সমর্পণ
.
আমার কাছে সবই দুরূহ-
ছাইফেলা ভাঙা কুলার জীবন দুরূহ,
নৌকার ছইয়ের মতো, হৃদয় আগলে ভেসে যাওয়া
দুরূহ।
.
সত্যের ঘ্রাণ নিতে, নাক দিয়ে বাঁশি বাজানো
দুরূহ,
ইন্দ্রনীলের মতো -
তেজী স্ত্রীর পেটের চর্বিতে হাত রেখে, শপথ
দুরূহ,
যোনি-পিশাচের মতো অণ্ডকোষের ফাঁকে,
বৈষ্ণব শাস্ত্রের লেবেল এঁটে, চলা দুরূহ।
.
পাপিষ্টকে সদুপদেশ দেয়া দুরূহ,
রাজনীতিকদের মতো দাঁতে দাঁত ফেলে
দেশোদ্ধার দুরূহ,
মাথার চান্দি হতে যে সূক্ষ্ম নালী ঝুলে গেছে
বটের ঝুরির মতো, সেখানে অগ্নিপুষ্পের দহন দুরূহ।
.
একের পর দুই গোনা দুরূহ
ক-এর পর খ-এর পাঠ দুরূহ,
উহুর পরে আহা বলা দুরূহ
শ্বাসের পর প্রশ্বাস ফেলা দুরূহ।
.
আমার কাছে সবই দুরূহ...
শুধু ধাতব প্লেটে,
কাঁচা পয়সার মতো, অজস্র শব্দের ঝংকার নিয়ে
অন্ধ ভিক্ষুকের মতো, কবিতার দারস্থ হওয়া;
দুরূহ কিছু নয়!
===
.
দেহচ্যুত
.
শেকড় বিছিয়ে পান কর রস
ও আমার বৃক্ষ মানুষ...
.
তোমার রসদ জোগাতে দেহ করি মাটি
ও আমার বৃক্ষ মানুষ...
.
পিত্ত
কফ
মাংস
অস্থি
.
দেহস্থ নজরানা গ্রহণ করো তুমি -
ও আমার বৃক্ষ মানুষ...
.
কামরিপু খুলে দাও, জ্বালাও সংগম চিতা
আমি মেঘ থেকে দেখব আজ, জলের পতন,
ও আমার বৃক্ষ মানুষ...
===
.
অ আ ক খ
.
মুখের ভাষায় আগুন দিলে
আর কি থাকে বাকি
বাধার প্রাচীর উপড়ে দিয়ে
রাজপথে ডাক-হাঁকি।
.
ভাষাতো নয় অ আ ক খ
শুধুই বর্ণমালা
ভাবের বাহন মনের কাহন
কে দেয় মুখে তালা?
.
'উর্দুই হবে রাষ্ট্র ভাষা'
কথাটি বেশ ফাইন -
জিন্না সাবের এই ঘোষণায়
হয়নি মানা আইন।
.
রফিক সালাম বরকত সহ
ছাত্র রাজনীতিক
আন্দোলনের মুখে ওদের
ছিলনা দিগ্বিদিক।
.
ফাগুন আসে আগুন নিয়ে
রক্ত ডালে-ডালে
ভাষার জন্য প্রাণ দিতে হয়
দেখিনি দশ কালে।
.
একুশ মানে নগ্ন পায়ে
প্রভাত-ফেরীর গান
একুশ মানে বুকের রক্ত
আত্মত্যাগ আর দান।
_
ছন্দ: স্বরবৃত্ত।
====
.
তীর্থ
,
স্নান ঘর খুব পবিত্র মনে হয়। ধুয়ে যায় শরীর
ও মনের ক্লেদ। পণ করো আজ থেকে স্নান
করে-করে কঙ্কালসার হবে।
.
তোমার দু’হাত দু'দিক থেকে ছিঁড়তে চায়
দু'জন দাউস। পক্ব কাঁঠালের মতো বোধহয়
খুলে আসে দেহ। তাদেরকেও একবার কষ্ট
করে স্নান ঘরে ঢুকাও। অলৌকিক ইশারায়
ঋণ গ্রহিতার মতো, উগ্র মূর্তিগুলো যখন,
ছুটে আসে রক্তের নেশায়, তারা কেউই যেন
বাদ না পড়ে। বসিয়ে রাখো স্নান ঘরে।
.
হিমালয় থেকে বয়ে আসা, ব্রহ্মপুত্রের পানিতে
স্নান করে; একদিন পাপমুক্ত হয়েছিল পরশুরাম।
ব্রহ্মপুত্র, বা গঙ্গা, সামনের দিনে হয়তো আর
পাবেনা। তাই স্নান ঘরেই ঝেড়ে ফেল পাপ।
রপ্ত করো স্নান শাস্ত্র। মতাদর্শের ছুতো ধরে
যারা লঙ্ঘন করেই চলেছে মানব ধর্ম, প্রয়োজনে
স্নান ঘরে তাদের বসবাসের ব্যবস্থা করে দাও।
.
স্নান করো
স্নান শেখ
স্নান বোঝ
একটা জীবন স্নান করে-করেই কাটিয়ে দাও!
.
বিষুবরেখা থেকে সূর্য যখন, ক্রমশঃ উত্তর
দিকে যাবে; যখন গাছে-গাছে ডেকে উঠবে
ফুলের বান। তখনই, স্নান সেরে স্নিগ্ধ রমনীর
মতো, পবিত্র হবে মাটি!
==
.
অংক কষে দেখেছি
_
গভীর রাতে যখন সিঁটি দেয় ট্রেন।কি বলে?
আমাকে যেতে দাও? ছেড়ে দাও পথ? তরঙ্গায়িত
ঢেউয়ের মতো জন্মাবধি ট্রেনতো হন্তদন্ত করেই
ম'লো।ছুঁতে পেরেছে টাইম টু টাইম স্টেশন?
.
মর্ম জ্বালায় ছটফট করা কিছু মানুষ আছে এমন।
তড়িদ্দামে ছোটে, দৌড়ায়, ঝাঁপায়, রণ বন
সিংহাসন দেখেনা কিছুই। তবুও অদৃষ্টের কি
পরিহাস, অধরা থেকেই যায় জীবনের স্টেশন!
.
ভোর না হতেই যারা কুয়াশার দেশে ছবি
হয়ে যায়। সন্ধ্যায় ঘরে ফিরে গলায় ঢেলে
দেয় গরম কাসের সিরাপ।আঁধার গাঢ় না হতেই,
চোখ যাদের ঢুলুঢুলু, অংক কষে দেখেছি, তাদের
কোন তাড়াহুড়ো নেই। নেই দুরূহ অভিলাষ। চলতে
গিয়ে অবিবেচকের মতো, বিসর্জন দিতে হয়না
প্রাণ।
কারণ পথই তাদের ঘর। স্টেশনই তাদের শেষ
অশ্রয়, শেষ সমাধান!
-