(পল্লি কবি জসিম উদ্দিনের "কবর" কবিতার আদলে, ভিন্ন অনুভুতির কবিতা।)


ওইখানে মোর দাদার কবর মাঝখানে মোর বাবার
বাবার কাছেই শুয়ে আছে মা, মা'র কাছে দিস আমার।
অনেক বছর আগে দাদার, দাদি মরেছে তাই
দাদার কাছে বাবা মা আছে, দাদির কবর নাই।


একটা সময় দাদায় ছিল বয়সের শেষ কালে
আগলে রাখে পরিবারখানি মায়া মমতার জালে।
ছায়া হয়ে ছিল সকলের মাথায় বট বৃক্ষের মত
মনের জোরেই তাড়িয়ে দিত ঝড় ঝাপটা যত।


দেখিতাম বাবা, দাদার কাছেই সব বলিত খুলে
দাদাই দিত প্রাণশক্তি,দাওয়াই সমস্যার মূলে।
বাতিয়ে দিত চলার পথটি মুখ গম্ভির করে
জায়নামাজে করিত দোয়া তাঁর মন-প্রাণ ভরে।


বসিত শালিস উঠোন জুড়ে গ্রাম্য অপরাধে
বিচারের ভার পড়িত এসে আমার দাদার কাঁধে।
মনযোগ দিয়ে শোনিত কথা বিবাদী কিবা বাদী
জানিয়ে দিত বিচারের শেষে কে সে অপরাধী।


কেউ হইত খুশি আবার কারো মুখ হইত কালো
ধারি ত না ধার দাদায় কভু কার মুখে নেই আলো।
গ্রামের মানুষ হইত খুশি জোয়ান বুড়ো সবে
মাতিত পাড়া বিচারে দাদার গুনকির্তন রবে।


ওয়াক্ত হলেই ছুটিতেন দাদা হয় নি তখনো আজান
প্রথম কাতারে বসিয়া জপিত আল্লাহর জয়গান।
কখনো আবার আজানের ভার তার কাধে এসে পড়ে
কল্যানের দিকে আহবান ছিল দারুন আবেগী সুরে।


একদিন দাদা পড়িল বিমারে বিছানায় হইল কাত
সেই দিন থেকে বন্ধ হইল হাটা চলা সব মাত।
বাড়িয়া চলিল বিমারের গতি দুনিয়ার চিকিৎসা শেষে
হয়েছে সময় চলিয়া যাওয়ার ডাক্তার বলিল এসে।


আকাশের পানে চাহিয়া কহিল ওগো আল্লাহ মেহেরবান
ক্ষমা কর মোর জীবনের গোনাহ তার পরে লও জান।
কাতর সরে জিহবা নাড়িয়া দাদায় মুদিল চোখ
সারা ঘরবাড়ি কাঁদিয়া উঠিল চাপড়ে সকলের বুক।


মরনের খবর শোনিয়া দাদার গ্রাম্য মানুষের ঢল
বাড়িতে আসিয়া উপছে পড়িল চোখ যে ছলছল।
কার কী কাজে লাগিছে দাদা,কার কতটা আপন
বলিল সবে দাদাই সকলের ছিল নাকি প্রিয়জন।


হুজুর আসিলেন মসজিদ হতে মুয়াজ্জিনও সাথে
শেষ নাওয়াটা নাইয়ে দিলেন তাদের পবিত্র হাতে।
আতর সুগন্ধি লাগিয়ে দিলেন মুখে কালিমা জপে
সাদা কাপড়টা পরায়ে দিলেন আল্লাহর নামে শপে।


পালকিতে তুলে দাদার দেহ ছুটিয়া চলিলেন সবে
গুনগুনিয়ে উঠে সব মুখ আল্লাহর সাক্ষ্য রবে।
মাটির ভেতরে শুইয়ে তাঁকে উপরেও ঢালেন মাটি
সেদিন থেকে কবর হইল দাদার আসল ভাঠি।


দাদার মত একদিন দেখি বাবাও গেলেন চলে
মা ও গেলেন অপারের দেশে আমায় কিছু না বলে।
এখন আমি প্রস্তুতি লই, যাওয়ার সময় হলো
মা'য়ের কাছে কবর দেবে মোর বলো খোকা বলো।


আমার কথা শোনিয়া খোকা ফ্যালফ্যালিয়ে তাকায়
মনে মনে সে ভাবছে বুঝি বলছে কী সব বাবায়!
কার যে কখন ডাক আসিবে কে সে যাবে আগে
কেউ জানে না এক দুই তিন সিরিয়াল কার ভাগে?