ধূসর পাহাড়ছায়া ছেড়ে
ছলছল ধ্বনি বুকে নিয়ে,
অভিমানের অলিন্দ বেয়ে
সে তো এল ছুটে অজানায়—
নির্বাক সে ধারা, অথই শূন্যতা
ছেঁড়ে এল আপন দায়।

কত কাঁকুড়িপাথর, কত তপ্ত বালু,
ঝড়ের হুঙ্কারে খুঁজেছে চলার দিশা,
তবু নত হয়নি, তবু ভাঙেনি
তাহার অন্তঃসলিলা নিশা।
সে জানে, কোন প্রলেপ নয়,
শেষে এক মহামিলনের আশ্বাসে
তার শিরার অন্তরালে বাজে গীত,
যে সুরে কারো প্রতীক্ষা থাকে।

প্রতিটি বাঁকে তার গান, কান্না,
অচেনা কোনো গভীর স্মরণ।
সে যে বয়ে চলে—
নির্মোহ প্রেমের স্রোতসিন্ধু চরণ।

অতঃপর—
দূর নীলিমা থেকে দেখা দেয় সে—
যার গর্জন নিস্তব্ধতাকে দোলায়।
অন্তরীক্ষ আর সলিল এক অপূর্ব ধ্বনির কল্পনায়
একত্র হয় হৃদয়ের মোহনায়।

তখন সে নদী থেমে যায় না,
কান্না হয় না স্তব্ধ, হয় না নিস্প্রভ—
সে তো প্রবাহিত হতে চায় তারই বুকে,
যেখানে বিলীন হয়েও পাওয়া যায় পুনর্জন্মের স্বাক্ষর।

তখন সে বলে না, “আমি কোথায়”
সে বলে, “তুমি আমি, আমি তুমি”—
সাগরের অজস্র ঢেউয়ের গহনে
সে খুঁজে পায় নিজের ছায়া,
এক নতুন অন্বেষা, এক নতুন প্রেমের পরিচয়।

সলিলে সলিলে মিলন ঘটে, সলিলেই প্রেমের অঙ্গীকার,
আর সে প্রেমে থাকে না পৃথক সত্তা,
থাকে শুধু বিস্মরণে পাওয়া মহিমা।

কে বলে সে হারাল?
কে বলে সে নিজে নেই?
সে তো হয়ে উঠল অপরিমেয়,
যার কিনারা নেই,
নেই কোনো ভয়।

সে নদী, যে মিশে গিয়ে অশ্রুজলে,
সৃজন করিল চিরন্তন এক প্রেমগাথা—
প্রেম, যেখানে না থাকে নাম,
না থাকে বাঁধন,
থাকে শুধু পরিপূর্ণ বিসর্জনের আরাধনা।