(ক)
বিদেশ থেকে কটাই মিয়া অনেক বছর পরে
এলেন বাড়ি করিয়া বিয়া বউ তুলতে  ঘরে।
সোনাদানা সবই আনেন টাকা পয়সা সাথে
ইচ্ছেটাকে জানিয়ে দিলেন বাড়ি আসার রাতে।


পরের দিনই কটাই মিয়ার বাবার আহবানে
ঘটক এলো দশ বারোজন দাঁতগুলো লাল পানে।
সবার হাতেই কনের ছবি নাম ঠিকানা দিয়ে
থাকবে সুখে এখান থেকেই করলে কটাই বিয়ে।


চান্দের রাণী, বনের পরী , নায়িকাদের মত
টল ফিগারের লম্বা চওড়া কনে আছে শত।
কনের বাপের টাকা পয়সার নাই অনটন অভাব
উচ্চ বংশ মান মর্যাদা, ভাল চরিত্র স্বভাব।


একে একে ছবি দেখে কটাই মিয়া ভাবে
কোনটা রেখে, কোনটা ধরে কোনদিকে সে যাবে।
সব ছবিরই কনেগুলো ধরছে তাহার মনে
মনের ভেতর ধন্ধ দিধা ঘর বাঁধে কার সনে।


সব জড়তা কাটিয়ে উঠে কটাই মিয়া বলে
ঐ ছবিটার মেয়ের সাথে বিয়ে হলেই চলে।
মেয়েটা বেশ দেখতে ভালো গায়ের রংও সাদা
তাহার সাথে বিয়ের কথা পাকাও ঘটক দাদা।


ঘটক ফিরে কনের বাড়ি হাসিখুশি মুখে
হইলে বিয়া ঐ বাড়িতে মেয়ে থাকবে সুখে।
জামাই বেটা বিদেশ থাকে টাকা পয়সা আছে
মহা সুখে থাকবে মেয়ে,থাকবে ভাতে মাছে।


দুই পরিবার হইলো রাজি সম্বন্ধটা হবে
লেনাদেনা ঠিক হইলে বিয়ে হইবে তবে।
চিনি পানের বৈঠক বসে কনের বাপের বাড়ি
মহিলারাও খিড়কির ধারে পাতায় কানের আড়ি।


সবার আগে কথা উঠে মোহরানা নিয়ে
দশ লাখ টাকায় বড় মেয়ের দিচ্ছি আমি বিয়ে।
মেঝ মেয়ের বিয়ে দিলাম বারো লক্ষ টাকায়
ছোট মেয়ের পন্ রো লক্ষ, কনের বাবা হাকায়।


বিশ ভরি সোনার সাথে মোহর চৌদ্দ লাখে
বিয়ের কথা হইলো পাকা,বরের বাপে হাকে;
মেয়ের সাথে হোন্ডা দিবেন,ফিরিজ,টিভি পিন
খাট পালং পাঠিয়ে দিবেন বিয়ের আগের দিন।


বিয়ের দিনে ছেলের সাথে আসবে হাজার জনে
মানুষ দেখে বিয়াই সাহেব কষ্ট না নেন মনে।
গরুর সাথে ছাগলের গোস্ত, মুরোগের রোস্ট ও দই
কোকাকোলা, পেপসি রাখার কথা আগে কই।


(খ)
চৌদ্দ লাখে হচ্ছে বিয়া গাও গেরামে ছড়ায়
এমন বিয়া হয় কয়খান মানুষ বলে বেড়ায়।
এত টাকা মোহরানা কেমনে কটাই দিবি?
কেমনে হবে বিয়ের বাজার,বর যাত্রা নিবি?


বন্ধু জনের এমন কথায় কটাই হেসে উঠে
লক্ষ টাকার মোহর হলেও দেয় কতজন মোটে?
মোহর নিয়ে নাই চিন্তা হয় না আগে দিতে
বিশ লক্ষ হলেও মোহর আসবে কি কেউ নিতে?


মোহর হল সিকিউরিটি মেয়ের জীবন ভর
দিতে হবে চৌদ্দ লক্ষ হইলে জামাই পর।
ঢেঁকুর তুলেন কনের বাবা,কনের মা ও খুশ
বড় ঘরে যাচ্ছে মেয়ে মনের মাঝে জুস।


কটাইর মনে সুখ বারতা সুন্দরী বউ পেয়ে
সুখেই যাবে আগামীর দিন,যাবে হেসে গেয়ে।
কটাইর বাবাও কম খুশি নন,বেয়াই নামী দামী
কটাইর মায়ের খুশির খবর জানেন অন্তর্যামী।


বাজার সেরা দামী কার্ডে বিয়ের দাওয়াত শুরু
আসবে সবে দলে দলে,আসবে গেরাম পুরো।
গায়ে হলুদ পার্টি আছে গান বাজনার তালে
লাগাও হলুদ সবাই মিলে বর- কনেরই গালে।


ঢলাঢলি মলামলি ধুম ধাড়াক্কা গানে
বিয়ের দিনে খুশির জোয়ার বাজে সকল প্রাণে।
মন্ত্রী এমপি সবাই আসেন, আসেন কর্তা বড়
সবাই ভাবেন বিয়েটা ভাই হচ্ছে খুবই ধঢ়।


লক্ষ টাকার গেইট বাধা হয়,মঞ্চ হরেক ফুলে
ঝলমলানো বিজলিবাতি আকাশ সমান ঝুলে।
ভিডিও করে ধরে রাখেন ভবিষ্যতের স্মৃতি
বেহায়াপনার এই সমাজে আজকে এসব রীতি।


কমিউনিটি সেন্টার কিবা নাম করা কোন্ হলে
হয় আয়োজন প্রীতিভোজের,অনেক টাকার বলে।
খাওয়ার জন্য লাইন ধরে সব,দাঁড়ায় চেয়ারের পিছ
যায় না কারো মান সম্মান,হয় না কেহ নিচ।


জোয়ান-বুড়া,পোলা-মাইয়া,সেলফি তুলেন সবে
ইমাম, হুজুর, কলেজের স্যার সবাই মজেন ভবে।
গায়ে হলুদ,বিয়ের দিনে কনের অতি কাছে
যায় দাঁড়ানো শরির ঘেসে,কেউ বলে না পাছে।


এমন করে বিয়ের মত হালাল সিদ্ধ কাজে
যোগ করা হয় হারাম কত,শত রকম বাজে।
লক্ষ টাকার ছড়াছড়ি মোহর থাকে বাকি
এসব দেখে কইনা কথা চোখ বুজে সব থাকি।