স্নেহের খোকা,
        তোর চিঠি পেলাম,পাকাপাকি ভাবে তোর কাছে আসতে লিখেছিস।
জানি,এখানে বেঁচে থাকাটা খুব একটা আরামদায়ক নয়,
হাঁসপাতাল দশ মাইল,বাসস্ট্যান্ড দেড় কিলো-মিটার।লন্ঠনের আলোয়-
দেখতে খুব কষ্ট হয়,বয়সের সাথে-সাথে চোখের জ্যোতিটাও বড় কম।
তবুও জানিস,অসুবিধা হয়না। এখানের প্রতিটা কনা আমায় চেনে,
আমার ঘরের মাটির মেঝের প্রতি ইঞ্চি আমার মাপা,দেওয়ালে এখনও
তোর ছোটোবেলার ঘ্রান,কড়িকাঠে লেগে আছে তোর বাবার গান।
এসব ছেড়ে তোদের কলকাতার ফ্লাটে আমি থাকতে পারব না রে,
এখনও চোখের নিভে আসা আলোয় সন্ধ্যাবেলা,-সেই নতুন বউটাকে
দেখতে পাই তুলসি তলায়,শাঁখের শব্দ এখনও কানে বাজে,এই বাড়ির
রন্ধ্রে-রন্ধ্রে জড়িয়ে আছে আমার যৌবন,আমার মাতৃত্ব,আমার সংসার।
পারবোনা রে খোকা,তোর ফ্লাটের এসি ঘরের বাইরে গাড়ির শব্দ,ধোঁয়া,
জানালার কপাট খোলাই দায়,আমি এখানে দরজা খুলে ঘুমাই নির্দ্বিধায় ।
পারলে শিতের শেষে একবার আসিস,বৌমাকে আর ছেলেকেও আনিস।
ভালোলাগবে দেখিস । বুক ভরে একমুঠো তাজা হাওয়া নিয়ে যাস,
চোখ ভরে একমুঠো তাজা সবুজ নিয়ে যাস,দেখে যাস-মা ভালোই আছে।
শুধু ,তোর জন্য যখন মন কেমন করে,তোর বসানো শিরিস গাছের তলে
খানিক্ষন বসি,ব্যাস...! দেখে যাস সেটাও কেমন বড় হয়ে গেছে,
চারিদিকে ডালপালা মেলে--ওটা তোর জায়গা আগলে বসে আছে।
ভালো থাকিস,চিঠি লিখিস,মনখারাপ করিস না,আমি ভালো আছি।


                                    ইতি : মা...........