নির্ঝরের স্বপ্ন ভঙ্গের মত জেগে ওঠে আমার ভালোবাসা।
কোজাগরী পূর্ণিমার অবগাহনে ছিল সায়নীর প্রতিজ্ঞা
তার চোখের সাগর সৈকতে শুধু ভেজা প্রেমের আলাপন  
আর প্রানে বাসা বাঁধা হিমেল কামনা।
অরন্যের দিনরাত্রির মত
কেটে ছিল আরও কিছু দিন....
ঝড় উঠে ছিল
বিষণ্ণতার ঝড় গ্রাস করেছিলো আমাকে
যখন সায়নী পড়তে যায় দূর কলেজে।
আমার চারপাশটা যেন ধূসর শুন্যতা
টুকরো টুকরো আমার মৃত স্বপ্নেরা
পরাজয়ের গ্লানি নিয়ে ভেসে বেড়াত।
সমস্ত অতীত পিছুটান নিঃশেষে মুছে
দিয়ে স্বার্থপর ভাবনায় হৃদয় ভাগ করে নিয়ে  
নির্বিকার চলে যাওয়া।
হৃদয়ভাঙ্গা কাঁচবৃষ্টি শেষে করাল মৃত্যুর মত
পরাজিত মন নিয়ে পরিত্যক্ত বিকালের
বিষণ্ণ ছায়াপথ মাড়িয়ে
আমি এসেছিলাম সুদুর এই কলকাতায়।


সায়নী তোমার সব স্মৃতিগুলো আমি ডায়েরীর
পাতায় সামলে রাখছি....
কত বর্ষা আমরা ভিজেছি
তোমার ঠোঁটে ঠোঁট রেখে
অশ্বথ গাছের তলে—
দিঘির জলে শালুক পাতার সাথে তোমার প্রেম
শালুক পাতার জলে এখনও লেগে আছে
তোমার ঠোঁটের স্পর্শ।
সায়নী –  কোলকাতার এই বর্ষায়
আমি ভিজতে থাকি ভিজতে থাকি...
এত ভিজি যেন মনে হয়
আমার কিশোরী মেঘবালিকা সায়নী
আমাকে জাপটে ধরে আছে।
তোমার দেওয়া স্বপ্নগুলো ফিরে আসে
বার বার দুঃস্বপ্ন হয়ে।
তোমার দেওয়া কান্নাগুলো আমাকে কাঁদিয়ে যায়।
সায়নী বর্ষা শেষে চিঠিতে তুমি লিখেছ
‘তোমার দেওয়া বেদনাসিক্ত স্মৃতির
সাথে আমার একান্ত বসবাস— একাকিত্বের কাছে
অসহায় আমি।‘
--- হেমন্তের সন্ধ্যায় তোমার সাথে দেখা
লাল  দীঘির ধারে। আমি দাঁড়িয়ে আছি ধীর পায়ে
সলজ হাসি নিয়ে তুমি এলে –
তোমার নীরব হাত দুটো  আমার হাতে
আমি সীমারেখা পার হয়ে দেখি
ফোঁটা ফোঁটা শিশির জল
তোমার ঠোঁটে।
সায়নী – তুমি এমন সাবলীল ভাবে আমাকে জড়িয়ে ধরলে...
আজও আমি ভুলতে পারিনি
তোমার সঙ্গে সেটাই ছিল শেষ দেখা—


বিস্মরণের রাতে আমি যখন ডায়েরীর
পাতা উল্টায়
তোমার কবিতাগুলো ঝাপসা হয়ে আসে।
আমার হৃদয়ের উর্বর জমিতে
জন্ম নেয় তোমার স্বপ্ন আর আকাঙ্ক্ষারা।
পৃথিবীতে বিকশিত হওয়ার প্রত্যশায়।
জানি তুমি পথ চেয়ে বসে আছো
সময় তো কম নয়
কুড়ি বছর...
সায়নী ..
আমার স্বপ্নের মাঝে তোমার অতৃপ্ত
আত্মার উপস্থিতি আমাকে চিন্তিত করে-
আমার পাণ্ডুর মুখে এক সাগর পুঞ্জিভূত
মেঘ আর যন্ত্রনাময় শুন্যতা আর অকাল
দীর্ঘশ্বাস। তোমাকে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষায়
আজও আমি বেঁচে আছি।
সায়নী .. এবার তুমি বি.এড. এ ভরতি হয়েছ
আর আমি চতুর্থ বর্ষে সার্জারি ক্লাসে।
অ্যানাটমীতে আমার হাত ভালই ছিল।
মানুষের দেহের শিরা-উপশিরাগুলো স্নায়ুগুলো
গ্রন্থিগুলো তোমার স্বপ্নের মতই
আমার মাথায় ঘুরপাক খেত।
                                            ক্রমশঃ