লালনিয়া, প্রেমের দেবী আমার, সাধিকা সই।
ফুলের কলি হয়ে আছো দূরে, কোন কাননে?
যুবক কবি'র আকুতি একটু শোনো-
ভালোবেসে, শেখাও- জীবনের সহজ পাঠ!
কলি থেকে ফুল হয়ে ফোটো!
শোনো, “পারে লয়ে যাওয়ার আকুতি আমার!”
একলা ঘাটে বসে থাকার কষ্টটুকু বোঝো।


লালনিয়া, প্রশান্তির প্রতিমা আমার,
গন্তব্য আমার তোমার কাছে, তোমারমূখী প্রেমে-
এ যাত্রায় বাধ সেজো না, অবহেলায় যেন না-যায় থেমে।
তোমার অবহেলায়- হই দিকভ্রান্ত,
তোমার ভালোবাসায়- মনমহাসাগর প্রশান্ত!
অশান্ত মনে আমার দাও তোমার শান্ত ছোঁয়া
উত্তাল ঘূর্ণিঝড় থেমে যাক!
থেমে যাক কালো মেঘের দৌরত্ব,
কেটে যাক আঁধারের হুংকার-
তাড়া করে যতো জীবনে আমার!


লালনিয়া, দেখো, আকাশে উঠেছে চাঁদ-
পরিপূর্ণ জোছনাবতী, আমার আরতি
তোমার জন্যে, গ্রহণ করো-
চাঁদের সাথে আরেকটি চাঁদ আঁকড়ে ধরো!
চাঁদের গায়ে লাগুক চাঁদ
আলোয় মিশুক আলো -
পৃথিবী জ্বলুক স্নিগ্ধ প্রেমে!
ভালোবাসার জোছনাধারা বয়ে যাক-
সকলের মনে মনে।
পৃথিবী ভীষণ প্রেমহীন হয়ে পরেছে!
তোমার কি আমার- চুপ থাকা পাপ!
দেখো, চাঁদের টানে সমুদ্র জলে ঢেউ জেগেছে,
নদ-নদীর বুক বেয়ে বেয়ে যেতে চায় সমতলে,
এসো, ধুয়ে ফেলি, মুছে ফেলি- সকল পাপ
সহজিয়া সে শুদ্ধ প্রেমের জলে।
শুনতে চাই- গঙ্গা, যমুনা ও সরস্বতী-
তিন নদীর মোহনায় মিশে যাওয়া-
ছলাৎ ছলাৎ জলের গান-
ত্রিবেনীসংগমে!


লালনিয়া, সূর্যজ্ঞান সমন্বিতা আমার-
দৃশ্যমান দুটো চোখ আছে!
কিন্তু দেখার জন্যে-
তিনটি চোখের প্রয়োজন হয়, আমি জানি।
তৃতীয় চোখের জাগরণে-
তোমার সহৃদয় স্পর্শ চাই আমার।
ছুঁয়ে দাও আমায় ভালোবেসে- দেরি করো না!
যতোক্ষণ দেরি তোমার, ততোক্ষণ অন্ধ আমি!
আমাকে করো তৃতীয় চোখ দান!
দৃষ্টিদর্শন শেখাও-
তিন চোখে দেখার কৌশলে!
লুকায়িত তৃতীয়দৃষ্টির উদয়ে-
‘এই মানুষে সেই মানুষ আছে’
খুঁজতে শেখাও।
চিনতে শেখাও- আপনারে, আপন খবরে।


লালনিয়া, দেখো, সবুজের বুকে-
লেগেছে কাশফুলের নরম ছোঁয়া।
প্রকৃতির বুকে ঢেউ জাগলে প্রেমের -
পুরুষের বুকেও দোলা লাগে তার।
অথচ, শূণ্য বুক আমার!
জানি, প্রকৃতির সাথে তোমার মেলামেশা বেশ-
আমাকে দাও তার একটুখানি আবেশ!
দেখো, নীল আঁকাশে সাদা সাদা সমুদ্রজলের মেঘ
ভেসে যায়- পাহাড়মুখী,
পাহাড়ের বুকে আছরে পরে-
নিজেকে বিলীন করে দেয়,
এমন ক্ষয়ে-
ভালোবাসার স্পর্শ জয়ের সুখ আছে!
আমাকেও তেমন সুখ দাও,
তোমার সাথে মিশে- একাকার হয়ে হই ফানা!
লালনিয়া, শোনো, কে যেন বাজায় বাঁশি-
চলছে অষ্টমী তিথি কৃষ্ণপক্ষের!
আমি বাজাবো বাঁশি কৃষ্ণপ্রেমে-
তুমি সঙ্গত দিও রাধারূপে।
হারিয়ে ফেলি যদি ‘সপ্তসুর’ জনমে জনমে-
তাল ধরিয়ে দাও তুমি পরমের পরমে!
পৃথিবীর বুকে মানবজনমে ভালোবাসার সুর বিতানে-
দূর হোক অসুরের অনাকাঙ্ক্ষিত অগমন- বিনাশী গানে।


লালনিয়া, তুমি হৃদয়ের রাণী আমার-
পরিচালনা করতে পারো তুমি দুর্দান্ত প্রতাপে
মনের সিংহাসন আমার!
কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ ও মাৎসর্য-
আশ্রিত সব শত্রুদল করে দাও নিশ্চিহ্ন।
সহজ শুদ্ধ প্রেম সাধনে-
গড়ে তোলো সেথায় এক সহজিয়া রাজ্য!
প্রাণী থেকে মানুষ করে-
গড়ো আমায় প্রজারূপে- জাত গোত্র ভেদাভেদহীন মনে।
তুমি রাণী, সর্বময়, আমার মনের সিংহাসনে!


‘সময় গেলে সাধন হবে না’
সে চিন্তায় আমার- বাড়ছে উদ্বিগ্নতা!
প্রেম নিবেদন, করো গ্রহণ- আমার লালনিয়া।
তুমিই আমার দীক্ষাগুরু, জীবন সহজিয়া।।