.
গেরুয়া রঙের গঙ্গাজল ছুঁয়ে শপথ করলাম, দৃঢ শপথ,
কিন্তু কি সেই শপথ ? ভুলোমন ভুলে গেছে সব!
.
ইদানীং এমন কি কি সব ঘটছে...
পান্তা ভাতের জলের মতো; ঘোলা হয়ে আসছে
সম্মুখ চিত্রপট,
একটা বাক্য বলতে গিয়ে
নেমে আসছে হাজারটা ফুলস্টপ,
এলঝাইমারের লক্ষণ কিনা তাও ভেবে দেখা
দরকার,
মনে হয় মস্তিষ্কের ইনামেল ক্ষয়ে যাচ্ছে
আমার।
.
যেমন ধরো, এঁটো-ঝুটো লেগে আছে মুখে,
আছে তো আছেই,
কিন্তু ভুলেগেছি জল দিতে,
শখ হলো গান গাইবো, "আমারো পরানো যাহা
চায়"
তারপর কি?
পরের লাইনটা যে ভুলে গেছি, মনে হলো সেই
দুইদিন পর।
.
সমুদ্রের মধ্যে দিয়ে যে রথ উড়ে যায়, সেটা কার
বাহন?
সাতদিন ধরে নিজেকে পড়ালাম, মনে নেই এখন,
পিতার নাম খুব মনে থাকে, মাতার নামটা
ভুলে যাই ববারবার!
.
মাথায় ইলেকট্রিক শক দেবনাকি ভাবছি,
কয়েদিদের
যেমন দেয়া হয়,
বিস্মৃত নক্ষত্রের মতো তলিয়ে যাচ্ছি দিন-দিন!
কিন্তু কি অদ্ভূত,
ভুলে যাই সবকিছুই, এ মিছিলে একসময়
হয়তো যোগ হবে, নিজের নাম, ঠিকানা, যাবতীয়
অনুষঙ্গ।
.
শুধু ভুলিনা একটি বর্ণ 'চ'
স্বয়ং স্বরস্বতী কৃপাকরে আমায় দিয়েছিল
বর্ণটি,
চ -মানে চলন্ত।
চ- মানে চরৈবেতি।
.
যদি কখনও হয়ে যাই এভাবেই বদ্ধউন্মাদ,
তবুও থাকবে রক্তে হার নামানা পণ,
থাকবে ইঞ্জিনের গতি,
বাধার দূর্গ গুরিয়ে দিয়ে, চলতে-চলতে চলে
যাবো দূরে...
চৈত্রের রৌদ্রে -
জিভ বের করা কুকুরের মত, রেললাইনের পথে...
========
.
শ্লীল অশ্লীল
.
যতটা সম্ভব, বোধহয় কিছুটা অশ্লীল হয়ে যাই,
অশ্লীল দৃষ্টি ছুঁড়ে মারি
অশ্লীল ভাষায় কথা বলি
অশ্লীল ঢঙে হাঁটি
শার্টের বোতামে, অশ্লীল ছিদ্র গুলো খুঁজে বার করি,
খাবার প্লেট গুলো, অশ্লীল মেনুতে সাজাই,
অশ্লীল কিছু একটা করে দেখাই !
.
যতটা সম্ভব, বোধহয় কিছুটা, অশ্লীল হয়ে যাই,
আশ্লীল মনে, ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর কে ডাকি
অশ্লীল যাজকের পায়ুকাম বাঁধাই করে রাখি
মহিষের শিং থেকে জন্ম নেয় তৃতীয় নগরীতে
অশ্লীল সভ্যতার বীজ বুনি।
.
যতটা সম্ভব, বোধহয় কিছুটা, অশ্লীল হয়ে যাই,
অশ্লীল ঝর্ণা হয়ে, স্তনের পাহাড় হতে নামি
ইন্দ্রাণীর স্নানঘরে ঘাপটি মেরে থাকি
আলতা, চিরুনি, ধানদূর্বা, আর বেলপাতা দিয়ে
এতদিন যাকে ভালোবেসেছি,
তার জরায়ু মুখে একবার ফণা তুলে দেখি।
.
কিছুটা অশ্লীল না হলে, অনেকটা শ্লীল
হওয়া যায় না !
=========
.
অনেক আঁধার
.
মুদ্রা এক্সচেঞ্জের মতো বিনিময় হোক
ভালোবাসা,
আজ সারাদিন চলুক; তোমার চোখের একজিবিশন,
হৃদয় দাপিয়ে চলুক এক্সপ্রেস ট্রেন!
.
আজ হয়ে যাক ভালোবাসার দুরূহ পরীক্ষা
এবড়োখেবড়ো ধুধু মাঠের মধ্য এসো দৌড়ায় আমরা,
পেছনে ভারি অস্ত্র হাতে ছুটুক দুর্যোধনের দল।
.
এতহুঁ সংবাদ বিদ্যুতের মতো ছয়লাপ হোক
মানুষ, পশু, এমনকি পাখিদের কানে-কানে।
.
নির্জন বনের মধ্যে, খড়কুটো আর জঞ্জাল সরিয়ে,
অবাঞ্ছিত কোন এক জায়গায় রাত কাটুক
আমাদের,
ব্রক্ষের ঔঁ.. ধ্বনি নিয়ে ছুটে আসুক উৎসুক
কীট-পতঙ্গের দল,
অমাবস্যা থাকুক, বন্দি থাকুক চাঁদ
খাপের ভেত্রে,
অনেক আঁধার আমাদের ভাসিয়ে নিয়ে যাক
আলোকের সন্ধানে...
========
.
পৃথক রেখায়
.
মানুষ হেঁটে যায়, আমি পায়ের ছাপ যত্ন করে তুলে রাখি,
মানুষ বেদনা বিস্ময়ে অধৈর্য শিশুর মতো
দেয়ালে আঁচড় কাটে, হাত কামড়ায়,
আমি সমুদ্রের তীর ঘেঁষে হেঁটে যাই, নিরোর মতো
বাঁশি বাজিয়ে।
.
মানুষ বলের মতো আত্মশ্লাঘা নিয়ে ডপিয়ে-ডপিয়ে চলে
আমি ছেড়ে দেই পথ; বেছে নেই কচ্ছপ জীবন!
.
মানুষ আকাশ ফুঁড়ে বের হবার আশায়
নিজের পায়ে অনবরত জল ঢালে,
আমি শেকড়হীন বৃক্ষের মতো ভুলে যাই
অযুত জীবন!
.
মানুষ আরতি করে, প্রদীপাদি জ্বালিয়ে
ঈশ্বরকে ডাকে আয়,  কাছে আয়...
আমি ততক্ষণে মানুষের চোখে পেয়ে যাই
ঈশ্বর।
_