প্রকৃতির কোলে মাথা রেখে
ঘুমিয়েছিলাম—
তরুন ঊষার ফাগে
বন্ধুত্বের দাবি নিয়ে
ভাঙ্গিয়েছিলে ঘুম
সূর্য্যকে সাক্ষী রেখে
পরায়েছিলে বন্ধুত্বের একখানি মালা।
রক্তিম আলোর নিশা  
সেদিন জাগিয়ে ছিল প্রানে
বেঁচে ওঠার নতুন প্রেরনা।
তোমার হাতের ছোঁয়া
বার বার আমায় ডেকে এনেছিল
ওপার থেকে এপারে তোমাদের
গুল্মঢাকা গুহায়-
মনে আমার প্রবিষ্ট হল
রঙিন ঝরনা, জাগালো কম্পন
আমার নিঃসাড় ম্রিয়মান
মনের সত্ত্বাতটে।
আজও বেজে চলেছে তার সুর
নহে দূর বহুদূর
সাগর বেলায় আছড়ে পড়ে
একের পর এক তোমার স্মৃতি-
আমার যে ভাষায় ছায়া ফেলে
সমুদ্র থেকে উঠে এসেছিলে তুমি
জলকন্যার মত রহস্যময়তা নিয়ে ।
আজি বাজে মনে মোর
তোমার বন্ধুত্বের দাবীই  সর্বস্ব আমার
তোমার অস্তিত্ব খুঁজি
আমার কলমের ভাষায়।
বন্ধুত্বের জ্বালা বুকে নিয়ে চলিয়াছি
কোথায় কোন অজানা দেশে
জমায়েছি পাড়ি  
বলিভিয়ার জঙ্গলে কিম্বা আল্পস্‌ পর্বতে।
জীবন আজ বিপন্ন –
অথচ তোমার বন্ধুত্ব রক্ষার ব্যর্থতা বোধ
আমায় ভয়ানক ক্লান্ত করে।
কলমের চোখে চোখ পড়তেই অকুণ্ঠ
রবে ডুকরে ওঠে মন
ওরে কে আছিস তোরা
আমায় নিয়ে যা কবরের পাশে-
  
যে বুকের রক্ত দিয়ে  
বন্ধুত্বের পথকে রাঙিয়ে ছিলাম
সে রক্তের ভাষার কাছে আনাড়ি
রয়ে গেলাম আজও আমি।
কেউ আসে না কাছে
কেউ বলে না – কেমন আছো কবি
যে মালা একদিন তুমি পরায়েছিলে
মোর গলে আজি কি তাহা মিথ্যা
বল বন্ধু তোমার নামে যে জয়গান
গেয়েছিলাম—
পাশে ছিলে তুমি ।
বন্ধুত্বের কুঞ্জবিতান নির্মাণ কালে
তোমার সাথে আলাপ
রাতের অন্ধকারে প্রিয়ার বুকে
মুখ রেখে আমি খুজেছিলাম
এক নতুন জীবন।
তোমাদের ভালবাসায় আজও বেঁচে  
আছি আমি। তোমাদের স্নেহ, প্রেম
ভালোবাসা ফিরায়ে এনেছে মোরে
তোমাদের কৃপা মিটায়েছে মোর ক্ষুধা।
পারিব না শোধিতে তোমাদের ঋণ
রয়ে গেলাম ঋণী—
আমি তো ছিলাম দীন দৈন্য
বেশী গৌরববিহীন।
অন্ধকারে কাটিয়েছি অনেক বছর
আমার উপর বয়ে গেছে
কত বৈশাখী ঝড়।
কত রজনী আমার কেটেছে সঙ্কটে
নদী তটে বসে বেহালায় দিয়েছিলাম
টান – ‘বেলা যায়’ বলে বেজে ওঠে
বীণা-
কেউ তো দেয় নি সাড়া, ছিল সব
উদাসীন প্রতিবেশ সারাক্ষণ।
শুধু বন্ধু তুমিই আমার বীণায় দিলে গান
আমার কালো জীবনে এনেছিলে আলো
তবে সূর্যোদয় কেন দিলে  
পাবই যখন অন্ধকার রাত।
যে রজনীগন্ধা আমার জীবনে
ফুটেছিল—
আজ তার ঝরে যাওয়া ক্ষণ
বন্ধুত্বের মলিনতার সমান।
যে চুম্বন একদিন দিয়েছিলে
মোর ভালে
উষ্ণ বাতাস বহি আনে তার প্রমান-
শিহরিয়া উঠি। যাকে বহুবর্ষ ধরি
আঁকড়ি ছিল প্রান আমার।
খর পূর্ণিমার রজনী বহিয়া যায়
দ্বার রুদ্ধ করি তোমাদের কবি
বসিয়া আছে একাকী-
বন্ধুত্বের বন্ধন আজি ক্ষীণ
হতে ক্ষীণপ্রায়। লজ্জা ঘৃণা
অবহেলার দায়ে বিকার গ্রস্ত
কবি বন্ধু তোমার।
তুহিন বাতাসে তারই আভাস।
পূব গগনে তারই ঘনঘটা
কালের ভালে হোক না লেখা
তোমার বন্ধুত্বের অমর কাহিনী।
এবার তোমরা দাও তোমাদের ভাষাহীন
কবিকে একটু শান্তির আশায় বাঁচতে।  
পালহীন এক নৌকায় চাপিয়ে
বিশাল সমুদ্রের তরঙ্গাঘাতে ভেসে যাক
তোমার কবির নৌকাখানি
কেউ জানবে না কে এসেছিলো
তোমারই জীবনে—
রুদ্ধ কর দ্বার
পাপের স্পর্শ যেন না লাগে আর।
তোমার দুয়ারে একদিন
যে কলতান উঠত।
আজ মুঝে দাও তারে
সোনালী রঙয়ের খাতায়
তোমার কবির কবিতায়
কালিমা দাও ঢালি –
স্তব্ধ হোক তোমার কবি
শুকিয়ে যাক তোমার
কবির হৃদয়।
আজ ভাষাহীন তোমার কবি
মূক বধির স্তব্ধ বিপন্ন তোমার কবি ।
বন্ধুত্বের বন্ধন লাগি
অসহায় কবি ক্ষমা কর তারে।