কি এক আদিম অলীক ইন্দ্রজালে বেঁধে রেখেছো আমায় !
একটি রেইনকোট যেমন, বছরের পর বছর -
বৃষ্টির অপেক্ষায় বাঁচে,
একটা তৃষ্ণার্ত কলস যেমন, কিশোরীর স্পর্শে
জলজ বিকেলের স্বপ্ন দেখে!
.
কি এক আদিম অলীক ইন্দ্রজালে...
টেবিলের উপরে মার্কস এঙ্গেলস, ভ্যান বিটোভেন,
ছাড়ানো কলার খোসা, একটি ভাঙা ব্লেড,
রতিশক্তিহীন একটি লালমুখো কলমদানি,
রোগ সারাতে ব্যর্থ, নতমুখো কিছু ঔষধের বোতল,
আমার সাথে এই চান্নিপসর রাতে; বাতায়ন খুলে
জোছনা পোহায় বসে।
.
কি এক আদিম অলীক ইন্দ্রজালে নক্ষত্রেরা
দলে
         দলে
ভেসে গেলো আত্রাই নদীর জলে!
=======
.
কী আশ্চর্য
- শামস্ রুবেল
শরীরে সুঁচ ফুটালে এখন আর ব্যথা লাগেনা,
কী আশ্চর্য, প্রাণী থেকে বাচ্চা হয়, উদ্ভিদ
থেকে হয় অঙ্কুর
আমার বীর্য শুকিয়ে গেছে, সেই পথ দিয়ে আর
আগুনের জোয়ার আসে না,
তাইতো ফাগুনও দেখিনা,
কি আশ্চর্য, লজ্জাবতী গাছের পাতার মতন ছিল,
আমারও লাজ-লজ্জা ও শরম, ছিল
আত্মসম্মানবোধ,
নীতি আদর্শ সব কোথায় পালালো ?
আমি কি তবে বেহায়া ?
কী আশ্চর্য, আমার অক্সিজেন টানা লাগে না
কার্বন ডাই-অক্সাইড ছেড়ে দেয়াও লাগেনা
আলোর ধারালো ব্লেড চোখের পর্দা চিরে
ফেলে না,
আমার খাওয়া লাগেনা, অফিস-আদালত
লাগেনা,
ব্যাগ হাতে বাজারও লাগে না, সংসার-ধর্ম তো
লাগেই না
কী আশ্চর্য, মাঝে মাঝে মনে হয়, আমি বোধহয়
স্যাঁতস্যঁতে মাটিতে জন্মানো মার্স বা
ফার্নজাতীয় উদ্ভিদ,
শ্যাওলা কিংবা অ্যামিবা, না ঠিক তাও নয়
কেননা তাদেরও তো কোন না কোন কাজ আছেই,
আছে কিছু না কিছু দায়িত্ব।
আমার এসব কিছুই নেই,
তবে আমি কি একখন্ড পাথর, একটা জড়
পদার্থমাত্র?
তোমরা যদি মানুষ হয়ে থাকো, তবে খোলস
ছেড়ে বেরিয়ে এসো,
মিছিলে নামো, রুখে দাও অন্যায়, করো
প্রতিবাদ,
আর যদি নাই পারো, তা হলে আমার মতো পাথর
হয়ে যাও,
শীতঘুম দাও, পাথরের একটা নতুন
প্রতিশব্দ লেখা হোক - কাপুরুষ ।
======
.
পাতকুয়ো
,
পাতকুয়ো, একবার বুকের নিকেল সরাও। ফুলের
মতো মেল। ভেতরটা দেখাও। বিশ্বাস করো,
আমি
শুধু তোমাকেই দেখবো। তোমার স্বচ্ছ কাঁচের
জলে
আমি দেখবোনা আকাশ। সন্ধ্যা ডানার কাক।
দেখবোনা বৃক্ষরাজি, নিজের ছায়া পর্যন্ত...
.
তোমার নাম ধাম স্মৃতিফলকে আমার কি কাজ ?
ইতিহাসবেত্তা নই আমি। নই কোন প্রত্নতত্ত
বিশারদ।
কিংবা তুখোড় কোন কবি। দেখতে চাও
আমাকে ? শুধু একবার বলো। ডালিম দানার মতো
ফেটে গিয়ে, দেখাব তোমায়।
.
একটা পাতকুয়োকে ঘিরে কখনো-কখনো গড়ে
ওঠে সমাজ, সভ্যতা, সংসার, গুনতে হয় জীবনের
ধাপ।
মূলতঃ তাবৎ সম্পর্ককে অস্বীকার করেই,
জ্যোতিষ্কের
মতো, পাতকুয়োর সাথে আমার বসবাস!
===
.
ফেরা
,
শিরীষের ডাল মরচানো টিন পাতা ঝরা খেলা
টেশন রোডের এই বাড়িতেই কেটে যায় বেলা।
.
ট্রেন যায় আসে যাত্রীরা ছোটে ব্যাগ ঝুলে
কাঁধে
সে এক পাগল আবল তাবল হাসে আর কাঁদে।
.
রেলের ওপার রুবাদের বাড়ি কলেজের সাথে
এতটুকু আর অবসর নেই বুঝি তার হাতে!
.
রাত থম-থম নিভে আসে দম সলতের মতো
পথের ধুলোয় দেহ ধুয়ে তারা হাসে অবিরত।
.
আমি এক কবি বুকে নিয়ে ছবি গুনে যাই ট্রেন
ফিরতি ট্রেনেই আসবেন তিনি বাঁকি লেনদেন।
মা ত্রা বৃ ত্ত
_