নির্বাচিত থিম
.
শহরে হেঁটে গেলে প্রথমতঃ পথ ছাঁদে
পুলিশ ফাঁড়ি। মনে হয় একটা বিকল
ঘোড়ার মতো, সেখানে ঢুকে গিয়ে সীমা
লঙ্ঘন করি। হাত উঁচিয়ে তাদেরকে
বলে দিই; আজ সকালে পেয়ারা গাছে
পাখির দু'টো ডিম ভেঙেছি!
.
শহরে হেঁটে গেলে দ্বিতীয়তঃ পথ ছাঁদে
হাসপাতাল। মনে হয় সন্তর্পণে একবার
ও.টি.তে টু মারি। অক্সিজেন মাস্ক পরে
শুয়ে পড়ি মুমূর্ষুর পাশে। কিংবা লেবু
পাতার ঘ্রাণ ছড়ানো তরুণ নার্সের
তুলতুলে গায়ে বেড়ালের মতো গা
ঘষে চলে আসি কাশের লজেন্স চুষতে
চুষতে।
.
শহরে হাঁটি আর ভাবি, আজ সারাদিন
কোন কাজ নয়। নয় কোন অজুহাত।
চেয়ার টেবিল নিয়ে বসে যাই নর্দমার
পাশে। তার পর রাতদিন চলুক -
ইন্টারভিউ। ঝাঁকঝাঁক কাকের
ইন্টারভিউ। নাম, ধাম, দেশের বাড়ি,
গ্রামে যাতায়াত আছে কিনা। গেলে
বন্ধু মাছরাঙার সাথে কথা হয় কিনা।
ইত্যাদি ইত্যাদি...
.
শহরে হেঁটে গেলে হাত ঘেঁষে টি এন টি
মোড়, রেলকলোনি পার হয়ে পার্টি
অফিস। একটু ভেতরে মাকড়সার
জালের মত মেস আর গার্লস হোস্টেল।
ঠিক এখানেই কোথাও; নমিতা দি
থাকেন। বহুদিন যার সাথে দেখাহয়নি!
===
.
প্রস্থান
.
তার মায়ের হাত, লিকলিকে লাউয়ের
মতো আঙুল
আঙুলের ধারালো রেখা,
আঁচল থেকে গড়িয়ে পড়া স্নেহের বৃষ্টি
পায়ে পায়ে, ধুলোয় জন্ম নেয়া শান্তির
আবাসন
যতটা নমনীয়
বাবার পৃথিবীটা সম্পূর্ণ তার বিপরীত।
.
তার মায়ের হেসেল ঘর, উনুন পাড়
পেঁয়াজ কাটার ঝাঁজ
বটিতে লেগে থাকা মাছের জমাট রক্ত,
আঁশটে গন্ধ
সালাদের থালায় কাঁচা মরিচের কুচি,
বাচ্চাদের মত ফুসে ওঠা, ডিটারজেন্টের
ফেনা
ভাতের হাড়িতে বেগুন সেদ্ধ, গরুর কিমা
এঁটো থালাবাসন, ভিনেগার মাখানো
পানি
দুই পায়ের দুই জুতো, খসে যাওয়া ঝাড়ু
যতটা নমনীয়
বাবার পৃথিবীটা সম্পূর্ণ তার বিপরীত।
.
তার মায়ের মায়া ঝরা চোখ, মধুর হাসি
নুন ঝালের শানকি
একটা কাঠি নিয়ে
কটকটিয়ে বেজে ওঠা দেশলাই
দুরমুশের মতো ডালঘাঁটা ওড়ং,
ছাই কাঠির জ্বালামুখ
চিনির বয়ামে কতগুলো কালো পিঁপড়া
বিস্কুটের কৌটায় ব্লুটিং পেপাড়
গরম মাছের ঝোলে জিহ্বা পোড়ানো
ফোসা পড়া হাতে তুথ পেস্টের হাসি
মাখা দ্রবণ
হিং এর সাথে কাঁচা লংকা
ফ্রিজের দুর্গন্ধ মুখে কয়েক টি লেবুর টুকরা,
যতটা নমনীয়
বাবার পৃথিবীটা সম্পূর্ণ তার বিপরীত।
.
তার কাছে বাবা মানে রাক্ষসের ভয়াল মুখ
তার কাছে বাবা মানে বুকপকেটে টাকার
খুনোখুনি
তার কাছে বাবা মানে যন্ত্রের মতো
ইষ্টিম হৃদয়,
তার কাছে বাবা মানে
স্টেইনেলস্ ব্লেডের মতো ক্ষুরধার চোখ
তার কাছে বাবা মানে ভীত হরিণের হঠাৎ
ছুটে পালানো
তার কাছে বাবা মানে বয়সী রৌদ্রের
প্রকাশ্যে হেঁটে চলা।
.
তার কাছে বাবা মানে দস্তা পেটানো
শরীর
মেদবহুল পেট,
তার কাছে বাবা মানে যুক্তিবাদী
হাজারটা নিয়ম নিয়ে গড়ে ওঠা মানুষ
তার কাছে বাবা মানে-
পানের সাথে চুন, জর্দা, কয়েক দানা
সুপারি
ওষুধের ঠোঙ্গায় বাদুরের মতো
ঝুলে থাকা, নানাবিধ অসুখ
তার কাছে বাবা মানে নিচ্ছদ্র পাহারা,
তারকাঁটা উতড়ে ছুটে চলা
রকেটের মতো পাখি
তার কাছে বাবা মানে-
একহাঁটু টলটলে পানিতে পচা পদ্মফুলের
দুর্গন্ধ ।
.
পাথরের মতো কঠিন লোহর অক্ষরে লেখা
সেই বাবাটি
কাঁচের প্লেট ভাঙার মতো টুক করে একদিন..
ডালিম দানার মতো লুটিয়ে পড়লেন
মাটিতে.
বাবা ছাড়া তার কাছে পৃথিবীটা এখন
নেভানো বাতি
ইটের নীচে চাপা পড়া
হলুদ ঘাস, ডুকরে উঠা কান্নার ঢেউ।
====
.
সত্ত্বাধিকার
.
সেজ বোনটি গলা জড়িয়ে এসে তাকে
বললো-
এই নাও ভাইজান লগিটা,
দু'একটি রেখে সমস্ত তারা পেড়ে দাও,
আমি তারার ফুলের মালা গেঁথে পরবো
আর মিটিমিটি জ্বলবো
.
মেজ ভাইটি মৃদুস্বরে কানের কাছে মুখ
নিয়ে
তাকে বললো-
এই নাও ভাইজান তীর ধনুকটা,
তীরন্দাজের মতো লক্ষ্য স্থির করো,
অর্জুনের মন্ত্রটা পাঠ করে আকাশে তীরটা
ছোঁড়
চাঁদটাকে তোমার পায়ের কাছে এনে
ফেলো,
আগামীকাল আমি ওটাকে ব্যাগে ভরে
স্কুলে নিয়ে যাবো,
সবাই দেখবে আমার তেলেসমাতি।
.
বড় ভাইটা হন্তদন্ত করে কোত্থেকে ছুটে
এসে
তাকে বললো-
ভাইজান দেখ দেখ আকাশটা কি
মোলায়েম,
ঠিক মখমল চাদরের মতো,
আজ থেকে মেঘের রথে চড়ে আমি ঘুরবো
আকাশ থেকে আকাশে দেবরাজ ইন্দ্রের
মতো,
এই নাও দলিলটা ধরো, দস্তখত করো,
আকাশটা আমার নামে ওয়াকফো দাও।
.
কথা শেষ না হতেই কানকাটা জসিম
মিলিটারির মতো
দলবল নিয়ে
তার ডেরার কপাট ভাঙলো।
চারপাশটা ঘিরে নিলো
হাত থেকে ওয়েস্টার্ন যন্ত্রটা
নিঃশ্বাসের
দোরগোড়ায় রাখলো
পেটের চিপা থেকে
পর্চা
খতিয়ান
খিস্তোয়ার
নক্সা সহ, জমি সংক্রান্ত সমস্ত কাগজ বের
করে
চোখে আগুন নিয়ে তার মুখের উপর ছুঁড়ে
মারলো
মাথা খামচিয়ে আকাশ কাঁপিয়ে বলে
উঠলো
এই তারা গুচ্ছ আমার,
এই চাঁদটা আমার,
এই আকাশটা আমার,
পৃথিবীর চারটি খুঁটি আমার সীমান্তের
উপর
পৃথিবীর সমস্ত নদনদী প্রবাহিত হয় আমার
বুকের উপর
সুতরাং এগুলোর মালিক
আমি
আমি
আমি
কেবল আমিই।
.
তখন অনেক রাত
তারা গুলো জ্বলতে জ্বলতে ক্লান্ত হয়ে
খসে পড়লো মাটিতে
সোমত্ত চাঁদটাকে গিলে খেলো বুভুক্ষু মেঘ
আকাশ পলি পরে গেলো কালো মেঘে
জোনাকি নিজের আলোয় পথদেখে ফিরে
গেলো ঘরে,
নির্জনতা থেকে শোনা গেলো ভূতের
নিঃশ্বাস,
নিয়ম মেনে সূর্য উঠলো অস্ত গেলো
কেবল বছরের পর বছর ধরে
ক্ষমতা নিয়ে দ্বন্দ্ব, হালনাগাদ হতে
থাকলো!
_