যে সন্ধ্যার বিভোর ছায়ায়
তুমি হেসেছিলে নির্বিকার,
সে সন্ধ্যা কি জানত—
অপর প্রান্তে দাঁড়িয়ে
একজন হৃদয় ভিক্ষুক
অশ্রু-ধারা দিয়ে ধুয়েছে তোমার অনুপস্থিতি?

তুমি পেয়েছিলে ভালোবাসা
খোলা জানালার হাওয়ার মতো—
সাধনার ছোঁয়া ছাড়াই,
অপেক্ষার অগ্নিপরীক্ষায় না গিয়েই
তুমি হয়েছো কারও
নির্বিচারে অধিকারভুক্ত।

কিন্তু—
কোন ম্লান দীপ্তিতে
অন্য এক আত্মা
তার শত সহস্র রাতের নিঃশব্দ অভিসারে
তোমার নামে জ্বেলেছে প্রণয়ের প্রদীপ?

সে তো জানে—
প্রতিটি নিঃশ্বাসে তোমার নাম,
প্রতিটি ঘুমহীন রাতের স্বপ্নে
তোমার মুখরেখা;
সে তো লিখেছে নিজের ভিতরে
তোমাকে ভালোবাসার উপাস্য রূপে।

আর তুমি?
তুমি তো পেরিয়ে গেছো তার বুকের ওপার,
চিহ্ন না রেখে, চিৎকার না শুনে,
তাকে অর্পণ করেছো বিস্মৃতির অভিশাপে।

তুমি যে পেয়েছিলে কারও জীবন বিসর্জনের বিনিময়ে,
সে কথা কি তুমি জানো?
তুমি যে একদিন
কাউকে করে তুলেছিলে
কেবল “প্রত্যাশার ছায়া”—
সে ছায়া আজ অভিসাররহিত রাত হয়ে চুপচাপ ঝরে পড়ে।

তাকে কেউ পেলো না,
তবে সেই শূন্যতা দিয়ে তুমিই তো পূর্ণ হলে—
তুমি যাকে দিলে হেসে,
সে কি অনুভব করলো হৃদয়ের সে আগ্নেয়প্রেম?
না, সে তো জানেই না,
তুমি একবার হয়েছিলে অপর এক জীবনের স্বপ্ন-সম্রাজ্ঞী।

সে যে কেবল ছুঁয়েছে তোমাকে,
ভেতরের ঐ বিরাট ঘূর্ণিপাক—
প্রেম-আক্ষেপ-বিসর্জনের অগ্নিপ্রবাহে
যে ছিল ছাই হয়ে থাকা কোনো এক অনামিকা জীবন!

তুমি তাকে পেলে নিঃশব্দে,
আর সে তোমাকে হারালো
সমস্ত দৃষ্টিপথ জুড়ে রেখে—
নির্বাক আর্তনাদ।

তুমি হয়তো বলবে—
এ তো কেবল প্রেমের আরেক দিক।
কিন্তু না—
এ এক অধিকারহীন জীবনের পরাজয়ের ঘোষণা,
যেখানে একজন পায় না কিছুতেই,
আর অন্যজন পায় অনায়াসে, অনাহ্বানেই।

তবুও অপেক্ষাকারী সেই ছায়া
তোমার প্রার্থনায় নিঃশব্দে অর্ঘ্য দেয়,
অথচ জানে—তুমি আর কোনোদিন ফিরবে না।
সে হারায়, হারায় প্রতিনিয়ত—
কিন্তু তোমার নামেই সে এখনও
গেঁথে রাখে জীবনের শেষ স্বপ্নখানি।

সত্যিই,
তোমাকে কেউ একদিন পেয়ে যায় মানেই—
অন্য কেউ চিরতরে দগ্ধ হয় নিঃশব্দ অগ্নিকুণ্ডে,
আর তুমি সে কথা জানতেই পারো না,
কারণ পাওয়া কখনো বুঝতে শেখে না
পাওয়ার পেছনে অপেক্ষার মৃত্যুদণ্ড কেমন হয়।