আয় ব্যয়ের পাঁচমিশালি
                  সেলিম রেজা সাগর.....
অসহায়,গরীব ও নিম্নবিত্ত থেকে শুরু করে নিম্ন মধ্যবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত পর্যন্ত মানুষ গুলো বর্তমান খুবই কষ্টে ,মানষিক যন্ত্রণা ও বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে জীবনযাপন করছেন। বিগত এক দশকে যে হারে মানুষের আয় বেড়েছে তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি বেড়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যদ্রব্য ও জীবনযাপনের ব্যয়। মানুষ তার মৌলিক অধিকার মেটাতে সর্বদাই হিমশিম খাচ্ছে। অন্ন,বস্ত্র,বাসস্থান,শিক্ষা ও চিকিৎসা এই পাঁচটি হলো প্রত্যেকটি মানুষের মৌলিক অধিকার। রাষ্ট্রের দ্বায়িত্ব হলো এই অধিকার থেকে যেন কেউ বঞ্চিত না সেটা নিশ্চিত করা । কিন্তু আমাদের পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থার কাছে সাধারণ মানুষ জিম্মি হয়ে আছে। একটি নির্দিষ্ট মহল প্রতিনিয়ত অর্থ সম্পদের বিশাল পাহাড় গড়ছেন অন্যদিকে সাধারণ জনগণ মৌলিক অধিকার মেটাতে নাজেহাল হয়ে যাচ্ছেন।


আপাতদৃষ্টিতে অনেক মানুষকে দেখে হয়তো আপনি ভাবতেই পারেন তারা খুব ভালো অবস্থানে অথবা সুখেই আছে। কিন্তু বাস্তবতা অনেকটা ভিন্ন। সেই বাস্তবতা খুঁজতে হলে আপনাকে ঢুকতে হবে পরিস্থিতির গভীরে। অনুসন্ধান করতে হবে মানুষের কৃত্রিম হাসির অন্তরালে লুকিয়ে থাকা সত্যটাকে। কারণ আমরা চোখে যা দেখি বাস্তবে তা সব সময় সত্যি হয় না। তার একটি নিত্য ঘটিত উদাহরণ দেই। আপনি খেয়াল করলেই দেখবেন, একজন ব্যক্তি দীর্ঘদিন যাবৎ সমাজের কাছে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী অথবা জীবনযাপনে বেশ উচ্চবর্গীয় দেখতে মনে হলেও হঠাৎ শুনবেন সেই ব্যক্তিটি ঋণের দায়ে পালাতক অথবা খুবই করুণ অবস্থায় দিন পাড় করছে।
এর মূল কারণ কী ?
সে হয়তো সমাজের সাথে নিজেকে খাপ খাইয়ে চলতে গিয়ে দিনে দিনে ঋণের সাগরে ডুব দিয়েছেন। কেউ কেউ মান বাঁচাতে না পেরে আত্যহত্যার মতো নির্মম পথও বেছে নিয়ে থাকেন।


আমি দ্বায়িত্ব নিয়ে বলতে পারি এখনো অনেক ব্যবসায়ী পাবেন, যাদের সমস্ত ব্যবসা বাণিজ্য ও স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রি করে দিলেও তার ঋণ শোধ হবে না। কিন্তু আপাত দৃষ্টিতে সে সবার কাছে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী অথবা খুবই অর্থ বিত্তশালী।
আবার অনেকে আছেন পোশাক পরিচ্ছদে ভদ্রলোক কিন্তু হোটেলে গিয়ে খাবার খোঁজে ডাল আর আলুভর্তা।
তখন হোটেলের অর্ডার নিতে আসা ছেলেটি এমনভাবে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে, যেন মনে হয় সে ভুত দেখছে।
মধ্যবিত্তদের জন্য এরকম ভুত সাজা নিত্যদিনের ঘটনা।


আবার ফিরে আসি আয় এবং ব্যয়ের তুলনামূলক আলোচনায়। আমি যে বলছি, গত এক দশকে মানুষের আয়ের চেয়ে ব্যয় বেড়েছে কয়েকগুণ। এখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসতে পারে যে, তাহলে বর্তমান সময়ে মানুষজন পরিবার পরিজন নিয়ে চলছেন কিভাবে?
এবার আসা যাক সেই উত্তরে।
ধরুন, যেই ব্যক্তিটি পরিবারের জন্য সপ্তাহে চার কেজি মাছ কিনতেন, বাস্তবতা হলো ব্যয়ের চাপ সামাল দিতে সে এখন সপ্তাহে দুই কেজি মাছ কিনছেন।
যেই ব্যক্তিটি সপ্তাহে অন্তত একদিন পোলাও মাংস খেতেন, সে এখন মাসে একদিন খাচ্ছেন।
আবার যার মাসে ছয় কেজি পেয়াজ  লাগত এখন সে তিন কেজি দিয়েই মাস পাড় করছেন।
অনুরুপ ভাবে যার মাসে সয়াবিন তেল লাগত পাঁচ লিটার এখন সে দুই লিটারের বেশী কিনতে পারছেন না। আর এভাবেই মানুষজন আয়ের তুলনায় ব্যয়ের চাপ কিছুটা হলেও সামলে নিচ্ছেন।


নিম্নবিত্ত থেকে মধ্যবিত্ত পর্যন্ত মানুষ গুলোর জীবন যুদ্ধ খুবই বিচিত্র, ফ্যাকাসে এবং ধুসর। চোখের রঙিন পর্দা সরিয়ে এবং মনের জানালা খুলে, খুব কাছে থেকে না দেখলে আপনি কিছু বুঝতেই পারবেন না,তাদের ভালো থাকার নিখুঁত মিথ্যে অভিনয়।


ভৈরব, কিশোরগঞ্জ।।
০৬.১০.২২