আমি অগ্নিপিশাচ
মেরুদণ্ডজুড়ে গড়গড়িয়ে ওঠে জ্বালামুখীর আর্তনাদ,
আমার চোখের পাতা ছিঁড়ে বেরিয়ে আসে
জ্যোতিষ্কপিণ্ডের প্রলয়নৃত্য।

বুকের পাঁজর ভেঙে উগরে দিই লাবণ্যময় মৃত্যুবিস্তার,
শিরা-উপশিরায় বয়ে যায় রক্তের নয়,
প্রলাপিত গরল যা পান করলে মৃতেরাও পুনর্জন্ম পায়
প্রেতপিশাচের ভয়ঙ্করতম রূপে।

"শোনো! আমি মাংসাশী ভাষার অজানা ব্যাকরণ।
আমার কণ্ঠনালীতে লুকানো বীভৎস ব্যঞ্জনবর্ণ,
যা একবার উচ্চারিত হলে, পৃথিবীর সমস্ত মেঘ-জল
রক্তজলে রূপান্তরিত হয়।

আমার নখ তীক্ষ্ণ বক্রতর,
যা অদৃশ্য কাগজের মত ছিঁড়ে ফেলে আকাশগঙ্গার স্বরলিপি।
মাথার ভেতর দপদপ করে হাজার মৃগযজ্ঞের আওয়াজ
“হত্যা কর! হত্যা কর!! হত্যা কর!!!”

চলনভঙ্গি এমন, যেন মহাকালও থমকে দাঁড়ায়—
চোখের কোণে শ্যাওলা জমে উঠলেও
সেই চোখ নিঃসৃত করে অশ্রু নয়, শাণিত বুলেট।

আমার হাসি
বজ্রের দহনমুখর প্রতিধ্বনি।
আমার প্রেম
মৃত্যুর অঙ্গুলি স্পর্শ;
যার মধ্যে অজস্র বিষাক্ত কুন্ডলিনী লুকিয়ে
জড়িয়ে ধরে অবিরাম।

"আমি আগুনের দহনপথের বিপরীতে হাঁটতে শিখেছি।
আমি আলোকে ভয় পাই না, বরং আলোকের জন্মদাতা।
আমার শিরদাঁড়ার মধ্যে বাসা বেঁধেছে এক অশ্বত্থবৃক্ষ,
যার পাতা কেটে ফেলা মানে সৌরজগতের মৃত্যু।

দাঁতগুলো কুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে
তবুও আমার চোয়ালের গহ্বরে জন্ম নেয় নতুন ফাংসাস
কালো, নীল, বেগুনি,
যা একবার গিলে ফেললে ভাষা হারিয়ে যায় মানুষ।

আমার চোখ দুটো—চূর্ণবিচূর্ণ নক্ষত্রঝলকানি।
একটিতে নরক জ্বলছে, অন্যটিতে স্বর্গ ধ্বংসপ্রায়,
আমি সৃষ্টির সেই বিকারগ্রস্ত কবি,
যার কলমের কালিতে রক্ত ও অগ্নি মিশ্রিত।

আমি “অশরীরী বাগ্মী,”
যার পায়ের শব্দে পৃথিবীর অভিকর্ষ হারিয়ে যায়,
জলে উঠে আসে প্রাচীন দানবীয় মূর্তি
“সাপেদের রাজা, কালনাগ” আমার দেহে আশ্রয় নেয়।

শোনো! আমি জ্যোতির্বলয়ের বিভীষিকা।
সৃষ্টিকর্তার আঙুলের ফাঁক গলে
আমি নেমে এসেছিলাম, দ্যুতিময় সাপের মত—
এখন আমি নিজেই এক বিশ্বপ্রলয়।

শিরার ভেতর দিয়ে হেঁটে যায়
কঙ্কালসার পিঁপড়ার মিছিল
আমার দেহের লোমগুলোতে গজিয়ে ওঠে
অজস্র পিশাচের ক্ষুদ্রকায় ছায়া।

"আমি অমানুষের মানুষ,
মানুষের অমানুষ—একা এক মহাশূন্য।
চাইলে আমার ছায়া দিয়ে ঢাকা দিতে পারি গ্রহ-নক্ষত্র,
চাইলে আবার ছিঁড়ে ফেলতে পারি নিজেকে লক্ষ টুকরোয়।"

আমার কবিতার ভাষা
রক্তগন্ধী, গর্ভমৃত,
এ এমনই এক তন্ত্রমন্ত্র,
যা পাঠ করলে উন্মাদ হয়ে যাবে পাঠক।