ইশতেহার
.
একটা যদি থাকতো আমার টাকার গাছ।
তেজপাতার মতো টাকা ধরতো গাছে।
বাদুর ঝুলে-ঝুলে টাকার ফল খেতো।
.
পাখিরা ঠোঁটে করে টাকা নিয়ে পালাতো।
স্কুলে আসতে যেতে, ছেলে-মেয়েরা টাকা
কুড়োত।
.
একটা যদি থাকতো আমার, টাকার গাছ।
ফেরি'অলার মতো, মোড়ে-মোড়ে -
ক্যানভাস করতাম। হাজারটা ট্রাক লোড
করে পথে-পথে ঘুরে বেড়াতাম। ইচ্ছে মতো
টাকা উড়াতাম।
.
খড়ের গাদার মতো, হতদরিদ্রদের
ডেকে-ডেকে একেকটা টাকার পাহাড়
বানিয়ে দিতাম। 'ফাইনান্স্ হেল্প প্রাইভেট
লিমিটেডের' কর্মীরা আমার, রাতদিন
কাজ করতো, দুর্গার মতো দশ হাতে,
কেবল টাকাই বিলোত।
.
একটা যদি থাকতো আমার, টাকার গাছ।
জিডিপির লক্ষ্য অর্জনের জন্য, বিনিয়োগ
বাড়াতাম। শেয়ার মার্কেট, নির্ঘাত কিনে
নিতাম। পদ্মাসেতু সহ- মেগা প্রকল্পগুলো,
বাস্তবায়নে কাজ করতাম। সামগ্রিক বাজেটের
ঘাটতি মিটিয়ে দিতাম।
.
যদি পারতাম টাকা দিয়ে, দুই নেত্রীর মন
কিনে নিতাম, একত্রে বসাতাম। সন্ত্রাসবাদ,
প্রাকৃতিক বিপর্যয়, দারিদ্র্য দুরিকরণে বিশ্ব
নেতাদের সাথে, এককাট্টা হতাম।
সাহায্যের হাত বাড়াতাম।
.
একটা যদি থাকতো আমার, টাকার গাছ।
ট্রাক ভর্তি বই কিনে, স্কুলে স্কুলে পাঠাতাম।
পথশিশুদের জন্য স্কুল খুলতাম। জেলায়
জেলায়-ক্যানসার হাসপাতাল, বানিয়ে দিতাম।
.
ক্ষুধার্তদের পেটপুরে, দামী রেস্টুরেন্টে
খাওয়াতাম। বসুন্ধরা সিটি থেকে, শপিং
করে দিতাম। প্রয়োজনে টাকা দিয়ে, হাসি
কিনতাম, তাদের মুখে ফোটাতাম।
.
একটা যদি থাকতো আমার, টাকার গাছ।
টেমস নদীর তীরে, একটা টাওয়ার বানাতাম।
স্বেতপাথরে গা ধোয়া টাওয়ার। সূর্যকে
ছেদ করা টাওয়ার। চাঁদের আসন দখল
করা টাওয়ার ।
.
তারপর ফোন দিতাম, বেলা বোসকে।
বলতাম -"টাকার গাছটা পেয়ে গেছি
বেলা শুনছ। এখন আর কেউ আটকাতে
পারবে না".......
==
.
ঘোর
.
বলো তোমার প্রভু কে? নীরবতা।
বলো তোমার দীন কি? নীরবতা।
বলো তোমার রাসুল কে? নীরবতা।
.
দুধের মতো সাদা সদ্যজাত কাফনের
ভাঁজ ঠেলে উঠে বসলেন কবি। গাদাগাদি
অন্ধকারে তার চোখ বেড়ালের মতো
জ্বলছিলো। নিঃশ্বাস থেকে আতরগন্ধা
পাপড়ি গুলো খসে-খসে পড়ছিলো। শ্যাম্পু
করা সিল্কি চুলে, কাদামাটি লেপটে ছিলো।
.
কেইস মাস্ক, আর্গানিক ক্রিম মাখা মুখে,
বাসি পাউরুটির মতো, ফাঙ্গাস আটকে
ছিলো। স্পা করা শরীর ফেটে- মৃত্যুর শ্লেষ্মা
শিশির বিন্দুর মতো-থকথক করছিলো।
.
কবি হাত বাড়ালেন ফেরেশতাদের দিকে।
চাইলেন কলম, একটা কবিতার খাতা।
মৃত্যুর পূর্ব সন্ধ্যা থেকে, একটি লম্পট
কবিতা কাটা মুরগির মতো; লাফাচ্ছিল
তার মগজের ভেতরে।
.
ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত কয়েদীর মতো ফেরেশতাদ্বয়
পাঁজাকোলা করে তাকে নিয়ে গেলেন
অজানার এক পথে। -তবে কি অগ্নিকুণ্ডে?
.
মাতাল বাতাস ঠিক তখন, দড়িছেঁড়া ষাঁড়।
খড়কুটো আর পাতাদের গুঁতিয়ে-গুঁতিয়ে
পরিস্কার করছিলেন কবরের সীমানা!
==
.
উদ্যাপন
.
ভাবো, তুমি ভিড়ে গেছ গো-মহিষাদিদের দলে।
ঘাস, বিচালি, ছানি-ভূষি, স্বাচ্ছন্দরুপে
পাচ্ছনা।
কিন্তু জাবর না কাটলে তোমার ঠিক ঘুম
আসেনা।
.
ওদিকে কাঁচা বাজারে আগুন তাই উচ্ছ্বিষ্টও
কিছু মিলছেনা। এ নিয়ে আছে তোমার
অনেক দিনের অভিযোগ। তবে অভিমানে
কিছুই বলছোনা।
.
ভাবো, দুধের সরের মতো মাঠে জমে যাচ্ছে
কুয়াশা। ফসলী জমির মেহনত শেষে,
তুমি ঘরে ফিরে দেখ, শিশ্নের ঝুলানো চামড়া
টেনে ধরে, কাঁদছে তোমার দুধের লিশু।
ওর প্যান্টের জিপারে হাত রাখতেই, মনে পড়ে
গেল তোমার, শৈশবের কোন ঘটনা।
.
ভাবো, কাঁকড়ের ঠোঙ্গার মতো থুবড়ে পড়ে আছে
তোমার গদি-ঘর। ভূঁইফোঁড়ের মতো পাওনাদার।
দাবীর মুখে তুমি চুপসে গেছ কবিরাজি শিশুর
মতো। এর ফাঁকেই কেউ একজন দেখে নিলো
তোমার স্ত্রীর স্নানঘর।
.
তাই প্রতিদিন কাজে যাবার আগে পণ করো
আর কোনদিন ফিরবেনা। পণ করো চান্নকে
মাঝপথে রেখে স্বিদ্ধার্থের মতো, মিশি যাবে
বাতাসে!
==
.
কিংবদন্তী হতে পারি
.
সাদা। আরো সাদা। রূহানি মালাইকদের
উর্দির চেয়েও উজ্জ্বল সেই... টি-শার্ট।
ঝুলছে...
অপর রেখায় গচ্ছিত একটি কাক। চিত্রে
দেখতে পাচ্ছি রাতের বিপরীতে দিন।
.
শুধু আইনস্টাইন কিংবা হালের জনি ডেপ
নয়। কিংবদন্তী যারা সবাই পরেছিলেন
এই টি-শার্ট।
.
এমনকি, মোটা থান-ধুতির সাথে, এটিই
পরিধান করে, গুড়ের বাদ্যি বাজাত-বাজাতে;
সময়ের স্টিমার থেকে, মাটিতে সোনার পা
ফেলেছিলেন রবীন্দ্রনাথের মতো প্রতিষ্ঠান।
.
টি-শার্ট টি পরে এখন আমি হাঁটা দেব
'খলিল জিব্রানের' কবিতার দিকে..
==
.
মেরি ওলেস্টন ক্রাফট
.
অনেক দিনের পরে, সুযোগটা পেলাম। হ্যালির
ধূমকেতু ছুঁতে যেমন বহুদিন অপেক্ষা করতে হয়।
কতদিন করেছি অপেক্ষা। কতদিন রুখেছি তার
পথ!
.
জানাতে হবে এখন তাকে সম্ভাষণ। প্রথম প্রেমের
সম্ভাষণ। চাই একগুচ্ছ ফুল। টকটকে গোলাপ হলে
ভাল হয়। কিন্তু কোথায় পাব গোলাপ? ছুটে
গেলাম ফুলের দোকানে। দেখি দোকান বন্ধ।
.
টুককরে মোত্তালেবকে দিলাম একটা ফোন।
বাইকটা নিয়ে চলে আয় দ্রুত -কুইক। সাঁ করে
দু'জন চলে গেলাম ফুল'আলীর বাড়ি।
.
সেদিন ছিলো বৃহস্পতিবার। কৃষ্ণ পক্ষের
ত্রয়োদশ তিথী। তার উপরে চলছিলো কিসের
একটা শ্রাদ্ধ। ফুল নয়। বেবাক বিকিবাট্রাই
বন্ধ। কি করি, কি করি। বাইকের সাইলেনসারের
মতো মাথায় ধরে গেল আগুন।
.
অগত্যা পথে যেতে-যেতে কিনে নিলাম
কাগজের ফুল। স্বাদ, বর্ণ, গন্ধহীন কাগজের
ফুলে হয়কি আর প্রথম প্রেমের সম্ভাষণ?
.
সুগার মিলের অপজিটে তাই দত্তক নিলাম
চার ডিসমেল জমি। সেখানে চাষ করছি
আইসবার্গ গোলাপ সহ, দেবী ভেনাস-এর
পায়ের রক্ত থেকে জন্ম নেয়া হরেক রকম ফুল।
.
দৈব্য বাণী সহ আজ ঈশ্বরের পুত্র এসেছিল।
এই ফুল না ফোটা অব্দি-'মেরি ওলেস্টন ক্রাফট'
অপেক্ষায় থাকবে আমার...
==
.
ড্রিমস্
.
সত্যি কথা বলতে কি সে একটু কেমন কেমন!
হারমোনিয়াম-জাতীয় একটা যন্ত্র
তার গলায় ঝুলানো
কিন্তু সে সদাই নিশ্চুপ!
.
সত্যি কথা বলতে কি সে একটু কেমন কেমন!
পিঁয়াজগাছের ডাঁটার মতো
লম্বা হতে হতে কিছুটা ভেঙে পড়ার উপক্রম
কিন্তু তা নিয়ে একবিন্দু নেই তার আফসোস!
.
সত্যি কথা বলতে কি সে একটু কেমন কেমন!
বিনা মেঘে চোখ ফেটে
ড্রপারের মতো ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি...
কিন্তু সেখানে যতিচিহ্নের ব্যবহার, একদম
নিষিদ্ধ।
.
সত্যি কথা বলতে কি সে একটু কেমন কেমন!
ঝামা ঢিলের মতো দলা-দলা চোখ
আর বিষ মাখা নীল ঠোঁটে
হঠাৎ একদিন -
দাঁড়াযুক্ত কালো পিঁপড়ের গালে
আঁচ দিতে গিয়ে নিজেই খেল ঠোকর।
.
সত্যি কথা বলতে কি - আমি নিজেও
একটু কেমন কেমন!
শত-শত ছুঁচো-দৃষ্টির কড়াকড়ি তাচ্ছিল্য করে
ইদানীং মেয়েটিকে নিয়ে, শধু স্বপ্নেই ভেসে
যাচ্ছি!
==
.
অফটপিকঃ
.
বৃক্ষেরা যদি হেঁটে-হেঁটে যেতো
মানুষের মতো জোরে
মানুষেরা যদি বৃক্ষের মতো
দাঁড়াতো চুপটি করে।
.
সখ করে যদি পাখিদের দল
আফিস করতে যেতো
মানুষেরা যদি রাতদিন ধরে
পাখিদের বকা খেতো।
.
ভোরের শালিক রে'নকোট খুলে
বক্তৃতা যদি দিত
লক্ষ্য জনতা সেই কথা শুনে
সত্যকে বেছে নিত!
.
আষাঢ়ের নদী মানুষের পথে
হেঁটে যদি চলে যেত
নদীর মতন চলতে-চলতে
মানুষ শিক্ষা পেতে।
.
ভাতের থালায় দূরের আকাশ
হতো যদি সাদা ফুল
মানুষেরা তবে আকাশের মত
করতোনা আর ভুল!
_
ছন্দঃ মাত্রাবৃত
==
.
ক্রান্তি।।
.
গাছের শেকড়ের মতোই শুকিয়ে যাচ্ছে জেরিন!
ফুসফুসে চুপসে গেছে ধারালো 'আইস রেইন...
.
সাইনবোর্ড ধুয়ে ফেলেছে তার নাম।
শিশুপার্ক বহন করছে চালতা ফুলের সাদা শোক!
ঝুলানো খাঁচাটি যেন কয়লাস্তরে পলি পড়া শূন্য
প্রাসাদ।
বাইসাইকেল পড়ে আছে নিয়ে স্পোকের ভেতরে
ধূসর সন্ধ্যা।
এখানে সবটুকু আলো প্লাবিত মুদ্রার আয়ুর্বেদ।
.
বাতির সরু পলিতার মতোই শুকিয়ে যাচ্ছে
জেরিন!
ফুসফুসে চুপসে গেছে ধারালো 'আইস রেইন'...
.
বাস্তুসংস্থান থেমে গেলে, মানুষ মূলতঃ মৃত্যুর
ফুটন্ত হ্রদে ছুঁড়ে দেয় জীবনের মারবেল।
জাহাজের পাটাতন ছিদ্র করে উপভোগ করে
জীবন ও মৃত্যুর সন্ধিক্ষণ। আলো-ছায়ার
ভেতরে ঝেড়ে ফেলে নিঃশ্বাস!
.
চক-স্লেটে লেখা বর্ণের মতোই মুছে যাচ্ছে
জেরিন!
ফুসফুসে চুপসে গেছে ধারালো আইস রেইন...
_