সুপ্ত পাষাণে কুয়াশা নামায়, অন্তর-মন্দিরে বাজে ব্যথার বেণু,
আলোক-আবরণে গোপন রেখেছি যে আমি, সে আমিই আজ বড়ো বিষণ্ণ।
দিগন্তবিস্তারে ছড়িয়ে রেখেছি কত শ্লাঘা, কত অভিমান,
কিন্তু গভীর নিশীথে শুনি—ভিতর থেকেই ওঠে শূন্যতার গান।

পদচিহ্নহীন গগনের নিচে পথহারা আমি চলি নিরুদ্দেশ,
বহুকাল ধরে গড়েছি যে আমি, সে আমি আজ আমার ত্রাসের আবেশ।
চেতনার কাননে সজীব লতা হয় গিরি-গহন—
আর আমি, আমি যে কেবলই আত্মরূপের বিষণ্ণ সন্তান।

হে অচেনা!
আমার অহংকারের যে স্বর্ণমুকুট ছিল, আজ তাহা জ্বলে উঠে জ্বালায়,
আমি জানি, শূন্যতার চূড়ান্ত সৌন্দর্যে আছে এক মহান আয়,
যেখানে নিজেকে নয়, নিঃস্বতাকেই করতে হয় অর্ঘ্য,
যেখানে ধ্বংসে গড়ে উঠে এক নতুন জীবনের পাখা।

আমি তোমার নই, আমি তোমাকে ধারণ করিনি,
আমি কেবল নিজেকে পূজেছি—তোমার নামে,
তাই তো আমার করতলে উঠে আসে কাঁটা,
জীবনের ফুল নয়, মৃত্যুর ঘ্রাণ।

আজ এ প্রভাতে, অন্তর্জাগরণে,
আমি ভাঙতে চাই নিজস্ব সকল মিথ্যা প্রতিমা,
যে প্রতিমা গড়েছি অভিমানে, নিজের অহং-নির্মিত লীলা—
তা আজ তুমি ভেঙে দাও, করো চূর্ণ আমার অন্তর্মুখী দ্বন্দ্ব।

হে অন্তর্যামী!
তুমি এসো না দীপ্ত দ্যুতিতে, এসো অন্ধকারের প্রান্ত থেকে—
যেখানে নতমস্তকে মানুষ করে একাকী সন্ধি,
তুমি এসো না শঙ্খধ্বনিতে, এসো নীরব নিঃশ্বাসে—
যেখানে হৃদয় তার ঋণ মেটায় চুপিসারে, বিনা উচ্চারণে।

আমার চোখে, যাহা দেখেছি—তা ছিল মায়া,
আমার কানে, যাহা শুনেছি—তা ছিল প্রতিধ্বনি।
আমি শুনিতে চাই সেই নীরবতার বাণী,
যা বেজে উঠে ভাঙনের পরে, নিঃশেষের পরে।

তুমি করো আমাকে ক্ষুদ্র,
তুমি করো আমাকে তুচ্ছ,
তুমি করো আমাকে নত,
যেন আমি পারি একদিন
তোমার নিঃশব্দ চরণে শান্তি হয়ে থাকতে—
অভিমানহীন, অহংবর্জিত, অনন্ত প্রেমের এক বিন্দু হয়ে।