বৈশাখের আকাশটা দুপুর থেকেই
নিজের বিশাল কলেবর ঢাকছিল
গভীর অসিত চাদরের আচ্ছাদনে;
শনি-রবির বিকেলটা রহস্যময়
এক অস্বস্তিকর বার্তা নিয়ে হাজির
হয় ইদানিং, বার্তাটা খুশির নাকি
বেদনার বুঝতে পারি না কিছুতেই।
সেদিন তুই আমার হাতটা মুঠোর
মধ্যে নিয়েই বললি,তোমার হাতটা
এত নরম কেন? তুমি না ব্যাটা ছেলে!
ওটা তোর নেহাত ছেলেমানুষী ভেবে
বলেছিলুম, 'কি করবো বল্, সৌভাগ্য
হয়নি তো কোনদিন কোদাল ধরার,
শক্ত হবে কেমন করে হাত আমার?
বাসের রড ধরে ঝুলে ঝুলে যখন
কলেজ যেতুম তখন শক্ত ছিল বেশ।
সে পাটও তো চুকে গেল বছর বারো,
এখন অফিসে বসে শুধু কলম পেষা,
এই দ্যাখ মধ্যমার ডগার বাঁ পাশটা,
বুড়ো আঙুল আর তর্জনীর সামনেটা,
বেশ শক্ত না?'তুই যেন স্বর্গ পেলি হাতে;
কেবল তিনটে আঙুলের ডগাই নয়
গোটা পাঞ্জাটাই হাতের মুঠোয় নিয়ে
ময়দার মতো দলাই-মলাই করতে
লাগলি, চোখে মুখে স্পষ্ট মদিরতা;
অস্বীকার করবো না,আমারও দেহে
বিদ্যুৎ বইছিলো দুর্নিবার গতিতে;
মনে মনে নিজের দু গালে ঠাস ঠাস
করে চড় কষালাম বেশ কয়েকটা,
প্রিয়াকে বললুম,ক্ষমা করো প্রেয়সী
চিৎকার করে আরও বললুম,আমি
তলিয়ে যাচ্ছি প্রিয়া, ধরো আমার হাত,
টেনে তোলো এই গূঢ় অন্ধকার হতে,
অক্টোপাশের মতো সুকঠিন বাঁধনে
আমার মাথাটা জাপটে ধরো তোমার
প্রজ্জ্বলিত হৃদয়ের মাঝখানটাতে।
সে চিৎকার তোর কানে পৌঁছায়নি জানি
তুই ছিলি আপন ধ্যানে পাগল-পারা,
তখনও বুঝিনি তোর মোহের গভীরতা,
ভেবেছিলুম ওটা নেহাতই  সরলতা,
বরং পদস্খলন থেকে নিজেকে রক্ষা
করতে প্রচেষ্টা চালাতুম নিরন্তর।
অবাক হতুম নিজের রহস্যময়তায়।
ভাবি মনে, 'বাক' মানে তো 'কথা' জানি,
কথা যারা রাখে তাদেরই মানুষ মানি,
প্রিয়া তো বাগদত্তা,সাত বছরের প্রেম,
তবু কেন শিহরণ জাগে এই দেহে
ভ্রাতুষ্পুত্রী-সম নাবালিকার ছোঁয়ায়?
নাবালিকাই তো ছিলি আইনের চোখে
কতই বা বয়স তখন তোর,ষোল
বা বড়জোর সতেরোর দোর-গোড়ায়।
                      (চলবে)