আমি মানুষের কবি;
ভাঙা নৌকার কঞ্চিতে আটকে থাকা নিঃশ্বাসের মতো তলদেশে লুকানো বেদনার গহ্বরে ভাসি অবিরাম।

আমি মানুষের কবি;
ধোঁয়া-ধরা উনুনের শিখায় ফুটে ওঠা ঝাঁজালো মরিচের অশ্রুজল, ক্ষুধার আঁচে পুড়ে যাওয়া ভাঙা হৃদয়।

আমি মানুষের কবি;
রোদ্দুরের কড়া উনুন নই, বরং ঘোলা গঙ্গার চোরা স্রোত, যা জাদুঘরের তালা নয়, চোরাবাজারের হাহাকার ভেঙে দেয়।

আমি মানুষের কবি;
বাঁশের সুর দিয়ে সাজানো শব্দ, যা হাওয়া ছিঁড়ে বস্তিবাসীর গলায় বাঁধা লোনাজল কাশির মতো কাঁপে।

আমি মানুষের কবি;
গমগমে ইদগাহের খালি থালা, কবরের ফাঁকে ফুঁড়ে ওঠা এক মুঠো ঘাস, যা জানে, কফিনের ভেতরেও মাটি খোঁজে বাঁচার রাস্তা।

আমি মানুষের কবি;
স্যাঁতসেঁতে কাপড় প্যাঁচানো তেঁতুলের গন্ধ, যা জিভের কান্না হয়ে ছড়িয়ে পড়ে গরিবের পুকুরপাড়ে।

আমি মানুষের কবি;
কাটা বিদ্যুতের তারের ঝলকানি, অন্ধকারে ছিটকে পড়া ভাঙা খেলনার চাকা, দুপুরে দেওয়ানির সিঁড়িতে আটকে যাওয়া মামলার দীর্ঘশ্বাস।

আমি মানুষের কবি;
রক্তে ভাটিয়ালি বাঁশি বাজাই, যা প্রতিটি সুরে ভেঙে ফেলে শাসকের সোনালী সীমানা।

আমি মানুষের কবি;
ফুটো টিনের মাথার নিচে বসবাসের কথা, চারদিকে ঘিরে মিহি বৃষ্টির মতো বঞ্চনার অনুবাদ।

আমি মানুষের কবি;
বইতে বুক জ্বলে, কারণ আমার উপমা রাস্তার ফুটপাত, যেখানে প্রতিটি ইটেই লেখা থাকে “নিরন্নের অভিমত, দখলদার রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ।”
আমি মানুষের কবি;
আমি মানুষের কবি।