"প্রাচীরের ছিদ্রে এক নামগোত্রহীন
ফুটিয়াছে ছোট ফুল অতিশয় দীন।
ধিক ধিক করে তারে কাননে সবাই;
সূর্য উঠি বলে তারে, ভাল আছ ভাই?"
_রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর


      🎆 আমরা যারা কবি জে আর এ্যাগ্নেসের কবিতার সাথে পরিচিত তারা সকলেই জানি যে, তাঁর অধিকাংশ কবিতারই অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো সহজ সরল প্রকাশ ও বুদ্ধিদীপ্ত উপমার প্রয়োগ। আর সুচিন্তিত ও সুপ্রযুক্ত উপমাই একটি কবিতাকে রসোত্তীর্ণ করে তোলে। আলোচ্য কবিতাটিও এর ব্যতিক্রম নয়।


🎇
আজ হয়তো মন ভাল নেই,
নয়তো ভাবাবেগে অজানায়..


বেসুরে গান তুলি বসে পাশে জানালার
দক্ষিণা বাতাসে সুর যেন
উত্তরের পথে ধাবমান..


শিমুলের ডালে বসে কোকিল যেন হাততালি
দিয়ে বলছে আমায় গাও না..গাও..
খুব ভাল হয়েছে।


আর পাশের ছাদে কাক যেন
উপহাস করে বলছে আমায়
এমন হেরে গলায় গান
এক্কেবারে যাচ্ছেতা..


আজ আমার বুঝতে বাকি নেই
যারা ভাল মনের..
তাদের চোখে মনে
সবটাই ভাল মনে হয়।


যাদের মনে আছে আরো একটি কুৎসিত মন
তারা যা করে বা বলে কোনাটাই সুন্দর করে
তুলতে পারে না বা হয় না।


কাক কালো কোকিলও কালো
তবুও তারা কেন এক না হলো ?


বাইরের রং আসল না
ভেতরের মনটাই আসল

      🌍 শিরোনাম:- শিরোনামটি প্রয়োজনের তুলনায় দীর্ঘ রাখা হয়েছে। তবে কবিতার ভাব অনুযায়ী সঠিক নামকরণ। যদিও 'বাইরের রং ও ভেতরের মন' রাখলেও চলত।  
    
       🚩 প্রথম স্তবক;- দুটি মাত্র ছত্রে কবি সকল কবির মনের কথাটি ব্যক্ত করেছেন। কবিরাও তো মানুষ, তাদেরও তো সব দিন মন ভালো থাকেনা। তবু কবিতা রচনায় ডুবে থেকে ভাবাবেগকে অন্যদিকে চালিত করার প্রয়াস চালিয়ে থাকেন। কবিতাই যে তার মনের একান্ত সহচরী।


        🚩 দ্বিতীয় স্তবক:- সুগায়িকা যে আজ বড়ই আনমনা। যে সুরে গাইতে চান, কণ্ঠে ধ্বনিত হয় যেন তার উল্টো সুর। উপমার অপূর্ব প্রয়োগ ঘটিয়েছেন এখানে কবি। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, প্রতিষ্ঠিত কবিরাও সব দিন সমান দক্ষতার সাথে কবিতা রচনা করতে পারেন না। কোন একজন কবির সব কবিতাই সমান রসোত্তীর্ণ হতে পারে না। এমনকি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও তাঁর বহু কবিতার বারবার পরিবর্তন ঘটিয়েছেন নিজেই। হয়তো প্রথম যেদিন অথবা যে সময় কবিতাটি রচনা করেছিলেন সেদিন তাঁর  মন-মেজাজ কাব্য রচনার অনুকূল ছিল না। স্তবকটির অন্তর্নিহিত বক্তব্য এটিই।


     🚩 তৃতীয় স্তবক;- আলোচনার শুরুতে কবিগুরুর যে কবিতাটি উল্লেখ করেছি এই স্তবকটির বক্তব্য প্রায় একই রকম। এটিও সুনিপুণ উপমায় সমুজ্জ্বল একটি স্তবক। প্রকৃত গুণী গায়িকা কোকিলই একমাত্র বুঝেছে যে এই গায়িকার আজ মন ভাল নেই। তাই সুরে কোথাও ঘাটতি দেখা দিচ্ছে হয়ত। তবুও সে তো আমারই পথের পথিক। তাই সে উৎসাহ দিয়ে বলে, গাও না গাও ... খুব ভালো হয়েছে।


      🚩 চতুর্থ স্তবক:- কোকিলের উল্টো স্বভাব কাকের। নিজের কর্কশ কন্ঠের কথা না ভেবে সম্ভাবনাময়ী গায়িকাকে সে নিরুৎসাহিত করার হীন প্রচেষ্টা চালায়।এখানে কতিপয় হামবড়া কবি-পাঠকের অহেতুক বিরূপ মন্তব্যের প্রতি শ্লেষাত্মক ক্ষোভ ব্যক্ত হয়েছে বলে মনে হল।
          
       🚩 পঞ্চম স্তবক:- চিরন্তন সত্য উচ্চারিত হয়েছে স্তবকটিতে।  দৃষ্টিভঙ্গি যাদের সৎ ও সুন্দর তারা সর্বদা সুন্দরকে সুন্দরই দেখে।


       🚩 ষষ্ঠ স্তাবক:- এটি পঞ্চম স্তবকের পরিপূরক তথা বিপরীত । কুৎসিত মনের অধিকারীরা সব কিছুর মধ্যে  অসৌন্দর্যকেই খুঁজে বেড়ায়।


        🚩 সপ্তম স্তবক:- কবির আক্ষেপ, কাক ও কোকিল একই রঙের হওয়া সত্বেও আচরণে এমন বিশাল ফারাক কেন! সত্যিই তো মানুষের বাইরেটা দেখে কি অন্তরের আসল রূপ বোঝা যায়?


         🚩 অষ্টম তথা শেষ স্তবক:- কবি এখানেই তাঁর
কবিতার উপসংহার উপস্থাপিত করেছেন। তাঁর মতে, কোন মানুষের আসল পরিচয় হল তার অন্তঃকরণের প্রকৃত রূপটাই। বাইরের কৃত্রিম রূপের কোন মূল্যই নেই তাঁর কাছে।


          ,🚩 উপসংহার:- কবিতাটিতে কবি বলতে চেয়েছেন, শুধু  গায়ক অথবা কবি হলেই চলে না, মনটাও ভাল হতে হয়। যত বড় শিল্পী হন যদি তার মনটা কুৎসিত হয় তবে তিনি আর যাই হোন অন্তত শ্রদ্ধার পাত্র হতে পারেন না। আর প্রকৃত কবিসুলভ মানসিকতার কবিরা অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে যেমন পিছু পা হয় না তেমনি সত্য উচ্চারণেও নির্ভীক ও দ্বিধাহীন। সে সত্য কারো কারো কাছে অপ্রিয় হলেও। কবি সেই কবিসুলভ মানসিকতার পরিচয় দিয়েছেন কবিতাটিতে।


           🚩 অনুরোধ বা পরামর্শ:- কবিকে কিছু বানানের প্রতি আরো যত্নশীল হতে হবে। তাঁর কথ্য উচ্চারণ কে প্রাধান্য দিলে হবে না। যেমন, 'হেরে' (গলায়) শুদ্ধ বানান হবে 'হেড়ে'। তাছাড়া কবিতাকে আরও মেদবর্জিত ও মেঘাচ্ছন্ন করার প্রয়াস করা প্রয়োজন। কবিতার নামকরণের ক্ষেত্রে আরো চিন্তাভাবনা করার প্রয়োজন।