মিস্টিরিয়াস
.
সেই লোকটি, এক মুহূর্তে কোথায় নিরুদ্দেশ
হলো? শুভ্র বরফের কুয়াশাচ্ছন্ন পথে।
অভিমানী কিশোরের না ফেরার মতো!
.
ধূসর উস্কোখুস্কো চুল।বাদামি লাল আভা
মাখা চোখ। তামাটে চামড়া, কাঁধে সরু
বেঁতের লাঠি। লাঠিতে ঝুলানো একটি
আতিশয্য খাঁচা। খাঁচায় সুখে দুঃখে একাকার
দু’টো পাখি।
.
সেই লোকটি, সেকি মঙ্গলীয়? তাঁর পূর্ব পুরুষ
কি সিংহলের ভেড্ডারা? নাকি সে ইন্দো-
আর্য?
ফালি চাঁদের মতো কুঁচকানো ভ্রু। বেড়ালের
মতো ছিঁচকে গোঁফ। যুধিষ্ঠিরবাদী নিঃশ্বাসে
শতাব্দীর সূর্য পোড়া গন্ধ।
.
হয়তো জলের পাত্র হাতে একজন সুকতারা
হাজার বছর নির্ঘুম রাত্রি দু’পায়ে ঠেলে,
প্রার্থনা
করছে তার জন্য এক পসলা অনুতাপ বৃষ্টির!
.
সেই লোকটি, বিদ্যুত রেখার মতো চোখের
পলকে, কোথায় মিলিয়ে গেলো? দূর পাহাড়ের
পথে, যার পেছনে পেছনে একটি কুকুর লাফিয়ে
লাফিয়ে বাতাস ফালাফালা করছিল!
===
.
ক্যালকুলাস
.
ধূলোজল বয়সে 'আমাজন জঙ্গল' মুখে
লাগতো না, বলতাম - 'আম্মাজান জঙ্গল'
মা বলতো - 'জঙ্গল কোথায় পেলি?'
.
'আমাজনে এখন টগবগ করছে ফুটন্ত পানি।
কুয়াশার মতো ধোঁয়া উড়ছে অ-ন-ব-র-ত।
গরম পানির প্রসবণ নয়। একেবারে জলন্ত
একটা নদী!'
.
ধূলোজল বয়সের মতোই, অফিস থেকে ফিরে,
ডাইনিং-এ বসে, মাকে বললাম - 'আম্মাজান
জঙ্গলে নদী।' মা বললো - জঙ্গল কোথায় পেলি?
===
.
আধিপত্যবাদ
.
এদ্দিন সঙ্গোপনে যে শক্তি অর্জিত হয়েছে
চলছে তার মহড়ৎ -
দেখবে এসো।
.
হিরোশিমা নাগাসাকিই শেষ নয়
দুটি বিশ্বযুদ্ধ
মিত্র আর অক্ষ শক্তি
ভিলহেল্ম কাইটেলের আত্মসমর্পণ-
ইহুদী নিধন
হিটলারের আত্মহত্যা
স্নায়ুযুদ্ধ...
এখানেই শেষ নয়।
.
মধ্যেপ্রাচ্যে বসানো হবেনা কখনোই
দাঁড়ি-কমা, সেমিকোলন,
কখনোই উড়বেনা শান্তির পতাকা
চলবে-ই যুদ্ধ
ছাই হবে মানুষ!
.
চিন সাগরে ছাড়া হয়েছে কিছু
উত্তেজক এসিড,
তাইওয়ানে মজুত অস্ত্র গোলাবারুদ
কোরিয়াকে করা হয়েছে বিভক্ত
'নিয়ত জ্বালানো হচ্ছে আগুন
.
ফিলিস্তিনিতে মিউমিউ করছে
হাজার ভোল্টের বেড়াল
দেখবে এসো
.
তারা হলো 'মাহুত'
পৃথিবীটা একটা হস্তি
মানুষ বুক প্রশস্ত 'গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোড'
দেখবে সার্কাস
হস্তি সার্কাস
এসো
এসো
===
.
মুছে দেব দাগ
.
আর একটা কবিতা লিখবো। হাড়ে মাংস
লাগানো গুতগুতা কবিতা। রজঃস্বলা
কিশোরীর মতো প্রেমাস্পদ কবিতা!
.
কিছু ক্ষুরধার শব্দ পেয়েছি। মিশ্রির মতো
দানা বেঁধেছে কুমারী চিত্রকল্প। দুধে জল
মেশানো সেন্সলেস্ উপমা উৎপ্রেক্ষা গুলো
এভোয়েট করছি। রূপকের ব্যবহারে একদম
রূপকথা নয়।
.
আর একটা কবিতা লিখবো। ইট ভাটায়
অ-পক্ব ইটের সারিগুলো তাই দেখছি।
নির্মাণাধিন কাঁচা বিল্ডিং-এর একাংশ
খুব করে পর্যবেক্ষণ করছি। আধা পকা
পেন্টিং গুলো জিহ্বায় নিয়ে কষে পরখ করছি।
.
একটা কবিতা লিখতে গেলে, সূচের মুখ গুলো
চিনে রাখতে হয়। চন্দ্র-সূর্যের রাহুগ্রাস কখনো
কখনো উপেক্ষা করতে হয়। ঝণ, বন্ধক, কারাদণ্ড,
সয়ে নিতে হয়। দেশলাই-এর মতো জ্বলে বা
জ্বালিয়ে দেখতে হয়।
.
আর একটা কবিতা লিখবো। চুকিয়ে দেব
প্রজাপতির বেবাক ঋণ। তারপর নাহয়
পরিব্রাজক হবো!
===
.
সতীদাহ
.
ধোঁয়ার কুণ্ডলী, পালটে যায় আকাশের নীল
আগুনের শতকোটি মুখ, লেলিহান শিখা
লকলক করে সাপের জীভের মতো!
.
নরসুন্দা নদীর তীর, জ্ঞানসুন্দরীর মাঠ
একদিন কেঁপে ওঠেছিলো,
ভেসে আসে আজো রমণীদের আত্মচিৎকার !
.
বিধবার সিঁথির সিঁদুর, ফিকে হয়ে যায়নি তখনো
মন্দিরে ঘণ্টাধ্বনির থেমে যায়নি নাচোন,
কাঁসার প্লেটে বাড়ানো ভাত,
দিয়ে দেয়া হলো তাতে ছাই।
.
শরীর থেকে খুলে নেয়া হলো -
বস্ত্র
অলংকার
পলেস্তরা
.
ঢাকের শব্দে চাপা পড়ে গেল রমণীর কান্না
জন্তুর মতো টেনে-হিচড়ে নিয়ে আসা হলো
তাকে,
তূরীবাদকের নহর ঠেলে নিক্ষেপ করা হলো
অগ্নিকুণ্ডে।
.
জ্বলে গেল - অশ্রুর ফোয়ারা
জ্বলে গেল -দীর্ঘশ্বাসের নদী
জ্বলে গেল -সতীত্বের পালক
জ্বলে গেল - আলতা-ছাঁকা দেহ।
.
শুধু পাঠ করো। পাঠ করে দেখ একবার -
নারীর মানুষ হয়ে ওঠার অবশিষ্ট গল্প ,
সেখানে রৈ-রৈ করবে এটি নাম
'রাজা রামমোহন।'
===
.
বিপ্রতীপ
.
যদি বলি শাড়ি পরো, পরো তুমি মেক্সী
না না আজ আর মেক্সী নয়,
যদি বলি ভাত রাঁধো, রাধো তুমি পায়েস
না না আজ আর মিষ্টান্ন নয়।
.
যদি বলি আসো পাটিসাপটার মতো
খানিকক্ষণ জড়াজড়ি করি
মেঘ ভাঙা রোদ্দুর লজ্জায় যেন
ফিরে যায় মেঘের ঠিকানায়,
ঝুম বৃষ্টি টিনির চালে শুয়ে-শুয়ে
যেনো তবলা বাজায়
জ্যৈষ্ঠের মাছি গুলো রসালো ফল ফেলে
যেনো আমাদের শরীরে উৎকট গন্ধ খুঁজে
বেড়ায়।
.
কিন্তু তুমি; রোদ আর শিশিরের এম্বোডারিকরা
উষ্ণপথ খানিকটা না হেঁটেই, বরফ কলে
নিঃশ্বাস ফেলতে চাও।
.
যদি একটি নিস্তব্ধ রাতকে পাঁজাকোলা করে
দুইটি মানুষের বেঁচে থাকার গল্প বলি,
প্রেমের শেষ পদাবলী পড়তে থাকি,
যদি একটি চরণচিহ্নহীন বিচ্ছিন্ন দ্বীপে
দুইটি মানুষের সংগ্রামী জীবনের স্কেচ আঁকি,
.
যদি দলছুট দুইটি পাহাডের মাথা ঠোকাঠুকি করে
জন্মাবধি দাঁড়িয়ে থাকার, সংকল্প আর স্বপ্নের
কথা বলি,
.
তখন কামারের হাপরের মতো
তোমার মুখমণ্ডল থেকে আগুনের তারা ছটকায়
তোমার পিঠের সমতলে সবুজাত বৃক্ষরা
যৌবনের যবনিকা ছিঁড়েফুঁড়ে হেঁটে বেড়ায়।
.
তোমার মাথার চাঁদী, কাঁধের পট্টি,
দেহতল ফিকে হয়ে যায়,
পদমূলে জমতে থাকে স্লেট ধূসর অদ্রতা।
.
আর একটি গুম্ফডোরা পাখি তোমার-
কলিজার ভেতরে অনবরত ঠোঁট কচলায়!
===
.
একটি ধ্বংসযজ্ঞ ও হিমালয় কন্যা
.
যখন আমি অনুভব করি কম্পন
তখন তুমি করো, তোমরাও করো
তোমাদের নগর কাঁপে, নগরের
ইট
ইমারত
সৌধ
ঐতিহ্যের পরাগে লালিত
সারিবদ্ধ মন্দির, প্রত্নতত্ত্ব, স্থাপত্য,
কোলহারা শিশুর মতো, ত্রাসে কেঁপে
কেঁপে ওঠে।
.
পর্বতগাত্রে বেস ক্যাম্পে পর্বতারোহীরা
তুষার ধ্বসে হিমাঙ্কের নিচে,
আড়তে জমতে থাকা মাছেদে মতো
এক মূহুর্তে ভুলে যায়, চোখের পর্দা
নামাতে।
.
'ধরহরা' টাওয়ারের ধ্বংসস্তূপের নিচে
হাজার হাজার মানুষ, বুকে হাত রেখে
হৃৎপিণ্ডটাকে একেকবার শক্ত করে চেপে
ধরে
মৃত্যুর নগ্ন হাত
কখনো তাদের গলা ধরে খামচে !
.
সুরম্য প্রাসাদ, কলকারখানা
অভিজাত মহিলা সেলুন
লাক্সারী হোটেল, বিদ্যানিকেতন
পূণ্য ভূমি, তীর্থ স্থান ছেড়ে মানুষ,
মানুষের স্রোত সাঁতরে, বুকের উপরে পা
পিষে
মায়ার বাধন ছিন্ন করে, ছাঁয়ার রেখা পাত
করে
হুড়হুড় করে, তিরতির করে, নেমে আসে
রাস্তায়।
.
যেন আজ একটাই ঘর, নাম তার পৃথিবী
যেন আজ একটাই ছাদ, নাম তার আকাশ!
.
গ্রীক দেবতা তোমার ত্রিশূল কে থেমে
যেতে বলো
আমরা আর দুর্যোগ চাই না !
আফ্রিকান দৈত্য তোমার চুলের ঝটা বন্ধ
করো
আমরা আর হতাহত হতে চাই না !
.
জাপানি মাগুর তুমি শান্ত হও, কাদায়
আড়মোড়া দাও,
আমরা আর তাণ্ডবলীলা চাই না
ভারতীয় চার হস্তী-
তোমার পায়ের কাছে, আমরা ক্ষুদ্র পিঁপড়ে
মাত্র
আমাদের মেরোনা, ধ্বংসযজ্ঞে মেতো
না
আমরা আর পিষ্ট হতে চাই না।
.
নার্স পুরানের সর্প, তুমি আর অভিশাপ
দিওনা
আমরা আর বিষে বিষে নীল হতে চাই না।
.
আমি সেই সব মানুষের কথা বলতে চাই
যারা বীরের মতো মানুষের দুর্দিনে রক্ষা
কবজ হয়ে
মানুষের পাশে দাঁড়ায়
যারা ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে, পানীয় জল
নিয়ে,
কম্বল কাঁথা নিয়ে, চিকিৎসা সামগ্রী
নিয়ে
মানুষের কাঁধে কাঁধ মেলায়।
.
আমি সেই সব মানুষের কথা বলতে চাই
যারা মানুষের কল্যাণে ধ্বংসস্তূপের উপরে
তাঁবু
খাটায়
শবদেহ গুলোকে টেনে টেনে
সৎকার করায়, আর প্রার্থনায় হারায়।
.