১.
বৃষ্টিরাতের উষ্ণ ভালোবাসাবাসি
শেষে ঝলমলে সকালের স্নিগ্ধ হাসি—
যেন বৃষ্টির মতন আকাশ হতে ঝরছে
ফোঁটা ফোঁটা রোদ; যেন বৃষ্টির মতন
হৃৎপিণ্ড হতে ঝরছে অবিরাম প্রেম;
সেই মুহূর্তে, ঠিক সেই মুহূর্তে
আমি পকেট থেকে বের করি সিগারেটের
সোনালি প্যাকেট আর একটা কালো গ্যাসলাইটার!


আমি মূলত দুঃখ পোড়ানোর জন্য সিগারেট খাই
আমি মূলত আনন্দে আত্মহারা হয়ে
সিগারেটের মস্তকে আগুন ধরাই; আমি মূলত
তার দেয়া বিষাক্ত ছলনাময়ী স্পর্শগুলি ভুলবার জন্যে
সিগারেটের ফিল্টারে দুই ঠোঁট ছেপে ধরি—
আমি কখনো আশা করি না, আমাকে ঊর্ধ্বাকাশ
হতে এসে তুলে নিবে কোনো নীলপরি
আমার ভালোবাসার প্রবল বৃষ্টিতে
কখনো ঝরবে ঝিকিমিকি ঝরি!


২.
পুড়ে যাবার পরিবর্তে আমি মূলত জ্বলছি—
আমার জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাই করে দিতে মন চায়
সমস্ত সামাজিক খড়কুটো, আমার হাত পুনরায়
মুষ্টিবদ্ধ হচ্ছে, একটা প্রবল আঘাতের জন্য
আমি নিজেকে প্রস্তুত করছি— আমি ভেঙে ফেলব
ক্রন্দন অথবা রক্ত-স্পন্দনের আড়ালে লুকিয়ে থাকা
সমস্ত ছদ্মবেশী আত্মীয়তার বন্ধন!
ঠিক একদিন এক নিমেষেই আমি ধসিয়ে দিব
তোমাদের মিথ্যা আস্ফালন আর অযথা সব
আত্মকেন্দ্রিক দম্ভ; প্রিয়তমার গভীর চুম্বনে
সিক্ত হয়ে সেই কবেই আমি ছিঁড়ে ফেলেছি
সমস্ত শক্ত সামাজিক শেকল; আমার শুধু চাই
একটুখানি প্রণয়ের স্নিগ্ধ জল, আমি প্রবল
পদাঘাতে উড়িয়ে দিতে চাই, সব অহেতুক জঞ্জাল!


৩.
অর্থের ঝনঝনানিতে নাচতে নাচতে
তোমরা খুঁজে নাও পৃথিবীতেই
স্বর্গবাসের নিশ্চয়তা;
গোটা একটা জীবন বাঁচতে বাঁচতে
আমি যদি আর একটুও না পাই
সুখের হদিস; কেউ যদি আমারে এই মুহূর্তে
অফার করে একটুখানি বিষ—
প্রচণ্ড তৃষ্ণায় নির্দ্বিধায় আমি গিলে ফেলব সবটুকু;
মায়াবিনী হাতের যাদুময়ী প্রেমময়ী স্পর্শ
আমাকে থামাতে পারবে কিনা, আমি জানি না!
তবে ইতোমধ্যে আমি জেনে গেছি—
নারকীয় জীবন মৃত্যুর চেয়ে কম কিংবা বেশি
ভালো কিংবা মন্দ নয়; আমি জেনে গেছি—
মানুষ নিজেকে ভাঙতে না পারলে
ভেঙেচূরে পুনরায় গড়তে না পারলে
জীবন হয়ে যায় নির্জীব, প্রাণ হয়ে যায় নির্বিষ
প্রেম হয়ে যায় রসহীন কিংবা নিমিষেই বিলীন !


অন্যের অনুদানে আমি এতকাল বেঁচে বেঁচে
আত্মসম্মানের বিসর্জনে পেয়েছি প্রবল
ঘৃণা অবশেষে; তোমাকে ভালোবেসে
আমি বিশুদ্ধ হতে না পারলেও
যাই নি অন্তত ক্ষয়ে, জাহান্নামের ভয়ে
আমি মসজিদে ছদ্মবেশী মুনাফিকের সাথে
একই কাতারে দাঁড়াতে চাই না বলে ওরা আমাকে
করেছিল তীব্র অপমান— তবু আমি জীবনের
দিকে ফিরে মস্তককে করেছি নীচু, উঠে দাঁড়ায়েছি
শক্ত পায়ে, ঘুরে দাঁড়িয়েছি আকাঙ্ক্ষার তাড়নায়—
হাত বাড়িয়েছি একটু সহানুভূতির আশায়;
ভালোবাসার উত্তাল সমুদ্রে হয়েছি ভাসমান—
মৃত্যুনদীর পাড়ে বসে আমি সদা গেয়ে গেছি
জীবনের জয়গান; তবু ওরা চিনল না আমাকে
বুঝল না আমার অনুভূতির তর্জমা, প্রিয়তমা!


শুধু তুমি চিনেছিলে, বুঝেছিলে কিনা, জানি না—
তবু আমি নগ্ন করেছি আমার শরীরকে তোমার
কাতর দৃষ্টিতে, আমি সৃষ্টিতে সৃষ্টিতে মূলত বলে যাচ্ছি
মৃত্যুর ভয়াল থাবাতেও,  হত্যার কুচক্রী ফাঁদেও
আমি প্রধানত ভালোবেসেছি তোমাকে
আমি ভালোবাসতে চেয়েছি শেষ পর্যন্ত আমাকে!


গারদের অন্ধকার প্রকোষ্ঠের সেই দিনগুলিতে
আমি প্রতিটা মুহূর্তে নিজেকে ভেবেছি প্রচণ্ড স্বাধীন
মস্তিষ্কে প্রতিনিয়ত বিষাদগ্রস্ত বিদ্যুৎ খেলে গেলেও
আমি তোমাকে ভুলতে পারি নি, ভুলতে পারি নি আমাকে;
ভোরের বাগিছায় ফুল হয়ে ফুটবার প্রবল আকাঙ্ক্ষায়
আমি আজো আছি অনড়; সিগারেট ছুঁড়ে ফেলে
বৃক্ষের বন্ধন থেকে ছিন্ন করে বুকপকেটে
রেখে দিই তিনটি লেবুপাতা, একদিন আমার বুকে
তোমার সতেজ ভালোবাসার সুগন্ধি ছড়াবে বলে!
তোমাদের প্রবল প্রত্যাখ্যান, অহেতুক অভিমান
আর তীব্র অবহেলা সত্ত্বেও  আমি আজও
ডুবে যাই নি চোরাবালিতে, কেউ তো আসে নি
আমাকে আপন করে নিতে সেই দিনগুলিতে!
তবু আমি বুকে কষ্ট চেপে ভেসে যাই নি নষ্টজলে...
আমি আজো আছি বেঁচে— তোমাকে ভালোবাসি বলে!