আমায় ছোঁয়ে দেখ
প্রিয় কবি পরিতোষ ভৌমিক ( অমায়িক কবি)


“আমায় ছুঁয়ে দেখ,
শীতল স্নিগ্ধ দেহের পরশ তোমায় অবশ করবেই ,
ভালবাসার আবেশ আমার তোমায় কাছে টানবেই ।
এই দেহে শুয়ে আছে অযুত নিযুত তৃপ্তি
রন্ধ্রে রন্ধ্রে করছে বিরাজ প্রেম-প্রীতি-আকুতি।”


  প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়ম মেনে আমার শরীরও তোমার  ছোঁয়া পেতে ইচ্ছে প্রকাশ করে। হেমন্তের ঝরা পাতার বেদনায় বা বসন্তের নব কিশলয়ের অনুরাগে উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠে আমারও মন! গভীর আশ্লেষে নেচে ওঠে শুধু,  তোমায়  কাছে পেতে। আমার এ দিব্যাঙ্গ অন্যের মতো   তোমায় তৃপ্ত  করতে পারে। আমারও শোণিত নিস্তরঙ্গ নয়;  সেখানেও লালিত হয়ে চলেছে আর সবার মতো  “প্রেম-প্রীতি-আকুতি।"


তবু...
   আমি তোমার ছোঁয়া পাই নি। কারণ আমি “আমি অচ্ছুত অচ্যুত।” অথচ আমিও অন্য  আর পাঁচজনের মতো।  
  
  অস্পৃশ্যতা আজও সমাজের বুকে অভিশাপ হয়ে  রয়েছে। দগদগে ঘায়ের মতো আজও  তার বিস্তার বড়ো কম নয়। মানবতার এ অপমান বড়ো ভয়ঙ্কররূপে আজও প্রকটিত।


   সাহিত্যে জাত-পাত, উচ্চ-নিচ নিয়ে কম কথা তো বলা হয় নি! সমাজ সংস্কারের লক্ষ্যে বরণীয় কবি,সাহিত্যিক, সমাজ সংস্কারক কম লড়াই  তো করেন  নি!   তবু, এ রোগের শিকড় আমূল উপড়ানো সম্ভব হল না আজও!    
  
  প্রিয় কবি পরিতোষ ভৌমিক (অমায়িক কবি) বিষয়টিকে আধার করে এক অসামান্য প্রতিবেদন পেশ করেছেন। বেদনার কথাটি তিনি প্রকটভাবে বলেন নি। বেশ প্রচ্ছন্ন ভাবে তাঁর বক্তব্যটিকে পেশ করেছেন। আর এইখানেই কবিতাটি এক ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে। এইখানেই  কবিতাটির প্রতি ভালোলাগা তৈরি হয় পাঠকের মনে।


একজন মানুষ আর একজন মানুষের প্রেমে পড়েও, ভালো লাগার পাত্র হয়েও, শুধুমাত্র অচ্ছুত হওয়ার  কারণে ব্রাত্য হয়ে পড়ে থাকেন অবহেলায়-অনাদরে...আজও!  
  
বড়ো অন্ধকারের কথা। বড়ো যন্ত্রণার কথা। বড়ো অসাফল্যের কথা-একজন মানুষ হিসেবে।  

   প্রিয় কবি এক অসাধারণ মুনশিয়ানায়, এক দরদী মন নিয়ে বিষয়টির অপরূপ কাব্যিক উপস্থাপন করেছেন। সমাজের এই বিষমতার যন্ত্রণাটিকে অনন্য রূপদান করেছেন।
অসাধারণ এক মানবিক উচ্চারণের এই কবিতাটির জন্য প্রিয় কবির জন্য রইল তাই  আন্তরিক  অভিনন্দন।


ভালো থাকবেন কবি।
আন্তরিক শুভকামনা সকল সময়।