ছেড়ে যাওয়া এক নির্বিকার ভোরের দহন,
যেখানে ব্যথা নেই, আবেগ নেই, নেই কোনো প্রতীক্ষার বীজ।
সে তো হেঁটে যায় চিরঋণহীন ছায়ার মতো,
একবার পিছন ফিরে তাকায় না—
একবারও শোনে না,
কে কতদিন ধরে প্রহর গুনে বসে ছিল।
আর ছেড়ে দেওয়া?
সে তো এক অলক্ষ্য ত্যাগের চুম্বন,
যেখানে প্রতিটি পদক্ষেপে
অশ্রু-ভেজা অরণ্যের দীর্ঘশ্বাস,
যেখানে হৃদয় নিজেই হয়ে ওঠে
অভিমানী, অথচ নিঃশব্দ শ্রোতা।
আমি তো চাইতাম,
চাইতাম এমন এক অস্তিত্ব,
যে ভিড়ের মাঝে থেকেও
আমার নিঃশব্দ ডাক শুনতে পায়।
কিন্তু তুমি ছিলে দূর দিগন্তের ধ্রুব তারা—
নেই যার নাগাল, নেই কোনো অধিকার।
তবু ভালোবেসে ফেলেছিলাম।
ভালোবাসা মানে তো শুধু স্পর্শ নয়—
ভালোবাসা মানে, চিরকাল
অপেক্ষার ছায়ায় দাঁড়িয়ে থাকা
বিনিময়ের আশা না রেখেও।
জানো,
তোমাকে ছেড়ে দিয়ে প্রতিদিন
আমার ভিতরে জন্ম নেয় এক অলক্ষ্য মৃত্যু।
সে মৃত্যুতে নেই কাঁদার অবকাশ,
নেই প্রিয়জনের কাঁধে মাথা রাখার সৌভাগ্য।
তবু সেই মৃত্যুই বাঁচিয়ে রাখে
তোমার স্মৃতিকে, তোমার নিঃসঙ্গ হেসে ওঠাকে।
তুমি হয়তো ভাবো—
হাত বাড়ালেই পেয়ে যাওয়া
মানে ভালোবাসা।
কিন্তু না, ভালোবাসা তো একেবারে নিঃস্ব হওয়ার নাম—
ভালোবাসা মানে, তোমার সব সুখ
নিজে না ছুঁয়েও দূর থেকে আশীর্বাদ করা।
আমি তো চেয়েছিলাম—
তোমার পাশে বসতে,
কিন্তু না, পাশে থাকা তো সব নয়।
তোমার অনুপস্থিতিতেও
আমি জেনেছি ভালোবাসার নিঃসীম গভীরতা।
আমি তো ছেড়ে যাইনি—
আমি কেবল তোমাকে ছেড়ে দিয়েছি
এক অনন্তর নীরবতার মাঝে।
যেখানে তুমি স্বাধীন, পাখির মতো,
আর আমি—গাছের মতো,
যার শেকড় তোমার পথের দিকে ঝুঁকে থাকে সারাবেলা।
তোমার চোখে এ ভালোবাসা হয়তো অতিশয়তা,
তুমি হয়তো বলবে,
“ভালোবাসা পেতে হয়।”
কিন্তু আমি জানি—
ভালোবাসা মানে সবসময় পাওয়া নয়,
ভালোবাসা মানে—নিজেকে প্রতিনিয়ত হারিয়ে দেওয়া
তবু কারো অস্তিত্বকে বাঁচিয়ে রাখা।
আমি জানি,
তুমি কখনোই জানতে পারবে না
এই হারিয়ে যাওয়া অপেক্ষার পরিধি কতখানি বিস্তৃত,
এই ছেড়ে দেওয়ার নিচে কতটা নিঃশব্দ আত্মদাহ রয়েছে।
তবু,
তুমি থাকো, তোমার মতো করে,
আর আমি থেকো স্মৃতিপটে—
যেখানে ভালোবাসা কাঁদে না,
শুধু অন্তরালে জ্বলে ওঠে একটি শুদ্ধ দীপশিখা।