মৌনতায় দগ্ধ একাকিনী প্রাণ,
প্রতিদিন আকাশের দিকে চেয়ে রহে, —
নির্বাক আকাঙ্ক্ষা বুকেতে তবু
জ্বলে এক চিরপ্রশ্নের বহ্নিশিখা।

কেহ দেয় না আহ্বান, কেহ রাখে না তৃষ্ণা,
তবু সে হৃদয় লুটায় চরণতলে —
যেখানে কেবল ছায়ার ছলনা,
যেখানে সাড়া মেলে না প্রার্থনার শিউলিতে।

বিলাসিনী বায়ু যখন বকুলের কানে কানে
স্বপ্নের ছায়া ছুঁইয়ে দেয়,
সে হৃদয় তখন দান করে নিজেকেই —
তুচ্ছ এক হাসির দামে।

অবহেলার অলিন্দে দাঁড়িয়ে যে চায়,
সে ভালোবাসে না চমকে দিতে —
সে ভালোবাসে বিনিময়হীন নিঃস্বতায়,
যে ভালোবাসায় দাবি নাই,
শুধু আছে স্তব্ধ প্রহরে অপেক্ষার সমাধি।

সে হৃদয় কারোর কাছে চায়নি রাজ্য,
চায়নি জাঁকজমক পূর্ণ উত্তাপ,
তবু—
ভগ্ন ঘড়ির মতো প্রতিটি মুহূর্তে
সে গুনেছে কাউকে পাওয়ার সময়।

আর যাদের হৃদয়ে ভালোবাসা অলংকার,
তারা জানে না —
এই অর্পিত স্পন্দনের বিনিময়ে
কে আপন অস্তিত্ব খুইয়েছে নিরবধি।

প্রতিধ্বনি নাই, — শুধু শূন্যতা ফেরে ফিরে
উচ্চারণহীন সেই নামের দিকে।
সে নাম— একান্ত আপন হয়ে
অন্য কারও ঠোঁটে হেসে ওঠে।

এই যে অকুণ্ঠ নিবেদন,
যা ছিল ক্ষণিকের হাসিতে ধূলিসাৎ,
সে-ই হয়ে ওঠে
চিরকালের একাকী প্রহর।

কে বুঝিবে?
কোন ম্লান চোখে কত দীপ্তি ছিল—
কোন অলিখিত পত্রে কত অশ্রুবিন্দু
পাতার মতো নীরবে ঝরেছিল
একটি হালকা স্পর্শের আশায়।

তবু সে হৃদয় হাসে —
না পাওয়ার অনন্ত ব্যথাকেই
ভালোবাসার চূড়ান্ত রূপ বলে।