সে এল, নিঃশব্দে—
যেন নৈঃশব্দ্যের গর্ভে জন্ম নেয়া কোনো চন্দ্রকিরণ,
অন্ধকারের চওড়া চরণধ্বনি মাড়িয়ে—
স্মৃতির অলিন্দে তার উপস্থিতি আঁকলো এক দৃষ্টিনির্মিত রেখা।
না ছিল প্রণয়ঘন উল্লাস, না ছিল আলিঙ্গনের শব্দ—
তবু অন্তরের অতল সিংহদ্বারে বাজল সুরবিহীন এক সুর।
গোপনে এল সে—
জ্যোৎস্না ঢেকে রাখা অলীক মুহূর্তের মত।
চোখে চোখ রেখে কিছু বলল না,
তবু নৈঃশব্দ্য রচনা করল এক মহাকাব্য—
যেখানে প্রতিটি নিঃশ্বাস হয়ে উঠল কোন এক পূর্বজন্মের
অসমাপ্ত প্রার্থনার প্রতিধ্বনি।
আমি তার স্পর্শ চাইনি,
তবু বাতাসে ঘুরে বেড়াল তার গন্ধের গোপন অলিন্দ।
সে এল, আমার বুকের কুয়াশায় পথ হারাতে,
তবু জানল না, কত কাল ধরে
আমি সেই পথেই দীপ্ত এক বাতির মত জ্বলছিলাম তার জন্য।
গোপনে এল—
নেই কোন কাঁপন, নেই কোন ঘোষণা, নেই কোন নৈবেদ্য।
কিন্তু যাবার বেলায় রেখে গেল—
সমস্ত সৃষ্টির চেয়ে বেশি কিছু,
এক গভীর অভিমান, এক সুপ্ত পিপাসা,
একপ্রকার নির্লিপ্ত চরণচিহ্ন—
যা মুছে ফেলা যায় না কোনও ঋতুচক্রে।
সে জানত না,
তাকে বহন করে আমি চলেছি গূঢ়তম গভীরে,
প্রাণের অন্তর্লীন গহ্বরে যেখান থেকে ফেরা যায় না।
সে জানত না—
তার অদৃশ্য যাত্রা রেখে গেছে শব্দহীন অভিশাপ,
আমার প্রতিটি নিশ্বাসে আজও বেজে চলে সেই অস্ফুট বিদায়বাণী।
সে গেছে,
তবু আমি থেকে গেছি—
সেই প্রহরে, সেই নিস্তব্ধতায়, সেই অনুপ্রবেশহীন অনুভবে।
সে গেছে,
তবু আমার ভেতর থেকে যায়—
তার চুলের গন্ধ, তার চোখের নির্লিপ্ততা, তার নীরব অস্বীকার।
তুমি জানো না, প্রিয়,
তুমি রেখে গেছ কতখানি তোমার
আমার ধুলোপড়া চেতনার কোণে।
এই যে নির্জন নিশীথে,
একেকটি তারা যখন নিভে যায়,
আমি ভাবি—এ বুঝি তোমার অনুপস্থিতির আরেকটি রূপ,
এতটাই নিখুঁত, এতটাই চিরস্থায়ী।
তুমি গেছো—
তবু তুমি আছো,
স্মৃতির চাদরে মোড়ানো সেই গোপন আগমনের মত,
যা চিরকাল অপ্রকাশিত থেকে
সর্বাধিক বলা হয়ে যায়—
নির্বাক ভালোবাসার ভাষায়।