আষাঢ় মাসের শেষের দিকে, বৃষ্টি ভীষণ ভারী,
গোয়ালে সেদিন ফিরেছে বলদ,ছিঁড়িয়া হালের দড়ি।
দমকা বাতাশে দড়াস করে,খসিয়া পড়িল তাল,
থরে-বিথরে পানিতে ভরা,পুকুর নদী খাল।
বুঝিনি সেদিন কালো কাক কেন,বসেছিল ঝিঙে মাঁচায়,
ময়না পাখি ছটফট কেন,করছিল আপন খাঁচায়।
বৃষ্টি ভারী ঝাপসা ভীষণ, দূরের পাড়ের গাঁও,
সহসা দেখি ঘাটেতে ভিরেছে, রহীম মাঝির নাও।
উঠানে দাড়াঁইয়া ছাড়িল হাঁক, হাতেতে বাঁশের লগি।
জিরানোর সময় বাকী নাই হাতে, তাড়া যে ফেরার লাগি।
বাজানের নাকি বুকেতে ব্যাথা, দেখিতে চাহে মোরে,
এক কাপড়েই ছুটিলাম সবাই, খিড়কি বন্ধ করে।
মনেতে সেদিন আসেনাই তুব, এমন করুণ ছলা,
সোজা কথাটাও বলিতে কেন, ধরিল মাঝির গলা।
কেঁদেছে আকাশ, কেঁদেছে মাটি, কেঁদেছে পূবালী হাওয়া,
কলিজার টুকরা একলা রাখিয়া, অকালে চলে যাওয়া।
জানিনা কেমন মায়ের ছবি, শুনিনাই মুখে কথা।
বাজানের মোর বুলাইয়া রাখিছে, শূন্য মায়ের ব্যাথা।
নিজের হাতে খাওয়ায়েছে ঠোঁটে, বাঁধিয়া দিয়েছে বেনি।
কাঁদিলে মানে, নিজে হয়ে গোড়া, বেটি তাঁর মহারাণী।
মেঝেতে কেমন রয়েছে পরে, সোনা মাখা হাসি মুখ,
পৃথিবী ফাটাইয়া কাঁদিলেও কি সেদিন, হালকা হইত বুক।
বাজান ছিল মোর সহজ সরল, কাঁদা-মাটি দিয়ে গড়া,
সবাই যে তার আত্মার আত্মীয়, এ পাড়া ও পাড়া।
আমার শত গল্প কত, পরতে-পরতে তার ব্যাথা।
শোনাই তোকে আমার যত পুরানো দিনের কথা।
বুড়ো মানুষ, পুরানো বাসন মাঝেনা যে প্রতি ভোরে,
কে জানে খোঁজ একলা থাকার ব্যাথা কত এক ঘরে।
হাসনে হেনার শাখার তলে, যুগতে তারা শোয়া।
দাদির গল্পের ভক্ত শ্রোতার কাম্য বলতে দোয়া।
চলবে...