রাতের অন্তিম নিকুঞ্জে, অলস জোছনার ছায়ায়
আলেখ্য এক স্মৃতি রচে—
যেখানে হৃদয় চেয়েছিল নিভৃতে আশ্রয়,
আর ভাগ্য বুনেছিল কেবল অস্পষ্ট বঞ্চনা।

কে যেন ডেকেছিল? কার নীরব পদচারণা
স্মৃতির অলিন্দে রেখে গেল আঁচড়?
কত না কাঙাল বুকে পুষে রেখেছি—
অবিনাশী আকাঙ্ক্ষা, অথচ ফলহীন প্রত্যাশা।

প্রেম!—সে কি শুধুই রত্নচিহ্নিত প্রাপ্তি?
না কি হৃদয়ের অন্তস্থলে নিঃশব্দ বিনিময়?
কেউ চায় শুধু আনন্দ, বিনিময়ে দেয় শূন্যতা,
অন্য কেউ বিলিয়ে দেয় অস্তিত্ব, পায় অপমান।

মন্থর মেঘের মত এক অব্যক্ত আকুলতা
ভেসে আসে প্রতি প্রহরে—
যে স্পর্শ চেয়েছিলাম, তা কখনো মেলেনি,
আর যে অবহেলা এড়াতে চেয়েছি,
সে-ই যেন চিরসঙ্গী হয়ে গেল।

বৃথা নয়, তবু বৃথাই, এই চাওয়া—
যে চাহিতে চায়, তার দুঃখ নিঃশেষ নয়,
কিন্তু যে হৃদয় নিঃশব্দে নিঃশেষ হয়েও ভালোবেসে যায়,
সে-ই প্রেমের প্রকৃত তপস্বী।

হায়! সকলে তো চায় সুখের সংজ্ঞায় প্রেম,
কিন্তু প্রেম—সে তো অন্ধকারে নিজেকে উন্মোচন করা,
জ্বলে গিয়ে আলো দেওয়া প্রদীপের মত।

কে বা জানে, যে গেছে সে কি হারিয়েছে?
না কি যে পেয়েছে, সে-ই পরম বঞ্চিত?
ভবঘুরে হাওয়ার মত, স্মৃতিগুলি ফিরে ফিরে আসে—
উদ্বেল হৃদয় আবার জেগে ওঠে,
প্রেমের অবিনশ্বর আর্তনাদে।

তবু প্রভাত আসে, আলো ফোটে চূড়ান্ত নির্বাকতায়—
চল সখী, নিঃশেষ প্রহর পেরিয়ে যাক,
অরণ্যের নিচে যে ছায়া ছিল
সে এখন শুধু এক কল্প-গন্ধ।

প্রেমের কাহিনী শেষ নয়,
তবে গান থেমে গেছে আজ;
যে কাঁদে, সে বুঝে হৃদয়ের ব্যঞ্জনা—
যে হাসে, সে দেখেনি অশ্রুর আলো।