🌹🌹🌿 নীলার বন্ধু🌿🌹🌹
🥀🥀বেগম সেলিনা খাতুন 🥀🥀


ক্রিং ক্রিং  ক্রিং বেজে উঠে টেলিফোন,
টেলিফোনের শব্দে চমকে উঠে নীলার মন-
আজো বুঝি সেই আবেগ ভরা কন্ঠ,
পাগল করা ফোন।


রিসিভার তুলে ভাবে মনে মনে,
একি হলো জ্বালাতন।
নাকি অচেনা কন্ঠস্বরের অপেক্ষায়
থাকে নীলা সারাক্ষণ ।


ফোনটা কানে তুলতেই,
অপর প্রান্ত থেকে
ভেসে আসলো,
আমি বলছি!
নীলা! তুমি ভালো আছো তো?
নিলাকে কোন কথা বলতে না দিয়ে
কেটে দেয় ফোনটা।


নীলা বিরক্ত হয়, রাগ ও হয়।
আসলে নীলা রাগ করতে পারে না।
ঐ আবেগ ভরা কন্ঠ নিলাকে রাগ করতে দেয়
না।
নীলার হৃদয় চিরে রিম ঝিম বৃষ্টি ঝড়তে থাকলো।


""নীলা"" নামটা নীলার আসল নাম নয়,
টেলিফোনের অচেনা মানুষটার দেওয়া নাম।
নীলা একটা অমূল্য রত্ন, সেতো অনেক দামি।
এই মূল্যবান নাম কার না ভালো লাগে,
নীলার নামটা অনেক ভালো লেগে গেলো ।


নীলা মনে মনে ভাবে এতো আবেগ ভরা কন্ঠে
আগে কখনো কেওতো ডাকেনি মোরে।
নীলার জন্ম-জন্মান্তরের নামটি হারিয়ে যায়,
অচেনা মানুষের দেওয়া নামের ভীরে।


নীলার ভাবনার জগৎ কখন যে অচেনা মানুষটা অধিকার করে নিলো,
বুঝতেই পারলোনা।
কখন যে মন হরণ করলো।


দিন যায় রাত আসে ফোনের অপেক্ষায় থাকে বসে।
এই বুঝি বেজে উঠে টেলিফোন।
এবার কথা শুনাবো ! প্রশ্ন করবো!
জানতে চাইবো পরিচয়।
জানতে চাইলেই কি দিবে পরিচয়?
নীলা আপন মনে ভাবতে থাকে সারাক্ষণ।


হলো বুঝি অপেক্ষার পালা শেষ,
বেজে উঠলো ক্রিং ক্রিং ক্রিং টেলিফোন।
নীলা অভিমান ভরা চোখে,
তাকায় ফোনের দিকে ।
চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়,
লম্বা চুল গুলো দু'হাতে মুড়িয়ে খোপা করে মাথার উপর।


হঠাৎ কেমন আরষ্ঠতা অনুভব করে।
এক সময় বাজতে বাজতে নীরব হয়ে যায় টেলিফোন।
নীলা পানির গ্লাসটা হাতে নিয়ে ঢোক ঢোক করে পান করে নিলো।
ধীর পায়ে ফোনের কাছে এগিয়ে এসে চুপটি করে দাঁড়িয়ে রইলো।


ঝন ঝন ঝন করে বেজে উঠলো টেলিফোন।
বুকটা কেঁপে উঠলো নীলার,
টেলিফোনের শব্দটি যেন সমস্ত শরীর মনে বিদুৎ এর ঝলক লেগে গেলো।


কানে বাজে আবেগ ভরা কন্ঠ,
নীলা ভালো আছো তো?
নীলা ভাবনার পালা শেষ করে রিসিভার তুললো।


অপর প্রান্ত থেকে সেই আবেগ জড়ানো কন্ঠে
শোনালো,
নীলা ! ফোনটা তুলতে এতো দেরি করলে কেন?
তুমি ভালো আছো তো?
রাগান্বিত স্বরে নীলা জবাব দিল,
না ভালো নেই।
কেন ভালো নেই, কি হয়েছে তোমার?


তোমায় কেন বলবো, কি দায় পরেছে আমার।
তুমি আমার শত্রু, ফোন করো যখন তখন,
দাওনা কেন পরিচয়।
তুমি কে? জানতে বড় ইচ্ছে হয়।


আমি তো পুরুষ, তোমার বাড়ীর দক্ষিণ জানালা দিয়ে তাকাও যদি,
দেখবে তোমার অপেক্ষায় বসে থাকি নিরবধি।
তোমার বন্ধু হওয়ার আশায়।


দুর থেকে তোমায় দেখি, আর অনেক অনেক ভালবাসি।
আমার নাম!
সেটা তুমি দাও না!
তোমার দেওয়া নামে হাজার বছর বাঁচি।


নীলা বরফের মতো শক্ত হয়ে থর থর করে কাঁপতে থাকে।
ফোনটা রেখে দিতে চায়, পারেনা!
কোন এক অদৃশ্য শক্তি ওকে ফোন রাখতে বারণ করে ।


নীরবে অচেনা মানুষটার কথা শুনে যায়।
নীলার জীবনে ভালবাসার পাপড়ি ছড়ায়।
আবারো আকুতি ভরা কন্ঠে বলে যায়।
তুমি একটা নাম দাও আমার, সে নামে ডাকো একবার।


নীলার আকাশ ভরা তারা জ্বলে উঠলো।
পূর্ণিমার চাঁদ নীলার সংগী হলো।
নীলা রিসিভারের কাছে মুখটা নিয়ে মৃদু স্বরে বললো, তুমি আমার বন্ধু হবে?
বন্ধু বলেই ডাকবো?