আজ আয়নায় দেখে অচেনা লাগল নিজেকে।
রোজ দেখি, দীর্ঘ পঁয়তাল্লিশ বছর দেখছি,
কপালের পাশের পাকা চুল গুলো,
মাস ফুরাতে যাদের ফুরিয়ে যায় কৃত্রিম ছোকরা থাকার অভিনয়,
রোজ দেখি।  
চোখের পাশের ভাঁজ গুলো, যাদের ঢাকবার ব্যর্থ চেষ্টা করে সকাল হতেই পুরু মেকাপের আচ্ছাদন তুলে দিই নিজের হাতেই,
রোজ দেখি।
এই আয়নার সামনে রোজদিন একটু একটু করে বয়স বাড়ার সব লক্ষণ গুলোকে স্পষ্ট হতে দেখি অসহায় ভাবে।
তবু হঠাৎ আজ নিজেকে অচেনা লাগল, কোনো দৈত্ব স্বত্তা যেন হঠাৎ করে তার বহুদিনের কারাগার ভেঙে বেরিয়ে এসেছে।
আয়নার এই আমি, আমি নই। তবে আমি কে?
আমার রোজদিনের চেনা আমিটাকে হঠাৎ পাল্টে যেতে দেখে ভয় হল।
অজানা আতঙ্কে মুখ ফিরিয়ে নিলাম।
পেছন থেকে সে বলে উঠলো
- "আবার পালাচ্ছো?"
আমি খানিকটা বিরক্ত হয়ে বললাম
- "পালাবো কেন! এই মিথ্যা আমার সহ্য হচ্ছে না, আমার আমি কে ফিরিয়ে দাও।"
সে হাসল,
খুব চেনা  তার হাসিটা, একটা অদ্ভুত অনুভূতি, যেন বহুদিনের হারিয়ে যাওয়া একটুকরো আনন্দ খুঁজে পেলাম।
তার দাবি
- "এই তো তোমার আমি! আয়না কখনো মিথ্যা বলে না। তুমি এতকাল এই আয়নাটার আর তোমার মাঝে মিথ্যা ভালো থাকার একটা পর্দা টেনে গেছ..."
- "চুপ, চুপ, চুপ কর। কেন আমার ভালো থাকাটায় নজর দিচ্ছ? যাও, যাও, দয়া করে যাও, আমি ভালো আছি।"
- "কতদিন আর পালাবে? পালাতে পালাতে আজ দেখ ঠিক সেইখানে পৌঁছে গেছ যেখান থেকে শুরু করেছিলে"
- "না, সব মিথ্যা, মিথ্যা মিথ্যা মিথ্যা অভিযোগ, আমি কেন পালাবো?.... কেন পালাবো?"
নিজের আওয়াজে কে হতাশ লাগল নিজের কানে, চুপিসারে নিজেকে প্রশ্ন করলাম, কই তুমি? তোমার আমি কে এরা প্রশ্ন করছে... জবাব দাও, তুমি কি সত্যিই পালাচ্ছো?
আজ যেন সব চুপচাপ,
এতকাল যারা ছায়ার মত আমার পাশে ছিল আজ আর শত আওয়াজেও তাদের সাড়া নেই।
শুনেছিলাম বটে আলোর দিকে গেলে নাকি ছায়া সঙ্গ ছেড়ে দেয়।
আমি আবার পালিয়ে এলাম।
সে আবার হাসল, ডাক দিয়ে বলল "পালাচ্ছো? আবার পালাচ্ছো? তুমি আজও সত্যিটা মানতে ভয় পাও...."
হ্যাঁ পালাচ্ছি, পালিয়ে এলাম সেই অজানা আমির বিদ্ধ করা প্রশ্ন থেকে।
কী ভেবে?
হয়তো, কারন এই অবান্তর কথার কোনো শেষ নেই। তর্ক করা মূর্খামি।
বা হয়ত অজানা কোনো ভয়ে,
কোনো মোহ ভঙ্গের ভয়ে। হয়তো।