অবশেষে আমার জীবনেও বসন্ত এলো।
অথচ আজও আমার চোখের নীড়ে
হলদে শাড়িপরা পাখিটা এলো না ফিরে!
আজও বুকের আগুনে জাগে নাই কোনো
সুশীতল হাওয়ায় সিক্ত উদাসী ফাগুন–
শুধু সন্ধ্যা হলে মগজের প্রাচীন অন্ধকারে
একটা মোমবাতি জ্বালিয়ে দেয় কেউ!
চিরনিঃসঙ্গ চাঁদটার দিকে পৃথিবী কি কোনোদিনও
পাঠিয়েছিল গুহামানবের মগজ হতে উৎসারিত
আদিম অন্ধকারের ঢেউ?
আমি জানি না!


আমি জানি, বসন্ত এলে
অতি ধুরন্ধর কপট রাজনীতিকও
হয়ে ওঠে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ প্রেমিক!
বলিভিয়ার জঙ্গলে চে গেভারার স্মরণে
ফোটে কিছু বিপ্লবের সুবাস ছড়ানো
শোকগ্রস্ত মুক্তির ফুল!
মুজিব-ফিদেল ওপারের পৃথিবীতে পরামর্শ করে
৭৩ বারের মত সিগারেট ছাড়েন!
আমি জানি, বসন্ত এলে
পৃথিবীর সব ঘড়ির কাঁটা মনে মনে
ফিরে যায় পৌরাণিক প্রেমের নগরীতে!
হেলেনের বুকে দোলা দেয় নিষিদ্ধ মাতাল
পাতাল কাঁপানো আদিম কামনার হাওয়া–
অ্যাকিলিসও বর্শা ছুঁড়ে ফেলে ধরতে চায়
ট্রয়ের সবচেয়ে দুঃখী বিধ্বস্ত কিশোরীটির হাত!


বসন্ত এলে
ময়লা কাগজ ছুঁড়ে ফেলে
পথের পাগলও খোঁজে দু-একটি ফুল!
প্রিয়জনের প্রত্যাশায় বসে থাকা
গ্রামীণ নববধূটিও খুলে ফেলে সোনার দুল
মনে মনে চায়, কেউ তাকে দিক কিছু বকুল কিংবা শিমুল!


বসন্ত এলে
সব পাখিই হতে চায় কোকিল
কৃষ্ণচূড়া হতে চায় নীল
সোনালিমা হতে চায় শ্যামলিমা
'সুরঞ্জনা' হতে চায় 'বনলতা'
'বরুণা' হতে চায় 'নীরা'!


বসন্ত এলে
আমি হতে চাই বরফযুদ্ধ শেষে সোনালি আগুন
তুমি কি হতে চাও আমার প্রাথমিকা অথবা অগ্নিশিখা?
বসন্ত এলে
আমি হতে চাই 'জয় গোস্বামী'
তুমি কি হতে চাও 'মেঘবালিকা'?


জীবনে আর কোনোদিন বসন্ত না এলেও
আমি কবিই হতে চাই শুধু
তুমি কি হবে কবিবধূ?
রাজপথে বছরের পর আগুন জ্বালিয়েও
আমরা শুধু ভেঙেই গেছি–
বাম হাতের অনামিকায় পরস্পরকে আংটি পরিয়ে
এই ফাগুনেই কি তবে আমরা হব দ্বিগুণ?