সেদিন হঠাৎ দেখা হয়ে গেল
সূর্যের ঝলমলে আলোয় রূপোর নুপুর পায়ে
আমার চোখে অবাক করে দেওয়া
একটা প্রজাপতি
আমি এমন বিস্ময় দেখিনি কোনদিন
যতবার চেয়েছি তার কাজল কালো চোখের কোনে
ততবার অবাক হয়েছিলাম
সাহস ছিল না বুকে , একবার কাছে ডেকে নিয়ে  
প্রশ্ন করি , কে গো সুন্দরী তুমি ? কোথায় থাকো ?
আজকের এই জ্যোৎস্না মাখা সকালে
হিরে মাখা আলোতে , কোথায় চলেছ তুমি ?
একটা পুকুর পেরিয়ে এলাম , পার হয়ে এলাম একটা সিলভার সলুসানে
ডুবে থাকা নদী , পার করে এলাম পাহাড় , জঙ্গল অনেক অনেক
তবু ভুলে যেতে পারি নি রাজকন্যা তোমাকে ।
ঘন্টা বাজলো দূরে মন্দিরে ; ঢং , ঢং , ঢং ওই শোনো
মনে হয় পূজারী এসেছে প্রসাদ নিয়ে
সিংহাসনে তাকিয়ে দেখি অবাক চোখে
আমার রাজকন্যা ভানুমতি ; আজ বসে আছে পূজার বেদির ওপরে ।


একদিন গ্রীষ্মের দুপুরে , ক্লান্ত শরীর ঘেমে চান
তৃষ্ণায় পাখি ছটফট করছে , দুধার ঘেষে অস্থির পথে
হঠাৎ দেখা তোমার ।
একবার ভাবলাম এমন সুযোগ ছেড়ে দেওয়া অন্যায়
ঠিক তার পরপর মনে দেখা দিলো লজ্জা মিশিয়ে ভয়
যদি তোমার বুঝতে ভুল হয় কোন
তারপর শুনেছি তোমার কষ্ট ভীষন , সমস্যায় জড়িয়ে
এতো বড় দায়িত্বে আমি কি পারবো এটলাস হতে ?
কেমন যেন হচ্ছে , ভিতরে ভিতরে
কে যেন হাঁক পাড়ছে বারবার ---
মনে হচ্ছে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাবো এই মুহূর্তে
মনে হচ্ছে আবছা হয়ে আসছে ঘুঙুর শব্দ সব ।


সূর্য পশ্চিমে এসে দাঁড়িয়েছে । লাল হয়ে আসছে আকাশ ।
ঘন্টা বাজলো আবার দূরে মন্দিরে ; ওই শোনো
ঢং , ঢং , ঢং ....
পাখিরাও যখন উল্টো পথের পথিক
প্রকৃতিও যখন হয়ে আসছে ম্লান ;
নিভে আসছে সমস্ত আলো যখন ---
তখনও হৃদয়ের ক্ষীণ ওই দ্রুব তারার হাতটি ধরে
আমি এগিয়ে চলেছি


শুধু একবার তোমায় চিনবো বলে
বন্ধু নয় ; বন্ধুত্বের থেকে একটু বেশি কিছু
পরিচয়ের লোভে ।


এর পর থেকে শুধুই কবিতা
দিন নেই , রাত নেই ... গ্রূপ নেই , লবি নেই
আছে শুধু আবাল ভাষা আর আঁটি বাঁধা কবিতা
ন্যাংটো পোঁদে ভিড় রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে
কেঁদে ওঠা শিশুর আবদার
কবিতা ।
বারবার একই কথা , একই জিনিসের চাহিদা
বোঝেনা কেউ -- এটা চকো নয় , এটা খেলনা নয়
একটা খেলা শুধু ।
তাই চাই আমার -- ওই মেয়েটি ... দে ডেকে দে
একবার ছুঁয়ে দেখি , ও তৈরি হয়েছে কি দিয়ে ?
ডাক ওকে কাছে .... জিজ্ঞাসা করে দেখি
.....কি নাম ?
.... কিসের এতো অভিমান তার ?


এদিকে কচি খোকার বায়না , ভানুমতির খেলাটুকুর জন্য
ওদিকে সপ্তর্ষি মন্ডল উলঙ্গ এক চিন্তায় গভীর এই ভাবনাটুকুর জন্য ।


হাজার বছর পেরিয়ে গ্যালাক্সির খোঁজে সকাল সকাল ফিরে আসি
নদীর ধারে । সেই যেখানে রোজ সকালে ভানুমতি আমার
ভিজে কাপড় বুকের খাঁজে জড়িয়ে ঘরে ফেরে ।
তখন ভোর হয়েছে সবে । সূর্যের হালকা আলো এসে পড়ল তার স্তনে
গাছের আড়ালে লুকিয়ে দেখছি , পাখিদের দল উড়ে গেল একে একে
এগিয়ে এলো ভানুমতি ----
পৃথিবী জাগেনা যখন তখন ঈশ্বরীয় খেলা চলে প্রকৃতির মাঝে
সকালের প্রথম আলো , ভিজে কাপড় , ভিজে যাওয়া শরীর
আর এই জঙ্গল --- বনবিবির এটাই আবির্ভাবের সময়


আমার আর পরিচয় হল না আজ ।


বন্ধুত্বের দাম অনেক বেশি
আমি অতো বড়লোক নই
ভালোবাসার দাম অনেক অনেক
অত টাকা আমি কোথায় পাই ??


অতএব , একলাই আমার পথ
গরিবের কুঁড়েঘরই আমার সব ।
অনেক সহজ ছিল না শুভ দৃষ্টির সময়টা
বৃষ্টি ভিজেছি , খুব যত্নে সামলেছি নিজেকে
দূর থেকে বহুবার দেখেছি সকালের ভিজে শরীরের সেই
খাঁজকাটা শরীর , সেই পূর্ণাঙ্গ যৌবন তার ,
সেই মেদ পেটের নিচে , সেই ভোরের আলোতে দেখা বুক জোড়া
একবার নয় ; নেশার মতো প্রতিদিন , বারবার ।


অভ্যাস হয়ে গেছিল যখন সব । তুমি যখন নেশা হয়ে আমার রক্তে
মিশে গেছো শরীরে , ঘামের দুর্গন্ধে , ভিজে যাওয়া জিপের গন্ধে
তখন এক বর্ষা মাখা সকালে --- আমি পেয়েছিলাম
একটু আশ্রয় তোমার আঁচলের তলায়
সকালের আলোয় অন্ধকার হুগলির ধারে ।


এই টুকু সময় --- প্রথম জেনেছিলাম তোমায়
--- তোমার পরিচয়
--- তোমার মান অভিমানের গল্প
--- তোমার যোগাযোগ
আর একদম শেষে
--- তোমার নাম ; নীলাঞ্জনা ।
এরপর বহুবার দেখেছিলাম তাকে
রূপকথা থেকে বদলে যাওয়া বাস্তব অভিজ্ঞতায়
বহুবার হাতে হাত রেখে পেড়িয়ে গেছিলাম পথ
হলুদ নদীর বুকে বসে করেছিলাম ভালোবাসার শপথ
কুয়াশার গন্ধ গায়ে মেখেছিলাম দুজনে
শীতের হিমলতার মধ্যে গরম করেছিলাম শরীর
এক মগে গরম কফি একই কম্বলের আড়ালে বসে
করেছিলাম পান ।
নিকোটিনের পুরোনো অভ্যাস একদিন প্রকাশ পেয়েছিল
হাওয়ায় হাওয়ায় ...
তুমি নিজে হাতে ফেলে দিয়েছিলে মনে পড়ে
বলেছিলে তোমায় ভালবেসে এসব ছাইপাশ
যেন কোনদিন না পান করি ।।
বেশ কাটছিল দিন সকাল সন্ধে
কতবার তৃষ্ণা মিটিয়েছিল দুটো ঠোট তোমার
ওই তাল পুকুরের ধারে
তোমার শরীর আমার শরীরে মিশে গেছিল
তোমার বুক আমার খাঁচায় বন্দি হয়েছিল
মনে পড়ে কতবার এই মুখপোড়ার কার্নিশে ।
তুমি তখন আমি আর আমি; তুমি বলেই জেনেছিলাম
তোমার খোলা চুল , নরম বুক , মেদ ভরা পেটের খাঁজে
স্বর্গ রাজ্য বানিয়েছিলাম আমরা ।


এই ভাবে মজেছিল আমাদের দিনগুলি
শহুরে প্রেমের হাওয়ায় ফুটছিল বেশ লকলকে
প্রেমের কলি ।


আজ একটা টাটকা লাশ ঘুরছে । সেটা আমি । আরও কয়েকটা লাশ আমার আসে পাশে টেবিল ঘিরে বসে আছে । সকলেই বেশ হতাশ । কেউ বিয়ে হয়ে গেছে তাই আর কেউ বিয়ে হয় নি তাই । উভয় সংকটের এই দলে আমি বড্ড বেমানান । আমার গল্পটা অন্য , অনেকটা রাস্তা খাওয়া গোবরের মত ।


বোতল ওপেনার দিয়ে অর্ডার করা ক্যানগুলো খুলছে না । সকলে অস্থির । ওদিকে আমি গোটা ক্যানটাই খেয়ে নিলাম ঠিক যেমন দুঃখগুলো এতদিন খেয়েছিল আমায় । নাটকের পর্দা উঠে গেল । সূর্য জ্বলে উঠলো রঙ মঞ্চে । সিগারেট জ্বালানোর দেশলাই নেই তাই মঞ্চটাকে চাটতে থাকি প্রেমিকার যোনি ভেবে ।


নেশা আমাদের মধ্যে ঘর বানিয়েছে । লাশেদের মাথা একে অপরের সাথে হাতবদল করেছে । গল ব্লাডারে স্টোন পাওয়া গেছে -- সিমেন্ট আর বালি লিভারে মজুদ হয়েছে ।
একটা লাশ পাশের লাশের ঠোঁটে গিয়ে বসল । এরপর ওদের শরীর ঠেকবে , ঘষা খেয়ে স্ফুলিঙ্গ জ্বলে উঠবে । ডিম্  সিদ্ধ হবার আগেই মুখটা বাড়িয়ে দিই । ওদের আগুন এখন  আমাদের সবার বাঁড়ার মত ঝুলে ঠোঁটের দুফাঁক দিয়ে । লোকে অবশ্য সিগারেট বলে তাকে ।


লাশ ঘুরছে অনেককটা । আলাদা আলাদা । তবু সকলের একটাই ইচ্ছা


                                               প্রেমিক হওয়ার
                                               কিন্তু
    হতে পারেনি ।
বোধনেই বিসর্জনের আয়োজন করতে ! ঢাক ঢোল বেজে উঠতো !
এ উৎসব তো আনন্দের নয় ! মৃত্যু এক প্রেমিকের ।
ভালোবাসার যোনি ছেদ করে ঢুকে যাবো চলুন
ঘুরে আসা যাক তার সৃষ্টির গভীরে
প্রেমিকার হাত ধরে কাটিয়ে দেওয়া ঋতুচক্রে
চলুন না একবার প্রদক্ষিণ করে আসি আমরাও ।
ষষ্টি র পাতা লিখে গেছে কবিতায়
অসহায় অবস্থা , মিলনের জন্য উদগ্রীব মন
গঙ্গা টেমসে মিশুক না মিশুক , প্রেমিকের মন মিশে গেছে
প্রেমিকার হৃদয়ে ।
মদের বোতলগুলো অসহায় ভাবে চেয়ে আছে
একজন নেশাতুরকে আর কত নেশায় ভরাবে সে
বিসর্জনের জলে হারিয়ে যেতে যার বোধন
সামান্য রাম বা হুইস্কি কি আর সামলাবে তাকে !!


সপ্তমী খুলে বসলাম এবার ।
প্রথম দেখা , প্রথম কথা , প্রথম বার রাত জেগে
প্রেমিকাকে সাহস করে চুমু খাওয়া
এ যেন এক অপরূপ সময় , একটা সম্পদ ।
সেদিন সে ভাবতে নারাজ
ভবিষ্যতে কি হবে , আর
যদিও বা উল্টে গিয়ে পাল্টে যায় কিছু
সে দৃঢ় ভাবে বলতে প্রস্তুত ,
আই লাভ হার , সে শুধুই আমার --
অষ্টমীতে প্রেম , হৃদয় ছেড়ে শরীরে বাসা বাঁধে
ঘাড় থেকে স্তন ছুঁয়ে ভালোবাসা
জঠরে এসে দাঁড়ায় ।
নবমীর রাত বিষণ্ণ বসে । দুটো মেঘ আড্ডা জমিয়েছে
রাত পেরোলেই ফাঁসি হবে
পুলিশের কাস্টডিতে ততক্ষন কাটবে রাত
প্রেম ছিল না মেয়েটির মনে , বাড়ির কথায় সে ওঠে বসে এখনো
তাদের ঘোর আপত্তি , প্রেমিকার মনে বিষ ঢেলে দিয়েছে আজ ।


দশমীর চাঁদ আজ উদাস । মূর্তির সাথে জলে এসে পড়ল
একটা ভালোবাসার লাশ ।


দর্শক হতবাক । শুরুর আগেই একটা গল্প শেষ হতে চলেছে ।
তার চেয়ে অনেক ভাল হত বোধনে বিসর্জন হয়ে গেলে ।
অন্তত সূর্যটা তো নিভে যেত না ।


এদিকে জলে ভাসছে প্রেমিকের লাশ । ওদিকে সে হাসছে
আর বলে চলেছে অবিরাম --


"আজ খুন করেছ আমায় , কাল এই বুকেই ছুটে আসবে সময়
তোমার দুচোখে বইবে যমুনার জল --
সামনে আমার কবর , নাম তাজমহল " ।