তব নিরুত্তাপ স্পর্শে জাগে ছায়াহীন চন্দ্ররাগ,
প্রতীক্ষার দীর্ণ ধূপে জ্বলে হৃদয়ের গোপন আগ।
নীরবতার কোল ঘেঁষে বাজে এক অব্যক্ত গীতি—
যেন প্রাচীন কোনো ব্যথা অশ্রুপাতের ধ্বনি-বিনীতি।
শূন্য আকাশে দুলে নিঃসীম আকুলতা,
নিভৃতে কাঁপে হৃদয়, অমোঘ নিসর্গ-আবরণে ব্যথিত বাতাস।
প্রেম কি তবে শুধুই আহ্বান নয়?
সে তো অতলান্ত গভীরতা, জোছনার মাঝে হারানো পরিচয়।
তোমার অনুপস্থিতি ছুঁয়ে দেয় নিভৃত মর্মমূলে,
চোখের পাতায় জমে থাকা নিরুপায় কাব্যদূত আকুলে।
স্মৃতির গর্ভে ফিরে আসে বিস্মৃত দিনগুলি,
নিস্তব্ধতায় বাজে কেবল তোমার পায়ের ধ্বনি নিরন্তর বিলি।
হয়তো একদিন তুমি ছিলে—তা আমি জানি না ঠিক,
তবুও হৃদয়ের কাব্যে তুমি আজো এক অরূপ লিখ।
কে বলেছে প্রেম মেলে শুধুই মিলনে?
বিচ্ছেদের মধ্যেই কি তার অনন্ত মাধুর্য লুকিয়ে নেই গহনে?
তোমার চোখের গভীরতায় ছিল নীরব নিবেদন,
যা ভাষাহীন আলো হয়ে ছুঁয়ে দিত নিঃসঙ্গ স্নিগ্ধ নির্জন।
তুমি ছিলে সেই মৌন জলধি—
যার ঢেউয়ে আমি হারিয়েছি আত্মপরিচয় ও বেদনার সঙ্গীতধ্বনি।
প্রতিটি সন্ধ্যায় শুনি এক মূর্ছিত বাঁশির গর্জন,
প্রণয়ের না বলা আখ্যান যেন তার অদৃশ্য উচ্চারণ।
কোনো অনামা পথিক কি বাজায় তাকে দূর থেকে?
না কি আমার হৃদয়ের প্রতিধ্বনি খেলে নিজের ছায়ার ছোঁয়াতে?
সময়ের ধুলোয় মিশে গেছে চিহ্নহীন কত আর্তি,
তবু অনিবার প্রেম গেঁথে রেখেছি অন্তরলোকের অন্ধকার পাঁথি।
ভুলে যাওয়া সুর, হারানো ঋতু,
সব যেন মিশেছে তোমার এক নিঃশব্দ অভিসারে অদৃষ্টরূপ।
তুমি এলে না, কিন্তু থেকেছো—
তুমি দিলে না কিছু, কিন্তু রেখে গেলে সমস্ত সত্ত্বার স্পন্দন।
এই ব্যথাই যে প্রেম, এই নীরবতাই যে ভাষা,
এই হারানো দৃশ্যেই লুকানো রয়েছে হৃদয়ের শ্রেষ্ঠ উপাখ্যান-রাশা।