বরযাত্রিও এসে গেল।
সমসাময়িক আমার গন্তব্যও একই মোহনায়।
মেয়েটির কপালে তখন কাঁচা হলুদ মাখা,
সখিগণ মত্ত মেহেদি আলপনায়।
ছোটবড় তিনটি মেঠোঘর,
দক্ষিণ পাশটা উন্মুক্ত।
উঠোনের ঠিক মাঝখানে পাথরের মত নির্বাক আমি।
পাশের গোলাপ গাছটায় দুটি গোলাপ নেতানো,
হয়ত পানি মেলেনি সারাদিন,
আমি স্পষ্ট দেখছি গোবরে ফোটা পদ্মফুলটি,
অথচ ঠায় নির্বাক দন্ডায়মাণ।
সহসা তার অসহায় নির্বাক দৃষ্টির শর,
ছিদ্র করে গেল এ ধমনি,
তথাপি নির্বাক আমি।
যেন ভঙুর এক কাঁচা উঁইঢিবি,
ক্ষীণ আঘাতে পতনপেক্ষা।
ফুফু তো অবাক,
"তুমি এসেছো বাবা "!
নির্বাক, অথচ মস্তক সম্মতি।
মেয়েটির চুলগুলো এলোমেলো,
পরনে সাদাসিধে একটি পোশাক,
তবুও স্পষ্টত ষোড়শিনী যৌবনদীপ্ততা।
অশ্রুর নির্ঝর তখনও প্রবাহতর,
বৃত্তাকার সূর্যটি নুঁয়ে পড়েছে বাঁশঝাড়ে।
পাথর চোখদুটো তখনো অলিক আচ্ছন্নতা,
সত্যিই কি এমনটা ঘটে যাচ্ছে ?
নিরুত্তর প্রশ্ন।
গোধূলির অন্তিম প্রভাটুকু লুটেপুটে খেল বরযাত্রি,
রপ্ত প্রসাদভোজন।
আজ ভাঙাকুলোয় লুটে খাবে পূর্ণশশী ,
অথচ নিস্ক্রিয় নিথর গগণ।
অসীম ব্যস্ততায় পূর্ণ এ নিলয়,
ক্ষণে ক্ষণে কিশোরীদের অট্টহাসি,
শুধু কালবোশাখের কাদম্ব তার বদনে।
কি যন মোহের প্রবল টানে, সকল বাঁধ দুমড়ে মুচকে,
যেন বাঁধন ছেঁড়া উল্কার ন্যায়, অপ্রতিরোধ্য ক্ষিপ্রতায়,
মেয়েটি আচমকা আমার বুকে !
স্তব্ধ হয়ে গেল সব আয়োজন,
অতঃপর, কম্পণরত অধর নিশ্রিত শিকল ভাঙা আর্তনাত,
"আমি যাব না, কোথাও যাব না,
এখানেই আমার সমাধি, এখানেই আমার শেষ ঠিকানা"।
বুকের পাঁজর ভেঙে একে একে বেড়িয়ে এলো,
পিছু ফেলা অজস্র বিষাদ মধু স্মৃতি।