থাকেন, কী ভাবেন?
রেললাইন সমান্তরাল, সময় বইছে ঝিক ঝিক...
ধার লাগে বুকে, চোখের জল গাল গড়ায়;
আমার চন্দ্র-সূর্য হারায়, বেলা ফুরায়ে যায়!
কথা ছিল অনেক বড় হব, খুব বড় হব দেখো!
ভূমি ছেড়ে আকাশ ছুঁয়ে যাব, হাতে সুখ ধরা দেবে;
জীর্ণ জীবন ভগ্ন স্বপন আবার পারবে না থামাতে আমায়।
কথা দিলাম মাগো, প্রথম বেতন পেলেই
তোমার জন্য আনবো জামদানি, আর বাবার জন্য পাঞ্জাবী;
চাকরিটা আমি পেয়ে যাব সত্যিই, দুশ্চিন্তার অবসান!
ঠিক এক বেতনে মাস নেব চালিয়ে, সুখের আবাস!
রক্তে অলিখিত চুক্তি, প্রত্যয় অস্থিমজ্জায় নিবিষ্ট;
সাক্ষী আমার বাবার ঘামে ভেজা পিঠ,
সাক্ষী আমার মায়ের চোখ ভেজা জল।
তবুও এখানে স্বপ্ন ভাঙ্গে, সাধদের বিসর্জন অহরহ;
বজ্র ভেঙ্গে ঝড় ওঠে মরণ ছাড়িয়ে অন্তহীন যন্ত্রণায়।
যেমন ভাইয়ার নতমুখ, যেমন আপার বিয়েটা...
আমি সেই অবর্ণনীয় দিনগুলির কসম খেলাম!
আমি আমার পূর্বজদের কথা বলছি—
তারা পাহাড়ের মতো দৃঢ়, স্বপ্ন আকাশের মতো বড়;
শিখেছি ভাই-বোনের কাছে, জেনেছি মাতা-পিতার থেকে;
আমি আমার পরিবারের কথা ভাবছি।
আমি বড্ড ক্লান্ত, ঘুমিয়ে পড়বো আমি
এই ব্যস্ত পৃথিবীর কোনো এক বিষণ্ণতা জড়ো ঘরে।
কিন্তু আরেকবার লড়বো ভালোবাসার জন্য—কথা দেয়া;
বাঁচবো আশায়—কিছু প্রশান্তির ভালোবাসার জন্য।
মরণ আমায় ভাবায় না, নিয়তি আমায় কাঁদায় না;
মরুর বুকে নিরস পাথর মতো বেঁচেছি,
আমি আমার অগ্রজদের মতো হয়েছি,
আমরা হার মানি না, আমরা হাল ছাড়ি না;
আমরাইতো অপরাজেয় দ্বিতীয় প্রজন্ম!


“চিরস্থায়ী যুদ্ধ বা মধ্যবিত্তের জীবনযুদ্ধ।”