আলো ছিল, তবে ধোঁয়ার আঁচল তারে আচ্ছন্ন করিয়াছিল—
বায়ুর মতই ছুঁয়েছিলে, কিন্তু ধরিবার সাধ্য ছিল না।
তব স্পর্শে কাঁপিয়াছে হৃদয়, অথচ কখনো নাম রাখি নাই,
নির্বাক জ্যোৎস্নার নিচে রয়ে গিয়াছে কেবল চাহনি।
মৃত্তিকার গভীরে যত শিকড় চুপিসারে ডুবিয়া থাকে—
তেমনি তব প্রণয়ও, আজও বুকে, অথচ রূপহীন, শব্দহীন।
তুমি আসোনি ঋতু বদলে, আসোনি ফুল ফোটাতে,
তবুও অন্তরে ফুটিয়েছ যে ব্যথা—তা সবার চেয়ে বেশি জীবন্ত।
যে কথা বলা হয় নাই— তাহাই কবিতা হইয়া বাঁচে।
যে চোখে পড়ে নাই আলো—সেই চোখেই স্বপ্ন ঘনাই।
স্মৃতির অরণ্যে যেখানে কোনো উষ্ণতা ছিল না,
সেইখানেই জাগিয়া উঠে এক অনির্বচনীয় বেদনা।
ক্লান্ত সন্ধ্যার মুখোমুখি বসিয়া মনে পড়ে—
তব হাসির সেই বিমূর্ততা, যা নামহীন অথচ অমোচনীয়।
তুমি ছিলে না প্রেমিকা, ছিলে না সহচরী,
তবে কেন তোমার অভাবেই হৃদয় আজো পূর্ণতা খোঁজে?
তোমারে পাইনি, তাই তো তুমি আমার—
তোমার নিঃসঙ্গতা আমার সর্বাধিক স্বত্ব।
অপূর্ণতার মধ্যেই যে প্রেম অমর হয়,
তাহা আজ মনে হয় শ্রেষ্ঠ সংবেদন।
এই যে চিরকাল না-পাওয়ার শূন্য কোল,
এই যে মেঘময় গভীরতা—
তাতেই এক নিবিড় বাঁধন,
যেখানে শরীরহীন ভালোবাসা আত্মায় লীন।
তুমি রইলে না, অথচ তুমিই তো আছ,
স্মৃতির অলিন্দে তব নাম না-জানা গান বাজে।
যাহাদের প্রেমে পরিণয় ঘটে,
তাহারা প্রেমকে জীবনে খুঁজে ফেলে;
আর যাহারা শুধু চোখে রেখেছে প্রেম,
তাহারা প্রেমকে জীবনের পরেও জাগরিত রাখে।