সুমন, কবে এসেছিস।
আমার গাঁ'য়ের খবর টা বল্।
আমার মা কেমন আছে রে সুমন,কেমন আছে আমার গাঁ'য়ের মানুষ।
সোজা সরল মানুষগুলো কত আপন; মনে হলে চোখ ভিজে যায়।


শুনেছি,হাটবন্দের বিস্তীর্ণ জমির হাট এখন আর নেই,
এখন আর সারিবদ্ধ হালের চাষ চোখে পড়ে না
কচি ধানের চারার প্লাবিত সবুজ
কিংবা পাখনা ধানের মৌ-মৌ গন্ধ এখন আর নেই,
হাটবন্দের হাটে গরুর পাল নেই, নেই কারো বাড়িতেও
ধানের ঘোলা,গোয়াল ঘর ছোটরা চিনেই না।
বিরনী চালের চুংগা পিঠার জন্য আগের মত সেই ব্যস্ততাও নেই।
শীতের পিঠা বাজার থেকেই নাকি কিনে খায় সবাই।


এখন সেথায় ইটের বাড়ি তৈরি হয়েছে
দুরের মানুষেরা নাকি এই গাঁ'য়েই ঘর বাধছে,
কেউবা বাড়ি ভাড়া দিয়ে পয়সা কামাচ্ছে।
গাঁ'য়ের ছেলেরা ফুটবল,ক্রিকেট, হা-ডু-ডু-ডু, গোল্লাছুট খেলে কোথায়?
সজলদা'র বাড়ির কাছের উঁচু জমিতে সেই কবে দালান উঠেছে।
এখন কি ছেলেরা ক্রিকেটের স্টাম্প বানানোর জন্য পাহাড়ে ছুটে যায়?
সেদিন আমরা পাঁচ জনের এক গ্রুপ গিয়েছিলাম পাহাড়ে
দেখে দেখে কয়েকটা লাটি নিয়ে এসে স্টাম্প এবং ব্যাট বানিয়েছি,
ক্রিকেট খেলাটা মনে হয় আমাদের সময়ই গাঁ'য়ে গাঁ'য়ে ছড়িয়েছে।


এখনো কি কারো বাড়িতে রাতের আধারে বিচার মজলিস বসে?
এখনো কি বাড়িতে বাড়িতে মিলাদের আয়োজন হয়,
যেথায় সুর করে আল্লাহর নামে জিকির আজকার হত।
ছফিনা খতমের সেই রেওয়াজ কি এখনো আছে?
পুথি গানের আসর তো এখন আর নেই'ই,
ছয়ফুল মুল্লুক আর ফাতিমা- কুলছুমার কাহিনী শুনে মানুষের সে কি কান্না।
জারী-সারী আর মারিফতি, সে তো কবে হারিয়েছে।
এখন নাকি লাউড স্পিকারে ছেলেরা হিন্দি গানের তালে তালে নাচে।


সুমন, পাগলা আছদ্দর মামু কি এখনো আছেন, নাকি মরে গেছেন।
কত সিগারেট যে খেতে পারত মানুষটা।
খড়ের ঘরে রাত কাটাত, ম্যাচের কাঠি দিয়ে একটার পর একটা সিগারেট ধরাত
কিন্তু, কারো খড়ের ঘর কোনদিন আগুনে পুড়েনি।
রানা পাগলা কি এখনো রেল লাইন ধরে হাটে?
নাকি সেও মরে গেছে।
দরগাবাজারের এখলাছ মামু,যাকে অনেকেই পীর ভাবতো
সে ত মরে গেছে কারো ফেসবুকে দেখলাম।
শুধু মনে হয় বেচে আছে ট্রাফিক হান্নান পাগলা।
আরো কত পাগলের হয়ত জন্ম হয়েছে এখন।


বাজারের বড় মসজিদের ক্বারিসাব কি এখনো আগের মত করে
নামাজে তেলাওয়াত করতে পারেন,
নাকি বয়সের ভারে তিনি ন্যুজ?
ডাকবাংলা মসজিদের হুজুর শুনলাম, প্যারালাইজড হয়ে মসজিদ ছেড়েছেন।
তাঁর খবর কি কেউ রাখে?
কে রাখবে?
হুজুরের নেওয়ার মামু, দারোগা সাব, রজাক মামু তারা ত মরে গেছে।
এক্রাম আলী দাদা কিংবা আরব আলী চাচা তারা ত কত আগেই মরেছে।
হুজুরের দরদবন্দ মানুষগুলো যে এই দুনিয়ায় নেই।


ডাকবাংলার কাঁটালচাঁপার গাছটা এখনো কি আছে?
যখম চাঁপা ফুটত, পুরো ডাকবাংলা জুড়ে একটা চাপা সুগন্ধি ছড়াত।
অনেকগুলো অলস বিকাল- সন্ধ্যা ডাকবাংলার সিঁড়িতে বসে কাঠিয়েছি।
মসজিদ থেকে হাইয়্যা আলাছ ছলাহ শুনেই উঠে যেতাম,
নামাজ কালাম পড়ে ঘরে ফিরতাম।
ডাকবাংলায় বসে সময় কাটানো মানুষগুলো সবাই এখন নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত।
এখনো কি ওখানে আড্ডা বসেরে সুমন?
শুনেছি, এখন নাকি সিগারেট আর গাঞ্জার আড্ডা বসে!
বসবেই ত, ছোট বড় বাছ বিচার এখন ত উঠেই গেছে।


বড়লেখা বাজারে এখন কি আর আগের মত মিছিল মিটিং হয়রে সুমন।
এক একটা মিছিল কত বড় বড়।
কেউ শ্লোগান ধরত জয় বাংলা বলে, কেউ জিয়ার সৈনিক বলে
আবার কেউ নারায়ে তাকবীর-আল্লাহু আকবর বলে।
সবাই যার যার মত করে নিজের শ্লোগান দিতে দিতে পাশ কেটে চলে যেত
মিছিলের আওয়াজ বড় করার একটা প্রতিযোগিতা ছিলো
কদাচিৎ ঠেলা-ধাক্কাও হত।
মারামারি লাগার আগেই নেতারা সমাধান করে দিতেন।
এখন ত মিছিল সংকুচিত হয়ে এসেছে।
সবাই আগের মত আর মিছিল দিতে পারে না,
নেতারাও নাকি চরিত্র পাল্টিয়েছেন।


বাদ দে রাজনীতির কথা।
বল্, এলাকার মানুষগুলো কেমন আছে।