আবার একটা সুস্থ পৃথিবীর আশায় নিঃশ্বাস ফেলে
যাচ্ছি। চীনের হুবেই প্রদেশ হতে রোম-বার্লিন হয়ে
স্পেনেই, ফ্রাঞ্চ, আমেরিকা কাঁপালো কোভিড-১৯।
ইউরোপের মত সমৃদ্ধ অঞ্চল যেখানে অবশেষে
ক্লান্তি জড়ানো ভয়ার্থ কন্ঠে বলছে আর কিইবা
করার আছে? আমরা অসহায়, এখন যা কিছু হবে
উপর হতে নিয়ন্ত্রিত হবে, বাঁচতে হলে একটাই কাজ
সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা আর কোয়ারেন্টাইন।


তারা লড়ছে সব জেনে মেনে, যা কিছু আছে তার
সর্বস্ব দিয়ে। আর আমাদের সতর্ক করা হয়েছিল।
বলা হয়েছিল বারবার সময় থাকতে সামধান হতে।
হইনি, আমরা বাঙালিরা কিছু পরখ না করে মেনে
নিইনা। এখনো নিইনি। বিদেশ ফেরত প্রবাসীদের
বলা হলো নিজের ও পরিবার তথা জাতির স্বার্থে
কিছু নিয়ম মেনে চলতে, চলাফেরা সীমিত করতে।
এ যেন বড় অপরাধ হয়ে গেল! রেমিটেন্সের যোদ্ধা
বলে কথা! এমন হেনস্তা তাদের গায়ে সয়বে কেন?
হলো প্রতিবাদ, এতে প্রশাশনেরও কিছু সীমাবদ্ধতা
ছিল, তাই বলে তারা এত অকল্পনীয় উদোমাদা হবে?
ভাবা যায়না! তাই হলো! তারা অবশেষে ছড়িয়ে দিল
সারা বাংলাদেশ। দোষ চাপাচ্ছি? আপাতত তাই
ভেবে নেন। যদিও আজো মনে হচ্ছে নিয়ন্ত্রিত,
তবে যেভাবে সংক্রমণ বাড়ছে তা আতংকের।


তবুও এ জাতি না খেতে পেয়ে মরার ভয়ে চৌদ্দ
হতে তিরিশ দিন লগডাউন আর সামাজিক দূরত্ব
বজায়ে রাখতে পারলনা। সরকার হতে তহবিল
নিয়েও লোকসানের ভয়ে চালু হয়ে গোল বৃহত্ততর
শিল্পকারখানা-গার্মেন্টস! খর্গ নেমে এলো নিম্নবিত্ত
মজুর-শ্রমিক আর মধ্যবিত্ত চাকুরিজীবির উপার।
সবাই দলে দলে বের হলো, তবুও চেষ্টা অব্যাহত
থাকলো সংক্রম রোধের। সরকার আবার অনুদান
দিল, বলা হলো ঘরে থাকুন, বেঁচে থাকুন।
কিন্তু কে শোনে কার কথা? জীবিকার তাগিদ
দেখিয়ে এ জাতি গুটিয়ে থাকেনি ভাবছেন হয়তো!
প্রথম চৌদ্দ-ত্রিশ দিনে মানুষ না খেতে পেয়ে মরে
দেশ গোরস্থান বানিয়ে ছাড়ত, পাগলের প্রলাপ।
আর সত্যি বলতে প্রয়োজনীয়তার সংজ্ঞা না জানা
জাতিকে মসজিদ আর কর্মস্থল হতে দূরে রাখা
কিছুটা সম্ভব হলেও ঈদের শপিং হতে সম্ভব যায়নি।


এরা এর মধ্যে লাঠি যুদ্ধে যোগ দিল, ত্রাণ লুট করল,
চায়ের আড্ডা জমালো প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে-
অনেকে ঘর হতে বের হয়েছে লকডাউন দেখতে!
এখন ঈদ আসছে বলে কেনাকাটায় ব্যস্ত সবাই!!
এরাই নাকি অর্থের অভাবে না খেতেপেয়ে মারা যায়!
ইতিহাস বলছে স্পেসনিস-ফ্লুতে আক্রান্ত হয়েছিল
সারা বিশ্বের পঞ্চাশ কোটি মানুষ! মৃত্যু দশকোটির
অধিক হলেও মনে হতে পারে সিংহভাগ বেঁচেই গেল!
হ্যাঁ যদি এই মহামারি হতেও বেঁচে যাই তবে কোন
একদিন কলম হাতে লিখব বীরত্বগাঁথা, বীরদের
গল্প, বলব কিভাবে মূর্খ একটি জাতিকে বাঁচাল।
শুনুন গত পরশু বিদেশের মাটিতে আমার পাড়াত
এক চাচা মারা গেছেন কোভিড-১৯এ। তাঁর পরিবারে
এখন তাঁর বউ, একটি মেয়ে একটি ছেলের সংসার।
দু মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে এরা সর্বমোট ছয় জন।
একমাত্র উপর্জনকারী মানুষটির লাশও পরিবার
পাইনি, বলুন তো তাদের কি হবে আগামীতে?
সংখ্যাটা দেখাচ্ছে কিন্তু ছয় জনের একজন!
ভাবছেন? ভাবুন! আরও অনেক উদাহর গল্প হয়েছে।
শুনে নেন, না একদিন আবার আপনিও গল্প হোন!


ফটিকছড়ি-১৭.০৫.২০২০
০৩জৈষ্ঠ্য১৪২৭ বঙ্গাব্দ।