নীরব নিরালায়, নিশীথের নিঃশ্বাসে
ভাঙিল না উচ্চারণ—নিরুচ্চার অভিসারে,
সে আসিয়াছিল ধুলোপাতার গোপন কুহকে,
জ্যোৎস্নার অন্ধকারে মুখ লুকাইয়া।

তাহার উপস্থিতির শব্দ ছিল না,
কেবল শীতল পায়ের স্পন্দে
হৃদয় কাঁপিয়া উঠিয়াছিল
এক অনন্ত সংবেদনে।

সে কিছুই চায়নি—
চাহনি দিয়েই কেবল সমস্ত কিছুর দাবিদার হইয়া উঠেছিল।
আমি দিতেছিলাম না—তবু দিয়েছি;
আমি বলিনি—তবু সব বলিয়া ফেলেছি।

ভাঙা জানালার কাঁচের মতো
কিছু দৃশ্য স্পষ্ট ছিল না,
তবু আবছা রেখায় তাহার ছায়া
অন্তঃপ্রাণে আঁকা রহিয়া গেল।

সে জানিতে পারিল না—
কতখানি আত্মা ফেলিয়া গেল আমার পাথরে প্রলেপ দিয়ে,
সে জানিতে পারিল না—
অভিমান আর অভিশাপের মাঝেও
আমি কেমন কাঁপিয়া উঠি তাহার প্রত্যয়হীন ছোঁয়ায়।

আমার মৌনতার ভাষা সে পাঠ করেনি,
তাহার বিদায়-অভিসারে কণ্ঠে ছিল না কাঁপন,
তবু চিরন্তন স্বরের মতো,
আমার বুকের নিভৃত বেদনায় বাজিয়া যায়
তাহারই পদচ্ছাপ-গন্ধ।

সে ছিল না কোনো চাওয়া,
না-হয় বালুকাবেলায় লেখা নাম,
সে ছিল নির্লিপ্ত, নিঃশব্দ, স্বনির্মিত এক ক্ষরণ—
যাহা রহিয়া যায়, থাকিয়া যায়, কাঁদিয়া যায়
যদিও সে নিজে জানে না।

এই যে নিঃশেষ হইয়া থাকি প্রতিরাত,
ভোরের শিশিরে তাহার অশ্রুর স্বাদ মিশে থাকে—
তবু সে জানে না,
এই যে আলো, এই যে অন্ধকার, এই যে কান্না—
সবই তাহার রেখে যাওয়া এক অব্যক্ত উত্তরাধিকার।