বেলা শেষে কেউ এসে চুপি চুপি বলে গেল,
স্মৃতির জানালাটা খুলে রেখে দাও,
তুমি তো একা বড় গোধূলি বেলায়!
ভাবনার অলিন্দে বসে শীতের বিকেল,
উদাস দৃষ্টিটা পিছনে ফিরে ফিরে চায়!


তখন আমি বিন্দু থেকে বৃত্ত গড়ছি
জননীর দেহের ভেতর,
একদিন নির্লজ্জের মত অবনী তলায়
আব্রুহীন উদ্বাস্তু হবার যন্ত্রণায়
চিৎকার দিয়ে দুঃখটা জানিয়ে দিলাম!


অপয়া ধরণীতে ক্ষণে ক্ষণে রজনীতে,
দিবসে সূর্য এসে দেহকে বাড়ায়,
দিনে দিনে মাসে মাসে বছর গড়িয়ে শেষে
মনটা হৃদয়ে এসে জেঁকে বসে হায়!


বোধহীন শৈশবের সীমানা মাড়িয়ে
দুরন্ত কৈশোর কে ছুঁয়ে দিলাম,
বসুধা বড় হ’লো চোখের তারায়
কৈশোরের গন্ডি থেকে সহসা সেদিন
তারুণ্য ধরে নিয়ে যায়,
যুদ্ধ যুদ্ধ খেলে মরণ খেলায়
স্বাধীনতা ছিনিয়ে নিলাম!
সেই তো ছিল আমার প্রথম বিজয়!


সোনালী সবুজ লালে রণবীর সেজে সেজে,
নতুন একটা ইতিহাস গড়ে
জননীকে স্বাধীন স্বদেশ খানী উপহার দিলাম!


তবু আমি দুখী, দুঃখটা কারে বলি;
অজস্র স্বপ্নগুলো একে একে ঝরে গেল
অভিশপ্ত প্রজন্ম নয় বিনয়াবনত!
মুখোশের আড়ালে হাসে দানব শত শত!
লোভের আগুনে ভোগের ফাগুনে
সব করে ভস্ম ওরা অর্জিত সাফল্য সকল,
আল্পনা এঁকে এঁকে ঢেকে দিতে চায়
কদর্য চেহারার আরণ্যক স্বভাব,
অঙ্কুরে বিনাশীতে চায়, সত্যকে করে ভয়,
কলমের ডগায় তোলে কবিতার ছন্দ!
বৈশাখী ঝড়ে এলো মেলো চুলে
সর্বগ্রাসী চৈতালী হয়ে আসে মোহিনীর বেশে!


মাদকানন্দে বিভোর হিংস্র পশুর মত
তছনছ করে দিয়ে সব কিছু করে জয়
অথচ মূল্যবোধে অবিরাম চলে ক্ষয়!
শান্তি-শক্তিতে অসম যুদ্ধ চলে,
ধরণী-তরণী খানী দুই কূলে টানাটানি
মরিবার ফুরসৎ নাই!


নীরবে নিভৃতে ইথারে কামিনী ডাকে
চরাচরে নিয়মের পরিসীমা নাই,
জ্ঞানী-গুনী দলে দলে বিভক্ত মিছিলে ভাসে,
সমৃদ্ধ সমীরণে ভেসে যায় সুখের আশায়!
নগরে অরণ্য ছেয়ে যায়!


কালজয়ী বিহণে নিঃসঙ্গ জনতা কাঁদে
ত্যাগের মাধুর্য কারো হয় না আপন,
স্ববশ হয়েও করে আজও কারাবাস,
যেন ওরা অচ্ছুৎ, পিশাচের দাস!
অসুস্থ রীতি এসে হানা দেয় হেসে হেসে
বন্ধ কর সব খিড়কীর খোলা পথ,
ছলনা মোহিনী বেশে, যবনিকা রেখেছে ঘিরে
আমার সোনালী মায়ের সুখের আবাস!


তার চেয়ে সেই ভাল
শূন্যতে ফিরে যাবার ইচ্ছে প্রকাশ,
রজনী পিছনে ফেলে ফিরে যেতে চাই নীড়ে,
ভয়ানক পৃথিবীটা মানুষের মনের আশা
করিয়াছে গ্রাস!
আমার তো আর কিছু নেই!
বিবর্ণ উঠোন জুড়ে চেয়ে দেখ পড়ে আছে
স্বপ্ন জড়ানো সেই পরাজিত কবিতার
বিভৎস লাশ!