পিঁপড়ার বুকে লুকানো একটি স্বপ্ন-


আমি তোমাকে ভালোবাসি, প্রণয়িনী।
দেশকে আমি ভালোবাসি।
তুমিই আমার দেশ,
দেশই তো আমার প্রেমিকা।


ওরা আমায় আটকে রেখেছে শিকের আড়ালে।
সেদিন ফিসফিস করছিল দু'জন পশু,
মাথায় লোহার ভারি টুপি— মরচে ধরা।
আমায় ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলাবে নাকি
বুটের লাথিতে মারবে তা নিয়ে সল্লা পরামর্শ হচ্ছিল।
ওসব নিয়ে আমার মাথাব্যাথা নেই,
তুমিই তো মাথায় হাত বুলিয়ে সাহস দিয়েছিলে।
তোমার স্পর্শে পাওয়া এই সাহস ভেঙে দেওয়া অত সোজা না।


বুঝলে! ওরা আমায় একবেলা খেতে দেয়,
এই শিকের ঘরে আমার মন পড়ে থাকতে চায় না।
বারবার আমি ফিরে যেতে চাই তোমার কোলে,
বারবার আমি ফিরে যেতে চাই আমার দেশের বুকে।


এই বদ্ধ ঘরের তালা খুলবে কবে?
বন্দুক হাতে আবার কখন শত্রুকে নিশ্চিহ্ন করব?
আমি একটা মানুষ ও মারিনি, বিশ্বাস করো প্রিয়তমা।
যাদেরকে মেরেছি ওরা একেকটা হিংস্র জানোয়ার।


এই শ্মশানঘাট পেরিয়ে একদিন আমি ফিরে যাব তোমার কাছে,
এই কবরের সারি একদিন কৃষ্ণচূড়ার ডালে ডালে গেঁথে যাবে।
হায়েনার আস্তানা পুড়িয়ে একদিন বানাব স্বপ্নের বাতিঘর।
অরণ্য হতে বেরিয়ে এসে একদিন লোকালয়ে তোমায় ভালোবাসব।


ভীষণ জ্বর আজ। ওরা ঠিক করেছে আমার ফাঁসি দিবে;
মৃত্যুর পূর্বে আমি আমার দেশকে একটিবার দেখার আকুতি জানিয়েছিলাম,
আমার প্রিয়তমাকে চোখভরে দেখতে চেয়েছিলাম।
পাইনি দেখা— তবুও হারিনি আমি।
জেলখানার ভাঙা শিক দিয়ে শেষ করে দিয়েছি নিজেকে,
তাও মরিনি ওই পশুদের কাছে— যারা বহুপুরুষ ধরে এই দেশ, এই মাটির শত্রু।