ডিসপ্রোপরশন:-প্রিয় কবি সুমন্ত প্রমাণিক


ছোট বেলায় অনুপাতের অঙ্ক মনে পড়ে গেল। একটু ভুল শুধরে নিয়ে বলি, সমানুপাত। এই যেমন,দিন যতটা, রাত ঠিক ততটাই।


কিন্তু, জীবনের অঙ্ক এমন সমান সমান নয়, শতকের পঞ্চাশ-পঞ্চাশের মতো। বরং, তার পরতে পরতে অসমান, অসামঞ্জস্য রয়েছে একই রকম সমান-সমান্তরালে, রেললাইনের প্রথমটির পাশে দ্বিতীয়টির মতো, ডানহাতের পাশে বামহাতের মতো, পাশাপাশি, ঘেঁষাঘেঁষি, জীবনজুড়ে....


আসরের কবি, সুমন্ত প্রমাণিকের "ডিসপ্রোপরশন", এমন এক, জটিল অঙ্কের হিসেব দেখিয়ে দিল,কি সহজ,কি সরল করে


  সরলতা দিয়ে, সহজতা দিয়ে, কবি কী অসাধারণভাবে, জীবনের বঞ্চনা, তার না পাওয়ার গাঢ় বেদনা,কেমন কঠিন-কঠোর বাস্তব হয়ে, দাঁড়িয়ে রয়েছে, চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন তিনি, সেটাও। একেবারে আটপৌরে কথকতায় বলে যাওয়া, কবিতাটির মনোরম,নরম কথন আমাদের একটুও বুঝতে অসুবিধে হলো না, তাই


খুব একটা বড়ো নয়, তাই, গোটা কবিতাটিকে, কপি পেস্ট করে দিলাম, আলোচনার সঙ্গে, একই পাতায়, পড়ার সুবিধার জন্যে-


"কেউ কেউ সবকিছু বেশি পায়
কেউ কেউ বেশি পায় প্রেম!
রাতের নির্জনতা বেশি পায়
নিটোল বুকের স্পর্শ বেশি পায়
বেশি পায় আর্দ্র ছায়া, নবাগত শীতের আমেজ।


দীঘল কালো যাজক রাতের স্বপ্ন
কিংবা মধ্য গগনে ঝুলে থাকা
উদাস পূর্ণিমার বামপন্থী চাঁদ, জ্যোৎস্না
-কেউ কেউ বেশিই পায়।
কেউ কেউ বেশি পায় রূপোলী সংসার
ঘটিবাটি, নাকে জমা ঘাম সমেত বউ!
পুকুর ভরা মাছের উচ্ছ্বাস বেশি পায়
গোয়াল ভরা গরুর উৎপাত বেশি পায়
বেশি পায় বর্ধিত ফাল্গুন, ভ্রুমরার ধ্রুপদী গান।


অথচ, যাঁর পেটে আজন্ম ক্ষুধা
সে তেমন কিছুই পায়না!
কাছে থাকার স্পর্শ পায়না, ঘুচেনা
দূরে থাকার অনিঃশেষ প্রতীক্ষা।
একটি দু'টি প্রজন্ম পেরোবার পর
বড়জোর এক দের দশক বার্ধক্য পায়
বরঞ্চ আরো কিছু বেশি পায়-
সাদামাটা একটি বার্ধক্য-জীবন।"


কী অসামান্য সমাপন।কী অসাধারণ মুনশিয়ানায় কবি দাঁড়ি টানলেন, তাঁর মায়াঘন পরিবেশনাটিকে।


একটা গোটা জীবন, তার হাসি-কান্না, চাওয়া-পাওয়া কী অপরীসীম বেদনাঘন হয়ে উপস্থাপিত হলো, কবির যত্নশীল মায়াতুলির টানে।


বলার অপেক্ষা রাখেনা, কবিতাটির ভালোলাগার কারণ। সত্যিই তখন পাঠক হিসেবে,মুগ্ধ না হয়ে উপায় থাকে না, আর কোনো।


অবশ্যই, বাহবা জানাতে হবে, এমন এক অনবদ্য সৃজনের সৃষ্টিকর্তাকে।


রচয়িতা কবির জন্যে তাই, রেখে গেলাম, একগুচ্ছ গোলাপের একরাশ শুভেচ্ছা ও হাজারো অভিনন্দন।