কুসুম, আমি তোমাকে একুশে বইমেলায়
এবার নিয়ে যাব বলেছিলাম–
এটা শোনার পর তোমার মুখ হয়ে গেছিল
বৃষ্টিভেজা ফুলের উপর এক চিলতে রোদ!
কুসুম, তুমি কি জানো–
'অমর একুশে বইমেলা' হয়ত প্রযুক্তির দূষণে
আগামী একুশ বছরের মধ্যে মরে যাবে!
অমর সমস্ত কাব্যগ্রন্থ হয়ে যাবে
ঝালমুড়ির ঠোঙা!
কবিতা অপেক্ষা ঝালমুড়ি অধিকতর সুস্বাদু
এবং কম মরণশীল, এটা জেনেই
আমি কবিতার কাছে এসেছি, অমরত্বের জন্য
আমি কোনোদিনও কবিতা লিখি নি!


কুসুম, এবার বইমেলায় গেলে
আমি প্রথমেই তোমাকে কিনে দিব
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'পুতুল নাচের ইতিকথা'
এটা পড়ার পর তোমার ভুল ভাঙবে–
তুমি এতদিন যাকে 'শশী ডাক্তার' ভেবেছিলে
সে আসলে 'কুমুদ'!
এবং তুমিও যে আসলে 'কুসুম' নও...
কুসুম, বইমেলায় গিয়ে মূলত আমরা ঝালমুড়ি খাব!
শাহবাগ থেকে এক কেজি আপেল আর
কয়েকটা বাসি গোলাপ কিনে
ধূলির সমুদ্র সাঁতরে সাঁতরে
ফিরে যাব হিংসার কাঁদাজলে ডুবন্ত
অতি সুখের স্বর্গীয় সংসারে–
যেখানে একটা সতেজ গোলাপের পাঁপড়ি ছোঁবার
অপেক্ষায় কাঁপছে একজোড়া কাতর হাত!


কুসুম, তুমি বলেছিলে, তুমি ভালোবাসো নীল সমুদ্র
তুমি কি জানো, বিষাক্ত বোমা বর্জ্য
গর্ভে ধারণ করতে করতে
পৃথিবীর প্রায় সব সমুদ্রেই একদিন ধূসর হয়ে যাবে!
তবুও আমি চাইব, সমুদ্রপারেই যেন
তৈরী হয় আমাদের স্বপ্নের নিকেতন!
ধূলির সমুদ্রে সাঁতরে মরার চেয়ে
দূষিত জলের সমুদ্রে ডুবে মরা ১০১ গুণ আনন্দের!


কুসুম, তুমি কি জানো–
সমস্ত ক্ষয়ের শেষেই আমি তোমাকে চেয়েছি!
সমস্ত ভয়ের জাল ছিন্ন করেই ধরতে চেয়েছি
তোমার বেদনাবিদ্ধ দুটি হাত!
সবাই জানে, ভালোবাসা না পেয়েই
আমি ঝরে গেছি বহুকাল আগে
ভয়ানক কোন এক ঝড়ে!
কুসুম, তুমি তো জানো–
ভালোবাসতে ভালোবাসতেই
আমি সরে গেছি সমস্ত বৃক্ষের ছায়া থেকে!
ভালোবাসতে ভালোবাসতেই
কোন এক শীতের ভোরে আমি 'পাগল' হয়ে গেছি!
ভালোবাসতে ভালোবাসতেই
ঠিক একদিন আমি মারা যাব
তোমার উরুতে মাথা রেখে...