‘একটু অকৃত্রিম হাসি কিনতে চাই’
আজব এ বিজ্ঞাপন দেখে কে না হাসবে।
পত্রিকার পাতায় এমনি এক বিজ্ঞাপন দেখে-
কেও চাইল লাখ টাকা, কেও আরো বেশি,
কেও রাজী হলো-রাতের আঁধারে অল্প কিছু টাকার বিনিময়ে!
অকৃত্রিম সে হাসি কিনতে গিয়ে-
ঘুরেছি কত শহর, বন্দর, কথিত সভ্যতার যত অলিগলি,
যেখানে ‘হাসি’দের আড্ডা বসে যখন তখন।
আজও আমি পাইনি খুঁজে ‘মোনালিসার হাসি’,
যে হাসির মাঝে একজন শিল্পী ‘মহাসুখ’ পেয়েছিল খুঁজে।
‘হাসি’রা সব হেসে যায়, বিনিময়ে নিয়ে যায় কিছু ,
আমার তুলির রং শুকিয়ে যায়, হয় না কিছুই আঁকা।
এক প্রস্থ প্রসাধনীর আস্তরে সব হাসি ঢেকে আছে যেন,
শত চেষ্টায়ও পাওয়া যায়নি হৃদয় নিংড়ানো একটু অকৃত্রিম হাসি।
সব হাসিমুখ হারিয়ে গেছে নকল আভিজাত্যের আড়ালে,
যেটুকু পাই তাও আঁকতে গিয়ে তৃপ্তি পাইনি মনে।
অবশেষে পদ্মা, মেঘনা, মধুমতি আর ডাকাতিয়ার তীর বেয়ে,
চলে এলাম চির সবুজ বনানী ঘেরা বাংলা মায়ের কোলে।
এখানে ‘হাসি’রা মূল্য নিয়ে হাসে না,
বিনিময়ে চায় শুধু কারো একটু অকৃত্রিম ভালোবাসা।
এখানে কৃষক, মজুর, পল্লীবধূ আর প্রাণোচ্ছল কিশোরীরা হাসে,
সে যেন সবুজ শ্যামল প্রকৃতির মন ভুলানো হাসি।
অথচ তথাকথিত ‘হাসি’দের স্বর্গরাজ্যে কাউকেই দেখলাম না,
এদের মতো এতো টা প্রাণ খুলে হাসতে।
আমার জানা ছিলনা একজন শিল্পীর জন্য,
অজস্র হাসি জমানো আছে লাল-সবুজের অনাবৃত বুকে!
এখানে রাতের আকাশে রূপালী চাঁদ হাসে,
হাসে সোনা ফলানো দিগন্তব্যাপী ফসলের ক্ষেত।
টোল খাওয়া গালে কিশোরী হাসে,
হাসে লজ্জায় আধো ঘোমটায় ঢাকা মুখে কৃষকের বউ।
তুলির আছঁড়ে ক্যানভাসে তুলে আনা এমনি কিছু হাসি,
আর্ট গ্যালারীতে যখন প্রদর্শিত হলো, তখন পড়ে গেল তুমুল হৈ চৈ।
এদেশের আনাচে কানাচে শত শত ‘মোনালিসা’ এখনো  যে আছে,
তা দেখে শিল্প বুদ্ধাদের সাথে কৃত্রিম ভাব দেখানো ‘হাসি’রাও হাসে।
যারা নাকি শত চেষ্টা করেও একটু অকৃত্রিম হাসি হাসতে পারে না,  
তারাই আবার কিনে নিলো লাখ টাকায় সে সব হাসিমাখা মুখের ছবি।
আভিজাত্যের মিথ্যে অহমিকা আর অর্থের কাছে হাসি পেলো ঠাঁই,
বাড়াতে করো ড্রয়িং রুমের শোভা কিংবা শিল্পী মনের মেকি ভাবনাটা!
‘আসল’ আর ‘নকল’ হাসি আজ মিলেমিশে যখন একাকার!
আর্ট গ্যালারীর এক কোনে মেঝেতে তখনও ভাবছি বসে নির্বিকার।
মনি, মুক্তা, হীরা জহরত চিনে না যেমন সর্বজন,  
শিল্পের কদর বুজে না শিল্পী, বুজে গেল যেন যত সব দুর্জন!