নস্ট রাজনীতির ভ্রষ্ট পথ হতে মুক্তি পেতে
স্বপ্নগুলোর বুকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে,
অনেক চড়াই উতরাই পাড়ি দিয়ে
যান্ত্রিক জীবনের সাম্পান আমার ভীড় জমিয়েছে আজ
সভ্যতার নগরী টেমস নদীর তীরে।


হেলেদুলে চলমান সেই সাম্পান আমি,
দীর্ঘশ্বাসের ভীড়ে সেদিন বিমূর্ত সন্ধ্যায়
আরো বিধ্বস্ত রুপে নিজেকে খুঁজে পাই,
জীবনের বিবর্ণ অধ্যায় ইনামিনাডিকা যখন সামনে এসে দাঁড়ায়!
ধুরুধুরু কম্পনে প্রচন্ড শীতের মাঝেও ঘামে ভিজতে থাকে হাত-পা,
যখন সে খুব কাছে এসে শুধায়- "বেশ তো আছোই দেখছি"!?
নির্বাক দৃষ্টি  বিলাতি বাস স্টপের বাঁকে পনেরোটি  বসন্ত যেনো ফিরে পায়,
স্তম্ভিত হয়ে তাই দাঁড়িয়েই থাকি প্রশ্নমাখা কথার কোন জবাব না দিয়ে!
"বিশ্বাসঘাতকের একটা পাওনা ছিলো আমার কাছে" -
এই বলে ধপাস করে একটা চড় আমার গালে কষে দিয়ে
যখন সে চলে যেতে উদ্যত হলো, ঠিক তখনই ঝাপটে ধরলাম তার নরম হাত;
গরম লোনাজলের প্রবাহিত ছন্দে বলে উঠলাম,
"এটাই আমার প্রাপ্য, আমার কি করার ছিলো বলো;
ক্ষমতাধরদের দুঃশাসনের কবলে পালিয়ে যখন বেড়াচ্ছি,
যখন অর্ধশতাধিক মিথ্যে মামলা ঝুলছে গলায়,
ঠিক তখনই তুমি চিঠি পাঠালে, তোমার অনিচ্ছায় বিয়ে ঠিক করা হয়েছে;
আমি তখন কিংকর্তব্যবিমূঢ় …!
চিঠির জবাব দেবার পূর্বেই পুলিশের গুলিতে ঠাঁই পাই হাসপাতালে,
অতঃপর অনেকদিন কাটিয়েছি কারাগারে, তোমার প্রেমকে রক্তাক্ত করে দিয়ে।”…

"হাত ছাড়ো - তোমার এসব অজুহাত শোনার সময় নেই আমার,
বেশ তো আছো বলেই মনে হচ্ছে,
ঘর জামাই হয়ে এসেছো নাকি সাত সাগর আর তেরো নদী সাঁতরায়ে?”-
অনেকটা খোঁচা মারার ভঙ্গিমায় সে থামাতে চাইলো পুরনো কথা।
নিশ্চুপ থেকে কিছুক্ষন হাত ছেড়ে তার বললাম,
"এই তো বেশই আছি কুমারত্ব লালন করে,
তা তোমার কি খবর? ছেলে-মেয়ে কয়জন? স্বামী কি করছেন এখন?"
"বিয়ের পাঁচ বছরের মাথায় হাজব্যান্ড হাইজ্যাক হয়ে গেছে
সাদা এক রমণীর কোলে, আর সেই থেকে আছি বেশ
চৌদ্দ বছরের একমাত্র মেয়েকে আগলে রেখে বুকে; টিয়া ই  এখন আমার সব" –
মেঘলা আকাশের বুকে চাপা ক্ষোভ উড়িয়ে দিয়ে
ছোট্ট একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়তে ছাড়তে কথাগুলো বলতে থাকে
বিশ্ববিদ্যালয়ের আমার সেই প্রেমবিদ্যার শিক্ষিকা ইনামিনাডিকা।


“তার মানে তুমিও একা আর আমিও একা,
চলো না তবে আঁকি জীবনের নতুন এক রেখা” –
অপ্রাপ্তির ভীড়ে সবচে’ বড় প্রাপ্তির আশায় হাত বাড়ালাম তার দিকে।
মাথা নীচু করে সে বললো,“আমি একা নই,এখন আমি টিয়া’র মা”!
“কোথায় যেনো পড়েছিলাম - ডারউইনের বিবর্তনবাদের সর্বশেষ মতবাদ নাকি(?),
সব ব্যর্থ প্রেমিকই তার প্রেমিকার বিয়ের পাঁচ থেকে ছয় বছরের মাথায়
মামা অথবা চাচা রুপে বিবর্তিত হয়ে যায়!
আমি সেটা মিথ্যে করে দিয়ে টিয়া’র বাবা হতে চাই;সুযোগটা কি দেবে আমায়?”
চোখের ভেতর লুকিয়ে থাকা তার স্বপ্ন আমার কানে ঢেউ তুলে দিয়ে বললো,
“দিতে পারি তুমি যদি ফিরিয়ে নিতো পারো আমায়,আমাদের সেই সোনার বাংলায়’’-
অসহায় হাত তার কোমল হাত ধরে বিপন্ন সুরে বুঝাতে লাগলাম,
“তা কি করে সম্ভব এখন? সোনার বাংলা চলে গেছে ওদের দখলে
যারা লুটেপুটে খাচ্ছে দেশ, মিথ্যা অপবাদ দিয়ে পড়াচ্ছে মোদের পরবাসি ড্রেস!”
এমন সময় রাস্তার ওপাশের ফিস এন্ড চিপসের দোকানের সম্মুখ হতে
একটা ডাক এলো- “মাম,লেটস গো ...”।
প্রেমবিদ্যার শিক্ষিকা আমার হাতে একটা ভিজিটিং কার্ড দিতে দিতে বললো,
“সোনার বাংলা ফিরিয়ে আনতে যদি যেতে চাও তবে আমায় ফোন দিও,
টিয়া’কে আমি বলে রাখবো, কেউ যদি ফোন করে জিজ্ঞেস করে –
‘ইনামিনাডিকা কোথায়?’
সে যেনো জবাব দেয়, বাবার সাথে সোনার বাংলায় ফিরে যাবার আশায়”…


                            মো ওয়াছি উদ্দিন তালুকদার (রায়হান)
                            ২২শে জানুয়ারি ২০১৫।