সময়টা যদিও হেমন্তকাল,
কয়েকদিন ধরে খুব বৃষ্টি হয়েছে গ্রামে।
খালের জলে ব্যাঙেদের ডাকাডাকি,
আর ঝিঁঝিঁরাও তাল মিলিয়েছে তাতে।
প্রকৃতি যেন জলসা বসিয়েছে ধিতিঙ্গার মাঠে।
জোনাকিদের উপর ভার পড়েছে আলোকসজ্জার,
তারারা নীরব শ্রোতা হয়ে, উঁকি মারছে আকাশে।
কাঠের সাঁকোয় আমরা দুই বন্ধু বসে,
মায়াবী রাতের সেই জলসার সাক্ষী হয়ে।
ধানের ক্ষেতে যত দূর দৃষ্টি যায়-
দেখি ঘোলাটে কুয়াশা নেমে এসেছে কালো মাঠের পরে।
একটা দমকা হাওয়া এসে ফিসফিসিয়ে বলল
চোখের পলক ফেলতে,
নিমেষে যেন পৌঁছে গেলাম অচেনা এক দেশে।
গ্রাম বাংলা থেকে অনেক দূরে কোনও সাগরতীরে,
হয়তোবা অন্য কোনও যুগে ।
যেখানে অমাবস্যার রাতে কুয়াশাঘেরা সমুদ্রের জল  
অস্বাভাবিক ভাবে স্থির,
যেখানে পাহাড়ি জঙ্গল মিশে গেছে সাদা বালির তটে।
দেখি দুই ক্লান্ত ঘোড়সওয়ারী নামলো এসে,
জ্বালল আগুন, ফেলল তাঁবু, রাতটা কাটাবে বলে।
বালির শয্যায় শুয়ে, কি যেন ভাবছে তারা-
আকাশের দিকে চেয়ে।
নিস্তব্ধতা ভেদ করে হঠাৎ শেয়ালের ডাক,
চমকে উঠে দেখি, বসে আছি গ্রামেরই সেই সাঁকোর উপরে।
আবার এক দমকা হাওয়া এসে বলে গেল,
শুধু আমরা দুজনেই নই , যুগে-যুগে, দেশে-দেশে ,
অনেকেই এভাবে এসেছে প্রকৃতির জলসাঘরে,
কিন্তু মনে রাখেনি কেউ।
হাজার হাজার বছর ধরে পরম স্নেহে জীবন কে আঁকড়ে রেখেছে যে,
মানুষ স্বার্থপরের মত ধ্বংস করছে সেই প্রকৃতিকেই ,
মেরে ফেলেছে তার কোটি কোটি অবলা সন্তানকে ।
অভাগা মায়ের কান্না যেন দু ফোঁটা বৃষ্টি হয়ে
ঝরে পড়লো আমাদের গালে।
একরাশ কষ্ট আর অনুতাপ নিয়ে ফিরে এলাম ঘরে,
শিক্ষিত অথচ জ্ঞ্যানশূন্য মানবজাতির এক লজ্জিত অংশ রূপে।