কবি আবুল হাসানকে ১৯৬৯-৭০ সময়ে কবি হিসাবেই চিনি। পরিচয় হয় শরীফ মিয়ার কেন্টিনে। মাসিক গণমন ও সাপ্তাহিক আমাদের কথা পত্রিকার জন্য লেখা দিতো। আমি ফরিদপুর থেকে ঢাকায় বেড়ানো এবং মাসিক গণমন ও দৃপ্ত বাংলা পত্রিকার জন্য লেখা নিতে আসতাম। সাধারণত ১৯৬৮-৬৯-৭০ সালে এসেই বিভিন্ন হলে যেমন জগন্নাথ হলে মিহির কর্মকারের রুমে, এলিফ্যান্ট রোডে আমার শিক্ষক আবদুল লতিফ ভূইয়ার ভাই আবদুল মজিদের মেসে, আর ১৯৭২-৭৩ সালে পুরানা পল্টন ডাঃ নেওয়াজের বাড়ীতে, মানিক নগর আমার ক্লাসমেট আমিনুল ইসলাম হেলালের বাবার বাসায় থাকতাম। আবুল হাসানের বোনের সাথে ঘনিষ্ঠ ছিলো হাফিজুর রহমানের এবং পরে বিয়ে হয়। আর তখন আমি, আতাহার খান, মাহমুদ শফি, আলী ইমাম, হাফিজুর রহমান, হাসান হাফিজ, নাসরীন নঈম, আবু করিম, কামাল চৌধুরী এরা সবাই আমাদের সিনিয়র জুনিয়র মিলে একটা সুন্দর সম্পর্ক  ছিলো। আবুল হাসান ১৯৭৬ সালে ঢাকা মেডিক্যালে মারা গেলো। মারা যাবার প্রায় ৭ বছর পর সপ্তম মৃত্যু বার্ষিকী অনুপ্রাস পালন করলো। সবাই মিলে ভাবলো যে কবিদের জন্ম-বার্ষিকীটা আমাদের পালন করা দরকার। আর আবুল হাসান ঐ সময় তরুণ কবিদের মধ্যে সবচেয়ে ভাল লিখতো এবং জনপ্রিয় ছিল। এজন্য অনুপ্রাসের সাথে জড়িত, ডেইলী পিপলস ও বাংলাদেশ টাইমস পত্রিকার আনোয়ার জাহিদ (পরে এরশাদের তথ্য মন্ত্রী) আবুল হাসানের কলিগ বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে অনুপ্রাসের আয়োজনে সপ্তম মৃত্যু বার্ষিকী পালন করে। এই অনুষ্ঠানের ঘোষণা অনুযায়ী কবি ও গীতিকার খোশনূর নিজ অর্থায়নে বনানী কবরস্থান বাঁধাই করে দিলো। আর আবুল হাসানের বন্ধু মাহফুজ খান কবরের জায়গা কিনে দিলো। ৮ম মৃত্যু বার্ষিকী ও জন্ম বার্ষিকী পালন করার আগে বরিশাল গ্রুপের কবি হাফিজুর রহমান গং ও কতিপয় কবি মিলে বাধা দিলো। বললো অনুপ্রাস কবি আবুল হাসানকে নিয়ে ব্যবসার ধান্ধা শুরু করছে। ইতোমধ্যে ৮ম মৃত্যু বার্ষিকী পালনের জন্য সুভ্যেনির, সেমিনার করে আবুল হাসানের লেখা দেশে বিদেশে তুলে ধরার সিদ্ধান্ত নেয়া হলো। ঐ কথা শুনার পরে অনুপ্রাসের কবিরা সিদ্ধান্ত নিলো না ভাল কাজ করতে গিয়ে সমালোচনায় পড়ে বদনাম কামানোর কোনো দরকার নেই। তারপর বন্ধ করে দেয়া হলো কবি আবুল হাসানের জন্ম -মৃত্যু বার্ষিকী পালন করা। এরপর আর কোনোদিন শুনিনি আবুল হাসানের জন্ম-মৃত্যু বার্ষিকী কেউ পালন করেছে। গত ২০১৬ সালে ফেব্রুয়ারী মাসে অনুপ্রাসের একুশে কবিতা উৎসবে কবি আবুল হাসানের বন্ধু ও কলিগ সেই মাহফুজ খান এসেছিল। আবুল হাসানের বিষয়ে এই অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখার জন্য কিন্তু সময়ের অভাবে আর সেটা হয়ে ওঠেনি। ইতোমধ্যে মাহফুজ খান মারা গেলেন। তবে কবি আবুল হাসান বাংলাদেশের স্বাধীনতায় যারা বিশ্বাস করেনি তাদের সাথে অর্থাৎ ৫১ জনের স্বাক্ষর করা তালিকায় তিনিও একজন। ১৯৭১ সালের ১৪ আগস্ট পাকিস্তানের সংহতি রক্ষা আন্দোলনে বিবৃতি দিয়ে একটি তালিকা মোট ৫১ জন স্বাক্ষর করেছিল। তার মধ্যে একজন কবি নির্মলেন্দু গুণের বেডমেট এই কবি আবুল হাসান। স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে ছিলেন জগন্নাথ কলেজের অধ্যাপক পরে বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক ড. আশরাফ সিদ্দিকী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী দিন মোহাম্মদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেন, সনেটিয়ার আবদুল কাদির, কবি বেনজির আহমেদ, ট্রিওলেট লেখক আবদুস সাত্তার,  সৈয়দ আহসান হাবীব, শাহাবুদ্দিন আহমেদ সহ অনেকেই। কিন্তু ঐ তালিকায় স্বাক্ষর করেননি পল্লী কবি জসীমউদদীন ও শামসুর রাহমান সহ আরো অনেকে।