বিশ্ব বিখ্যাত বরণীয় চলচিত্রকার সত্যজিৎ রায় শব্দটির প্রয়োগ করেছিলেন, “মগজাস্ত্র”। সেই শাণিত মগজাস্ত্রের প্রয়োগে একটি কবিতা আপনাদের সামনে নিবেদন করতে চেয়ে আজকের আলোচনা।


কবিতার নামঃ- নামধারী কামকাজ
কবিঃ- শ্রদ্ধেয় আগুন নদী।


   ভূমিকায় কবি বলেছেন কবিতার বিষয় সম্বন্ধে। অথচ সারা কবিতা জুড়ে বারবার পাঠ  করেও উদ্ধার করতে হিমশিম খেতে হয় তাঁর বলে যাওয়া চরিত্রদের স্বরূপ।  

“লালুর টুপি কালুর মাথায়
কালুর টুপি লালু'তে”-


হিন্দিতে একটা কথা আছে “ইসকি টোপি উসকি শর” বা বাংলার প্রচলিত কথা “পরের মাথায় কাঁঠাল  ভেঙে খাওয়া”র কথা ভেসে আসে মনে।


টেলুর ফুপি ফেলুর ব্যথায়- পরের দুঃখে কেঁদে মরে
দেলু'র ধুপি বালুতে- বালি বা মাটির ওপরেই নিজের রাগের প্রকাশ করে। শক্তের কাছে নীরব থাকে।
এই সব দেখেশুনে মালু হেসে মরে...


এইভাবে এগোলে দেখা যায় চরিত্রগুলো সম্বন্ধে একটা আভাস পাওয়া যায় মোটামুটি।


যেমন,
ভুলু নাশে, কলু চায় গড়তে – একজন ধ্বংস করে আর একজন গড়তে চায়  
ছালু  নাদা  আলু  পায়- ছালুর ভাগ্যে কিছুই জোটে না
আনু গেলে, মানু খেলে খুশিতে- পরশ্রীকাতরতার প্রকাশ  
বেনু বাপু ধরে সুর- এখানে লক্ষনীয় বেণু নয় শব্দটি বেনু- খুব সম্ভবত অপাত্র বা অদক্ষ বা আনাড়ির সুর ধরা।
সানু এলে, ভানু হেলে তুষিতে- পাহাড় যদি কাছে আসে সূর্যও তাকে সন্তুষ্ট করতে হেলে পড়ে।


“কলি চলে, অলি বলে যেথায়  
মিলি ভাবে লিলি যাবে
মলি গলে, জলি ঢলে সেথায়
ললি পাবে ডলি খাবে
- চেয়ে থাকে পলি!”-


রসিক ভ্রমর যেখানে যায় ফুলের দল চলে তার পিছুপিছু। মিলি ভাবে লিলি গেলে তবেই সে যাবে। জলি যার সঙ্গে ভাব করে দেখাদেখি মলিও তার সঙ্গে। অর্থাৎ তার কোন নিজস্ব ভাবনা নেই।  আবার, ডলি পরনির্ভরশীল ললির ওপর। ললি পেলেই তবে তার জুটবে, নয়তো নয়।  আর, পলির কাজ হল সবার সব কিছু দেখে যাওয়া।


আলাল লড়াই করে,- লড়াই করে কষ্ট করে যে ধনবান হয়েছে।
দুলাল বড়াই ধরে- বিনা আয়াসে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত অহংকারী।


বাঁচতে
বেলাল বাধায় গোল- বাঁচার লড়াইকারী।
বেঘোর জালাল! – মাঝখান থেকে খামোকা প্রাণ যায় যার।
জনি বোঝে, রনি রাজি পুষিতে- বুঝদার জনি আর রনি বোঝালেই সহজেই রাজী হয়ে যায়।
রিনি ঝিনি করে হলা- হল্লাকারী  
মণি খোঁজে, ফণী মাঝি ভূষিতে- রত্ন সবার মানায় না। বাঁদরের গলায় মুক্তোর মালার মতো


মিনি তিনি ধরে গলা-  মিনি তিনি গান গাইছে
- ঘুম পাড়ে টনি!- টনি ঘুমিয়ে পড়ে।  


   অনন্য মেধার অধিকারী কবি বহু পরিশ্রমে এমন কবিতাটি নির্মাণ করেছেন। ছন্দ বজায় রেখে, কাব্যিকগুণ ধরে রাখা মোটেই সহজ কাজ নয়। কোন প্রশংসাই যথেষ্ট নয় এই বিরল, ব্যতিক্রমী উপস্থাপনার।


  পরিশেষে, একটা কথা বলতে চাওয়া। যেহেতু কবিতাটি একটি ধাঁধার মতো তাই, অনিশ্চয়তা রয়েছে প্রতিবেদকের মনে। ভুলত্রুটি ধরিয়ে দিলে কৃতজ্ঞ থাকবো সহকবি পাঠকের প্রতি।   যদি সম্ভব হয়, রচয়িতা কবির কাছেও অনুরোধ রইলো আলোকপাতের উদ্দেশ্যে।


ভালো থাকবেন সকলে।
দিনটা ভালো কাটুক- এই প্রার্থনা করে আজকের মতো শেষ করলাম আলোচনাটি।