রাত গভীর হলে নিভে আসে যে দীপ,
তাহার মতোই নিভিয়া যায় মোর প্রার্থনা–
অস্পষ্ট ছায়ায় প্রতীক্ষা কাঁপে,
চরণচিহ্নহীন পথের ধুলোয়।

কেন তুমি আসো না স্বপ্নঘোরে?
আমি প্রতিটি নিঃশ্বাসে কাঁপিয়া উঠি—
যেন বাতাসে জাগে পদধ্বনি,
যেন নিরাশার গোধূলি গায় নীরব গান।

আমি নহি সাধু, নহি ত্যাগী—
তবু ত্যাগ করিতে পারি সমস্ত মোহ,
যদি তোমার করুণ দৃষ্টি ছুঁয়ে যায়
আমার অন্তরতম নীহারিকা।

হৃদয়ের পাঁজরে দহন জ্বলে,
তব দয়ার আশায় দিকহীন আমি।
কে জানে, কতবার গিয়াছে চিতার দিকে
এই আত্মা, শুধু তোমার একটিবার আহ্বানের আশায়।

তুমি মেঘ হ’য়ে এসে ঢেকে রাখো আকাশ,
আর আমি—একাকী দীপ্ত নক্ষত্র,
নিভিয়া যাই তোমার অনুপস্থিতির বিষাদে।

কতবার ভেবেছি: এবার বুঝি শেষ!
আর আহ্বান করিব না, করিব না প্রার্থনা।
তবুও চুপিচুপি উঠে আসে আরতি,
অজস্র নিঃশ্বাস জুড়ে যে নাম ব’সে থাকে।

আমি জানি, আমার প্রেম তোমার যোগ্য নয়—
তবু এই প্রেমই আমার সবটুকু অর্ঘ্য।
তুমি গ্রহণ করিলে না– সে তো তোমার অধিকার,
আমি শুধু দিয়ে গেলাম– নিজেরে বিলুপ্ত করিয়া।

জানি, এই প্রেমে কোনও দাবি নাই,
কোনও পূর্ণতার শপথ নাই—
তবু হৃদয় তো হৃদয়,
সেও চায় একটুখানি দৃষ্টি, একটুখানি স্পর্শের আশ্বাস।

আমি আর কিছু চাহি না, স্বপ্নও নয়—
শুধু তোমার একটি মৌন সম্মতি,
যে সম্মতি উচ্চারিত হয় না কোনও ভাষায়,
কিন্তু ছড়িয়ে পড়ে আকাশের নীলজলে,
শুকনো পাতার মৃদু নড়াচড়ায়,
মন্দিরের ঘণ্টাধ্বনির দীর্ঘ নীরবতায়।

একদিন, হয়তো সন্ধ্যার ঘন ছায়ায়
তুমি ফিরে তাকাবে—
তখন হয়তো আমি থাকিব না,
কিন্তু তোমার চোখে থাকবে
আমার অর্পিত সমস্ত অনন্ত ভালোবাসার স্মৃতি।